এখন কী করবে বিএনপি?

ভোটের দিন সিটি নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি এখন কী করবে তা নিয়ে দলের মধ্যে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি৷ আর আওয়ামী লীগ মনে করে, ভোট বর্জনের জন্যই বিএনপি নির্বাচনে গিয়েছিল৷

বিএনপি গত ৬ জানুয়ারি থেকে যে টানা অবরোধ আর হরতাল করে আসছিল, তা থেকে সরে আসে গত মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার নির্বাচনের দিন দুপুরের মধ্যেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা এখন নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, যে বিএনপি তাহলে আন্দোলনেই ফিরে যাচ্ছে?

বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান বলেন, ‘‘বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে গিয়েছিল এবং সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারো প্রমাণ করেছে যে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে না৷ সংবাদ মাধ্যমে যেসব চিত্র এবং খবর প্রকাশ হয়েছে, তাতে বোঝা যায় যে আওয়ামী লীগ ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট ও ভোট ছিনতাইয়ে কতটা নির্লজ্জ৷ তাই এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না৷”

তাহলে এখন বিএনপি কী করবে, আবার কী আন্দোলন শুরু করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ে এই সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় করা ছাড়া কোন উপায় নেই৷ তবে বিএনপি জানুয়ারি মাস থেকে একটা লম্বা আন্দোলন করেছে৷ তাই হঠাৎ করেই নতুন কোন আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার আগে এবার ভাল ভাবে চিন্তাভাবনা করা হবে৷ জোটের শরীকদের সঙ্গে কথা বলা হবে৷ কথা বলা হবে সুশীল সমাজের সঙ্গেও৷”

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি সাধারণ মানুষ এবং বিদেশি বন্ধুদের প্রতিক্রিয়াও দেখতে চায়৷ দেখতে চায় তারা এই নির্বাচনকে কীভাবে মূল্যায়ণ করেন৷”

তিনি আরও জানান, ‘‘তাই নতুন কর্মসূচি কী হবে, বিএনপি কীভাবে এগোবে – তা জানতে একটু সময় লাগবে৷ ম্যাডাম খালেদা জিয়া কয়েকদিনের মধ্যেই এসব বিষয় নিয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বসবেন৷”

অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন খোকন বলেন, ‘‘এখানে দু’টি বিষয় রয়েছে৷ একটি হল সিটি নির্বাচন এবং আরেকটি হলো বিএনপির চলমান আন্দোলন৷ বিএনপি ভোটের দিন নির্বাচন বর্জন করেছে৷ এটা করা ছাড়া উপায় ছিল না৷ কারণ ভোট শুরুর পরপরই কেন্দ্রগুলো পুলিশ এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সহায়তায় দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগের নেতা-কর্মীরা৷ এই নির্বাচন এবং বিএনপি পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে এবার ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবে৷ আর এজন্য একটু সময়ের প্রয়োজন হবে৷”

এরই মধ্যে তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের যে ফল ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে তিন সিটিতেই মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন৷ আর ভোটের ফলাফলে দেখা যায় বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হারলেও ভাল ভোট পেয়েছেন৷ তাই বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কারচুপি হলে এত ভোট পেল কীভাবে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীরা৷”

প্রধানমন্ত্রী তার নিজ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে বিএনপি শাসনামলে মাগুরাসহ কয়েকটি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আগের নির্বাচনের চেয়ে এবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে৷”

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘সিটি নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসী তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এ জন্য নিজেরাই নির্বাচন বর্জন করেছে নির্বাচনের দিন৷”

আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপি নেতাদের কথোপকথনের যে টেলিফোন রেকর্ড প্রকাশ পেয়েছে সংবাদ মাধ্যমে, তাতে প্রমাণিত হয় নির্বাচনের দিন মঙ্গলবারে আগেই বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল৷ আর নির্বাচনের দিন তা বাস্তবায়ন করেছে৷ তারা আসলে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল একটা ইস্যু সৃষ্টির জন্য৷”

এদিকে সিটি নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার জাতিসংঘ সরব হয়েছে৷ নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মহাসচিব বান কি মুনের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, ‘‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নির্বাচন বয়কটের বিষয়টি জাতিসংঘ মহাসচিব অবগত৷ তাই বিএনপির সকল অভিযোগ দ্রুত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বান কি মুন৷”
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র দখল এবং ভোট জালিয়াতির নতুন নতুন তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে৷ আর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমও বাংলাদেশের এই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে৷-ডিডব্লিউ



মন্তব্য চালু নেই