এক যুগের পরিত্যক্ত সার বিক্রি হবে বাজারে

হিলি স্থলবন্দরের পানামা পোর্টের ভেতরে ও সিপি রোডের কাস্টমস গুদামের সামনে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা ভারতীয় নিন্মমানের সার বরাদ্দের নামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে উদ্ধার হওয়া এ সার এক যুগেরও বেশি সময় খোলা আকাশের নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় এবং ভেজাল ও নিম্নমানের হওয়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেগুলো ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়ার পরও নওগাঁ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে বরাদ্দ দেওয়ার মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। এসব সার জমিতে ব্যবহারের ফলে ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা।

নওগাঁ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ইতিমধ্যে বরাদ্দ পাওয়া পানামা পোর্টের সার পুরানো বস্তার মোড়ক পাল্টিয়ে নতুনভাবে প্যাকেট করে কৃষকদের কাছে বিক্রির উদ্দেশে নওগাঁসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে খোলা বাজারে এসব সার বিক্রি শুরু হয়েছে।

বাংলাহিলি কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের দিকে দিনাজপুর ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাকারবারিদল অবৈধভাবে ভারত থেকে সার আনার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করে। যা সিজার লিস্টের মাধ্যমে হিলি কাস্টমসে জমা দেয়। সেই ২০০৩ সাল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ১২০০ টন ভারতীয় এমওপি (পটাশ), এসএসপি, টিএসপি (ফসফেট) ও ডিএপি সার। আবাদি জমির ক্ষতির আশঙ্কায় নিম্নমানের এসব সার অবিক্রিত অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে ছিল।

সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২০০৯ সালে হিলিস্থলবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ উদ্ধার হওয়া সার নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিলাম দেওয়ার প্রক্রিয়া বাতিল হয়। নিম্নমানের হওয়ায় কৃষকদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে এ সার ধ্বংস করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং কী প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করা হবে- তার একটি চিত্রও তুলে ধরা হয় ওই নির্দেশনায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০১০ সালে ২৩ আগস্ট সার ধ্বংস করার জন্য ১ কোটি ৯৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৮৮ টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে তৎকালীন রাজশাহী কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনার বরাবর হিলিস্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন থেকে পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ায় অর্থাভাবে সার ধ্বংস করা সম্ভব না হওয়ায় তখন থেকে খোলা আকাশের নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।

এরপর গত ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট মজুদ সারের ২৯টি নমুনা পাঠানো হয় রাজশাহীর শ্যামপুরে মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণাগারে। গবেষণাগারের নমুনা প্রতিবেদনে ১১টি ভালোমানের এবং বাকি ১৮টি ভেজাল ও নিম্নমানের বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি ছিল এমওপি (পটাশ) সারের।

এ দিকে সারের পরীক্ষায় অনিয়মের কথা তুলে ধরে ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন রংপুরের এক ব্যবসায়ী। অভিযোগ করা হয়, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল সার কেনার জন্য শুল্কগুদাম কর্তৃপক্ষ ও মৃত্তিকা পরীক্ষা কার্যালয়কে প্রভাবিত করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। অভিযোগে আশঙ্কা করা হয়- এ সার বাজারজাত করা হলে কৃষকেরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাম্মাৎ শামীমা নাজনীন বলেন, ‘হিলি শুল্কগুদামের যে সার বিক্রি করা হচ্ছে, সেগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে বিক্রি করছে ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সার ওই ব্যবসায়ী নওগাঁয় নিয়ে যাচ্ছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। সারের বিষয়টি পুরোপুরি কাস্টমসের। আমাদের ডিলারদের মাধ্যমে সেসব সার বিক্রি হচ্ছে না এবং ওই সার হাকিমপুর উপজেলা এলাকায় বিক্রি ও ব্যবহার করা হবে না। আমরা কৃষকদের সবসময় সার সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলি- তারা যেন মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেজাল সার কেনা ও ব্যবহার না করেন। এ ব্যাপারে আমরা মনিটরিং করে থাকি।’

হিলিস্থলবন্দর শুল্কস্টেশনের শুল্কগুদাম কর্মকর্তা নীল রতন বলেন, ‘নওগাঁ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম কৃষি মন্ত্রণালয় ও দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে শুধু এমওপি (পটাশ) সার গুদাম থেকে নিয়ে যাচ্ছেন।’

হিলিস্থলবন্দর শুল্কস্টেশনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ তাহের উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘হিলিস্থলবন্দরের ভেতরে জমা থাকা বিভিন্ন ধরনের সারের গুণাগত মান ভালো আছে মর্মে আমরা একজন ডিলারের কাছে বরাদ্দের মাধ্যমে বিক্রি করেছি।’

এ দিকে হিলিস্থলবন্দর থেকে সার উত্তোলনকারী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে সার উত্তোলন কাজে নিয়োজিত তার প্রতিনিধি জয়নাল আবেদীন জানান, এ সার উত্তোলন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই