এবার অভিজিৎকে নিয়ে যা বললেন তসলিমা

লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড়। অভিজিৎ এর খুনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনও। খুনের ২ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার রাতেই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন-

“Avijit Roy মারা গেছে? তাকে একটু আগে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে বাংলাদেশের ইসলামি সন্ত্রাসীরা? মানে বলতে চাইছো অভিজিৎ নেই? আমেরিকা থেকে দেশের বইমেলায় গিয়েছিল। নতুন বই বেরিয়েছিল ওর। আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো অভিজিৎ মৃত? না, আমি এ খবর বিশ্বাস করতে চাইছি না। কোথাও কোনও ভুল হচ্ছে না তো তোমাদের? অভিজিৎ, আমাদের মুক্তমনার অভিজিৎ, আর কথা বলবে না? অভিজিৎ আর ফেসবুকে লিখবে না? মুক্তমনায় ব্লগ লিখবে না? অসাধারণ সব বিজ্ঞানের বই আর সে লিখবে না? ট্যালেন্টেড ছেলেটির মাথায় কুপিয়েছে ওরা? আইসিসের রাজ্যও তো এত ভয়ংকর নয়! কী করে এরকম বীভৎস ঘটনা ঘটতে পারে আমাদের আঙিনায়? আমরা যারা বেঁচে আছি, তারা কি সত্যিই বেঁচে আছি?”

পরে এ ব্যাপারে আরও দু’টি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকের জন্য সে দুটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“যে তরুণ তরুণীরা আমাকে বাংলাদেশে ফেরত নেওয়ার জন্য আন্দোলন করছে, তাদের বলছি, তোমরা বন্ধ করে দাও সব মানববন্ধন, সব ব্যানার লিফলেট, সব বক্তৃতা। ওই দেশে আমাকে কোনওদিন আর ফিরতে বলো না। ওই দেশ আর দেশ নেই। ওই দেশ আমার নয়, ওই দেশ তোমাদের মতো মুক্তচিন্তার মানুষেরও নয়। ওই দেশ ধর্মান্ধ বর্বরদের। ওই দেশ হিংস্র খুনীদের। ওই দেশ নিয়ে আমি আর স্বপ্ন দেখি না। ওই দেশ কাল রাতে এক অসাধারণ প্রতিভাবান লেখক, মানববাদী চিন্তককে খুন করেছে। অভিজিৎ রায় নেই, হাজারো অভিজিৎ রায় জন্ম নেবে? না, অভিজিৎ রায় এ সমাজে খুব বেশি জন্মায় না। কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে দু’একজনই থাকে। ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে আলো হাতে দাঁড়িয়ে থাকে দু’একজনই। অভিজিৎ রায় হওয়া সহজ নয়।”

“মাঝে মাঝেই চমকে চমকে উঠছি। অনেকেই তাদের প্রোফাইলে অভিজিৎ রায়ের ছবি বসিয়েছে। আর ফেসবুক নাড়াচাড়া করতে গেলেই ছবিগুলোয় চোখ পড়ছে আমার। চমকে চমকে উঠছি। অবচেতনের ঘরে টোকা পড়ছে: অভিজিৎ তবে বেঁচে আছে। খুন হওয়ার ব্যাপারটা তবে দুঃস্বপ্ন! মিলি-মুহূর্তেই একটা কুৎসিত বাস্তব আমাকে জাগিয়ে দিয়ে বলছে, এ ছবি অভিজিতের বটে, তবে এরা কেউ অভিজিৎ নয়, অভিজিতের শুভাকাঙ্খী এরা। মাঝে মাঝেই চমকে চমকে উঠছি।”

আরও লিখেছেন, “ঘরে বা দরজায় কোনও শব্দ হলেই চমকে চমকে উঠছি। মনে হচ্ছে ওরা এলো বুঝি। ওদের ধারালো চাপাতি দিয়ে আমার মাথায় কোপ বসাতে বুঝি এতদিনে এলো। অভিজিৎকে টার্গেট করেছিল ওরা ২/৩ বছর আগে। আমাকে করেছে ২৩ বছর আগে। কী করে বেঁচে আছি এতদিন আমি! শুধু আমিই বোধহয় জানি কী করে আমি এতগুলো বছর বেঁচে আছি।

অভিজিতের ঠিক কেমন লাগছিল যখন আততায়ীগুলোকে দেখলো! আমার ঠিক কেমন লাগবে যখন আমি মুখোমুখি দাঁড়াবো আমার আততায়ীর! শত শত লোকের কেমন বোধ হয়েছিল যখন তারা জবাই হয়েছিল আইসিসের ছুরিতে! আমি নিশ্চয়ই একদিন জানবো কেমন সেই অনুভূতি। কিন্তু কাউকে সে কথা জানাতে পারবো না।”



মন্তব্য চালু নেই