এডিএইচডি : এটা বাজে আচরণ নয়, এটা মস্তিষ্কের সমস্যা

এডিএইচডি একটি রোগের নাম। এ সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের মস্তিষ্কের আকার অন্যদের চেয়ে সামান্য ছোট হয়। সম্প্রতি এক গবেষণায় বল হয়েছে, এ রোগ দেখা দিলে অনেকের আচার-আচরণ এমন হয়ে যায় যে মনে হয় লোকটি খারাপ ব্যবহার করছে। আসলে তা নয়।

এটা এডিএইচডি’র ফলাফল হতে পারে। এডিএইচডি বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার নিয়ে এই প্রথম বিস্তার বিশ্লেষণ হলো। দেখা গেছে, সুস্থ মানুষ এবং এডিএইচডি-তে আক্রান্তদের মস্তিষ্কের কাঠামোগত পার্থক্য সুস্পষ্ট।

নেদারল্যান্ডসের র‍্যাডবাউড ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষক মার্টিন হুগম্যান জানান, আমাদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে এডিএইচডি-তে আক্রান্তদের মস্তিষ্ক অন্যদের চেয়ে আকারে একটু ছোট হয়। আসলে শৈশবের জটিলতা বা বাবা-মায়ের অস্বাস্থ্যকর পরিচর্যার কারণে শিশুদের এমন ঘটে যেতে পারে। গবেষণায় ১৭১৩ জনকে বেছে নেওয়া হয়। এদের সবার এডিএইচডি রয়েছে। আরো ১৫২৯ জনকে নেওয়া হয় যাদের এ সমস্যা নেই। সাধারণত এ সমস্যা শিশুদেরই বেশি দেখা যায়। এদের মাঝে মনোযোগের অভাব দেখা যায়। এ ছাড়া চাল-চলনে অসঙ্গতি চোখে পড়ে। এসব আচরণ তাদের স্কুলে ও বাসায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে।

এমনকি বড় হওয়ার পরও এমন অবস্থা থেকে যায়। এডিএইচডি এর কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকের মতে, ছোটকালে বিভিন্ন সমস্যায় শিশুদের ভুল ওষুধ প্রয়োগ বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। ওজন কমে যাওয়া, লিভর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং আত্মহত্যার চিন্তাও আসে এ কারণে। মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান করেছেন বিজ্ঞানীরা। যাদের এডিএইচডি রয়েছে, তাদের মস্তিষ্কের ৭টি অঞ্চলের আকার স্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

সবমিলিয়ে তাদের এসব অঞ্চলের আকার সুস্থ মানুষের চেয়ে ছোট বলেই দেখা গেছে। হুগম্যান বলেন, মস্তিষ্কের আকারের পার্থক্য খুবই ছোট। তাই এ ঘাটতি বিচার করে সমস্যা ধরা খুব কঠিন কাজ। এ কারণে মানসিক অবস্থাও বিগড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ডিপ্রেসিভ ডিসওর্ডার দেখা দেয়। মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা কিনা মানুষের আবেগের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া এডিএইচডি রয়েছে এমন মস্তিষ্কের আকারের পার্থক্য সহজে ধরা পড়ে না। তবে শিশু বয়সে মস্তিষ্কের আকারের পার্থক্য বেশ নজরে আসে।

তাই শিশুদের মস্তিষ্কের কয়েকটি বিশেষ অংশের বিকাল পর্যবেক্ষণ করে এ রোগের লক্ষণ নির্ণয় করা সম্ভব। এডিএইচডি যাদের হয়েছে তারা বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করেন। কিন্তু এর ফলে স্বাভাবিক মস্তিষ্ক ও তাদের মস্তিষ্কের মধ্যে পার্থক্য তেমন কমে আসে না।

এসব ওষুধের মানসিক অবস্থাও তেমন ভালো পর্যায়ে আনা সম্ভব হয় না। এ গবেষণা নিয়ে কিছু বলতে গিয়ে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী জোনাথন পসনার বলেন, এডিএইচডি বিষয়ে এটা এক বড় ধরনের আবিষ্কার। তবে আরো বিস্তর গবেষণা দরকার এগিয়ে যেতে। শিশু বয়সে দেখা দিলেও বড় হওয়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের কি অবস্থা হয় তা জানতে আরো গবেষণা দরকার। সূত্র : এনডিটিভি



মন্তব্য চালু নেই