এক ছবিতে রিয়াজ-ফেরদৌস ও শাকিল খান

বাংলা চলচ্চিত্রে প্রায় একই সময়ে আগমন তিন চিত্রনায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস ও শাকিল খানের। এক-দুই বছরের ব্যবধানে তারা চলচ্চিত্রে এসেছেন। ৯৬’ সালে নন্দিত নায়ক সালমান শাহের মৃত্যু হলে এই তিন নায়কের উপর ভর করে সালমান হারানোর শোক কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেছিলো তৎকালীন ছবির প্রযোজক-নির্মাতা থেকে শুরু করে দর্শকরাও।

নতুন করে এই তিন নায়ককে আলোচনায় নিয়ে এসেছেন ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ খ্যাত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস। তিনি আজ রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুকে একটি ছবি আপলোড করেছেন। যেখানে একসঙ্গে দেখা গেছে তরুণ ফেরদৌস, শাকিল খান ও রিয়াজকে। ছবিটির ক্যাপশনে দেবাশীষ লিখেছেন, ‘এক সময় খুব ইচ্ছে ছিলো এই তিনজনকে নিয়ে আমার বাবা দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত সুপারহিট চলচ্চিত্র ‘জিঞ্জির’র রিমেক করবার। সুমন-রাজন-মোহন, বন্ধু আমরা তিনজন।’

ছবিটি দেখে নস্টালজিয়ায় ভুগছেন এই তিন নায়কের সেই সময়কার ভক্ত ও দর্শকেরা। অনেকে আক্ষেপও করেছেন ঢাকাই চলচ্চিত্র এই তিন নায়কের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারছে না বলে। কেউ কেউ দেবাশীষ বিশ্বাসকে পরামর্শ দিয়েছেন এই তিনজনকে নিয়েই যেন ‘জিঞ্জির’ ছবিটি রিমেক করেন। অন্যদিকে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ দেবাশীষ বিশ্বাসের কাজে জানতে চেয়েছেন এই সময়ের কাকে কাকে নিয়ে ‘জিঞ্জির’ ছবিটি করা যায়। দেবাশীষ উত্তরে লিখেছেন- বাপ্পী, সাইমন ও আরিফিন শুভ’র নাম।

রিয়াজ-ফেরদৌস-শাকিল; তিন নায়কের অনেক মিল। ব্যক্তিজীবনে তাদের রয়েছে দারুণ বন্ধুত্ব। নব্বই দশকের শেষ দিকে তিনজনই হাজির হয়েছিলেন রোমান্টিক ছবির হার্টথ্রুব হিরো হয়ে। তিনজনেরই জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশ ছোঁয়া। তিনজনই সাফল্য পেয়েছেন সালমানের জুটির নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে। তবে একটা সময় শাবনূরের সঙ্গে রিয়াজের জুটির আলাদা দর্শক তৈরি হয়ে যায়। জুটি হিসেবে তাদের জনপ্রিয়তা তখন ছিলো তুঙ্গে।

অন্যদিকে শাকিল খান জুটি বেঁধেছিলেন পপির সঙ্গে। আর ফেরদৌস অভিনয় করেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় সব নায়িকাদের সঙ্গে। তবে তিনি মৌসুমী ও শাবনূরকে নিয়েও বেশ কিছু সুপারহিট চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন।

তিন নায়ককে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিলো ‘দুই নয়নের আলো’ ছবিতে। সেখানেও তিনজনের নায়িকা তাদের প্রিয় বান্ধবী ও সহকর্মী শাবনূর। সেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন চিত্রনির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। যদিও সেখানে রিয়াজ হাজির হয়েছিলেন অতিথি শিল্পী হিসেবে।

তবে সমসাময়িক সুপারস্টার দুই নায়ক জুটি হয়ে এক ছবিতে অভিনয় করে সাফল্য পাবার যে রেকর্ড ঢাকাই ছবিতে রয়েছে তার মধ্যে এই তিন নায়কের নাম শীর্ষেই থাকবে। আলাদা আলাদা করে রিয়াজ-ফেরদৌস, রিয়াজ-শাকিল ও শাকিল-ফেরদৌস জুটি বেশ কিছু সফল ছবি উপহার দিয়েছে। তারমধ্যে ‘নারীর মন’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘বলো না ভালোবাসি’, ‘এ মন চায় যে’, ‘কুসুম কুসুম প্রেম’ ইত্যাদি ছবিগুলোর নাম উল্লেখযোগ্য।

এদর মধ্যে রিয়াজের আগমন ঘটে ১৯৯৫ সালে ‘বাংলার নায়ক’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তবে ১৯৯৭ সালে মহাম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে রিয়াজ বাজিমাত করে দেন। এই ছবিটি তাকে তরুণ-তরুণীদের হার্টথ্রুবে পরিণত করে। ছবিটিতে এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া ‘পড়ে না চোখের পলক’ গানটি তখন সারাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে এই গানের শিরোনাম দিয়ে একটি ছবি নির্মিত হয়। সেখানে অভিনয় করেছিলেন হালের সেরা নায়ক শাকিব খান। একই বছরে রিয়াজ ‘মন মানে না’ ছবিতে শাবনূরের সঙ্গে এবং পূর্ণিমার সঙ্গে ‘এ জীবন তোমার আমার’ ছবিতে জুটি বাঁধেন এবং সাফল্য পান।

রিয়াজের আগমনের এক বছর পরেই চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন ফেরদৌস। ছটকু আহমেদের ছবি ‘বুকের ভেতর আগুন’ ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। এই ছবির নায়ক ছিলেন সালমান শাহ। জনপ্রিয় এই চিত্রনায়কের হঠাৎ মৃত্যু হলে ছবির অর্ধেক অংশ থেকে প্রবেশ করেন ফেরদৌস। প্রথম ছবিতেই তিনি বাজিমাত করেছিলেন। তবে ফেরদৌসের জনপ্রিয়তার শুরু ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত যৌথ প্রযোজনার ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিতে।

অন্যদিকে শাকিল খানের আগমন ঘটে ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ ছবির মাধ্যমে। তবে তিনি এই ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন ’৯৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে। প্রথম ছবিতেই তিনি কাজ করেছিলেন পপির বিপরীতে। পরবর্তীতে এই জুটি ঢাকাই চলচ্চিত্রে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

বর্তমানে ফেরদৌস অনিয়মিতভাবে চলচ্চিত্রে কাজ করলেও একেবারেই দূরে সরে গিয়েছেন শাকিল খান। আর রিয়াজ নিয়মিত হয়েছেন ছোট পর্দায়। তাকে সর্বশেষ চলচ্চিত্রে দেখা গিয়েছিলো চলতি বছরের শুরুর দিকে মুক্তি পাওয়া ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘সুইটহার্ট’ ছবিতে। এখানে তিনি লাক্স তারকা বিদ্যা সিনহা সাহা মিমের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। তবে তিন নায়কের প্রতি এখনো চলচ্চিত্র প্রেমীদের আগ্রহ ও ভালোবাসা যে আগের মতোই রয়েছে সেটি নতুন করে অনুধাবন করালেন দেবাশীষ বিশ্বাস।

প্রসঙ্গত, শাকিল খানকে নিয়ে কাজ করার সুযোগ না হলেও রিয়াজ ও ফেরদৌসকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন দেবাশীষ বিশ্বাস। তারমধ্যে উল্লেখ করা যায় ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ ছবিটির নাম। ২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটিতে রিয়াজ-শাবনূর জুটির অনবদ্য অভিনয় আজো আন্দোলিত করে দর্শকদের। আর রিয়াজ ও ফেরদৌসকে একসঙ্গে নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছিলেন ‘শুভ বিবাহ’ ছবিটি। এখানে দুই নায়ক ছিলেন অপু বিশ্বাস ও নিপুনের বিপরীতে।



মন্তব্য চালু নেই