এখনো অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

রাজধানীর ধানমন্ডির স্কলার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে পঞ্চম শ্রেণিতে এ বছর ভর্তি হয়েছে পু্ষ্পিতা (ছদ্মনাম)। ভর্তির সময় তাকে দিতে হয়েছে ২৬ হাজার টাকা। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার। এর সঙ্গে এক মাসের বেতন আছে তিন হাজার টাকা, যা গত বছর ছিল ১৫০০ টাকা।

পুষ্পিতার মা সুস্মিতা সেন বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সতর্ক করার পরও তা মানছে না তার মেয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নির্দেশনার পরও বর্ধিত হারেই টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

স্কলার্স স্কুলের মতো রাজধানীর অধিকাংশ স্কুলই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করছে। অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ এবং বাড়তি টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

তবে গত ১৭ জানুয়ারি বর্ধিত ফি না নেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর শুধু রাজধানীর উইলস লিটলস স্কুল বর্ধিত ফি স্থগিত করেছে। তারা অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে না। যাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে সেটি পরবর্তী সময়ে সমন্বয় করা হবে বলে অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে এসএমএস করে জানিয়ে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাসিমা বেগম বলেন, “আমি অতিরিক্ত দিয়েছি ১ হাজার ১৫০ টাকা। আমার মুঠোফোনে এসএসএম করে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরবর্তী বেতনের সঙ্গে এটি সমন্বয় করে নেয়া হবে। আর যারা নতুন করে ভর্তি হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে ওই অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে না।”

কিছু প্রতিষ্ঠান আবার কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। তারা বর্ধিত ফি নিচ্ছে না, আবার ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসবও সরকারি নির্দেশনা না মানার শামিল। কারণ, বর্ধিত ফি না নেয়া ছাড়াও ভর্তি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার কথা বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়।

আজ রবিবার ভিকারুন নিসা নূন স্কুলে গিয়ে জানা গেছে, তারা ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এই তালিকায় রয়েছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলসহ স্বনামধন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে স্কুল ‍দুটির কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে টাকা নেয়ার হার ঠিক করার পর থেকে তারা ভর্তি কার্যক্রম চালাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ১৭ জানুয়ারি জারি করা এ-সংক্রান্ত সরকারি আদেশের নির্দেশনায় বর্ধিত বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা জারির পর কিছু স্কুল বাড়তি ফি নেয়া স্থগিত করলেও অনেক স্কুল এখনো বাড়তি বেতন ফি নেয়া অব্যাহত রেখেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত উদয়ন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছেলেকে ভর্তি করাতে এসেছিলেন মনিরুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত বছর দ্বিতীয় শ্রেণিতে মাসিক বেতন ছিল ৮০০ টাকা। এবার সেটা হয়েছে ১২০০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য ফি প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি টাকা জমা দেয়ার সময় কাউন্টারে অতিরিক্ত ফি কেন নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে উত্তর আসে, ‘এটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেন’।”

মনিরুল ইসলাম জানান, স্কুলের শিক্ষকরা ছাত্রদের বলছেন, সরকার যে ফি নির্ধারণ করবেন পরবর্তী বেতনের সঙ্গে তা সমন্বয় করা হবে। অতীত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একবার স্কুল ফান্ডে চলে গেলে সেই টাকা আর ফেরত বা সমন্বয় হবে না।

একই অভিযোগ পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহানের বাবা সিরাজুল ইসলামের। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়বদ্ধ। তারা যেকোনো সময় অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে পারে। কিন্তু আমরা ইচ্ছা করলেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে পারি না।”

শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নির্দেশনা না মানার ক্ষেত্রে সব সময় এসব প্রতিষ্ঠান এগিয়ে থাকে। নামকরা ও বিভিন্ন বাহিনী পরিচালিত স্কুলগুলো কখনো কোনো নির্দেশনা মানতে চায় না। তাদের বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে। একাধিকবার সতর্ক করার পরও কোনো কাজ হয়নি। মাউশিকে তারা কোনো পাত্তা দিতে চায় না। তবে কোন কোন প্রতিষ্ঠান বর্ধিত ফি নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছে, তা তদন্ত হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে তাদের নাম জমা দেয়া হবে।

মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালায় বলা আছে, ঢাকাসহ দেশের সব মেট্রোপলিটন এলাকায় আধা-এমপিওভুক্ত নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ, উন্নয়ন ফিসহ সব মিলিয়ে বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নেয়া যাবে। আর সম্পূর্ণ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা নেয়া যাবে। কিন্তু সরকারের এই নীতিমালা মানছে না কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন বলেন, “কেউ যদি নির্দেশনা না মানে সে বিষয়ে কী করা যায় তা ঠিক করে রেখেছে সরকার।”

এক প্রশ্নের জবাবে ফাহিমা খাতুন বলেন, “আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। কারা মানছে, কারা মানছে না সবকিছুই তদন্ত করা হচ্ছে। দোষীদের এবার রেহাই দেয়া হবে না। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে সরকার।”ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই