‘এটা শ্রদ্ধাঞ্জলি নাকি পদদলি!’

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তাজা রক্ত মিশে আছে এ দেশের প্রতিটি পরতে পরতে। শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে নির্মিত হয়েছে এ লাল-সবুজ। তাদের বিদেহী আত্মার প্রতি মস্তক অবনত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন; জারি থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে চোখে পড়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের নামে রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রচারণা, পেশিশক্তি প্রদর্শনে নানা ধরনের স্লোগান, আত্মসম্মান রক্ষার্থে আগমন, হৈ হুল্লোড়সহ এক প্রকারের উৎসব উদযাপনের আমেজ।

এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, ফুলের তোড়া; রাজনৈতিক স্লোগান; প্রচারণার উদ্দেশ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামাঙ্কিত ব্যানার নিয়ে শহীদবেদিতে আগমন অন্যতম।

পিছিয়ে নেই ব্যক্তি মালিকানা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও এলাকাভিত্তিক এক শ্রেণির ধান্ধাবাজ লোকজন।

এ কারণেই বুঝি শহীদ বেদিতে জুতা মাড়িয়ে হেঁটে যাওয়াতে তাদের কোনো বিকার নেই। বেদিতে ফুল দিতে গিয়ে তোড়া নিয়ে পোজ দিয়ে ছবি তোলেন তারা, ঠোঁটে ঝুলে থাকে আত্মতৃপ্তির হাসি। এ নিয়ে উপস্থিত অনেকের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দেখা গেছে।

সোমবার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় এমনটাই ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের চিত্র।

2015_12_14_18_33_42_2DKnEvkSd7nBFBOFrOWk01W9Uq5Kbi_original

কোনোভাইে শোকের আবহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শহীদের সম্মানে অর্পিত ফুলের উপর দিয়ে জুতা পায়ে সাধারণের চলাচলকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি শহীদ পরিবার। শহীদ পরিবারের আক্ষেপ, হতাশা, ক্ষোভ প্রকাশিত হলো একটিমাত্র বাক্যে – ‘এটা শ্রদ্ধাঞ্জলি নাকি পদদলি (পদদলন)’!

শহীদ পরিবারের দাবি, এই দিবসে জুতা পয়ে ফুলের উপর দিয়ে চললাচল নিয়ম করে বন্ধ করতে হবে। শোক দিবসের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে পালন করা উচিৎ। শোক দিবস উদযাপনের নয়; পালনের। শোক দিবসকে ‘শোক দিবসের’ মর্যাদায় পালন করা উচিৎ। এভাবে কী শ্রদ্ধাঞ্জলি হয়! এটাতো পদদলন!

কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুল দিতে না এলে স্কুলে তাদের অনুপস্থিত ধরা হবে। জরিমানার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ শুধু শহীদ বেদিতে ফুল দেয়ার জন্য আসতে তাদের বাধ্য করেছে।

শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে নেমে যাওয়ার সময় কিছু শিক্ষার্থীকে আনন্দ উল্লাস করতে দেখা যায়। যা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস না জানার কারণেই বলে মনে করেছেন উপস্থিত কয়েকজন।

সারা বছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধ। ১৪ ডিসেম্বর আসার মাসখানেক আগে পরিষ্কার ও রঙ করার কাজ শুরু হয়। শুধু একটি দিন কেন, শুধু ১৪ ডিসেম্বর তাদের স্মরণ করে কী লাভ? সারা বছর স্মৃতিসৗধের পবিত্রতা (মর্যাদা) রক্ষায় সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সবার।বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই