একাকিত্ব’ বাড়াবে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি

সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ‘একাকিত্ব’ এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করা ব্যক্তিদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, মানসিক চাপ রয়েছে এমন চাকরিতে কর্মরত ব্যক্তিরা যে ধরনের দুশ্চিন্তা ও চাপ অনুভব করেন, একাকিত্বে ভোগা ব্যক্তিরাও সেই একই ধরনের সমস্যার শিকার হন।

যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তারা এ সংক্রান্ত মোট ২৩টি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করেন। আর এ কাজের জন্য তারা বেছে নেন ১ লাখ ৮০ হাজার পূর্ণবয়স্ক লোককে। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৬২৮ জন করনারি হৃদরোগে ভুগছিলেন এবং ৩ হাজার দুইজন ছিলেন স্ট্রোকে আক্রান্ত।

গবেষণায় সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায় যে, এই মানুষগুলোর ভেতর ২৯ শতাংশ করনারি হৃদরোগ ও ৩২ শতাংশ স্ট্রোক আক্রান্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে- তাদের একাকিত্ব ও সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা।

এক লেখক জার্নাল হার্টে তার রিপোর্টের তথ্যসমূহ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, আমরা সামাজিক সম্পর্ক থেকে দূরে বসবাস করা ব্যক্তিদের ভেতরে এবং কার্ডিওভাস্কুলার রোগাক্রান্তদের ভেতর এই গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘রিস্ক ফ্যাক্টর‘ নিরূপণে সক্ষম হয়েছি। দুশ্চিন্তা ও কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের চাপ এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে, করনারি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমানোর জন্য চিকিৎসাক্ষেত্রে একাকিত্ব ও সামাজিক যোগাযোগ হীনতাকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আর এর জন্য সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখতে পারে চিকিৎসকরা, রোগীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে।’

ইতোপূর্বের বিভিন্ন গবেষণায় ‘একাকিত্ব’ ও সামাজিকভাবে একা থাকার সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর যোগসূত্র প্রমাণ করা হয়েছিল। কিন্তু করনারি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের সঙ্গে সম্পর্ক তেমনভাবে প্রমাণিত ছিল না।

মূল গবেষণার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্য আরো একটি সম্পাদকীয়তে ইউটাহ এর ব্রিংহ্যাম ইয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জুলিয়ান হল্ট লুনস্তাদ এবং ড. টিমথি স্মিথ জানান, এই বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে স্বাস্থ্য কর্মীরা।

গবেষকগণ এ বিষয়ে আরও গভীরে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন যে, টেকনোলজি মানুষকে সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে কি ভূমিকা রাখতে পারে তার ওপরও আগামীতে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে দুইরকম সম্ভাবনা আছে। এক, টেকনোলজি মানুষকে সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। দুই, টেকনোলজির ব্যবহার মানুষকে ঠেলে দিতে পারে আরও একাকিত্বের দিকে। তারা আরও বলেন যে, গবেষণার মাধ্যমে খতিয়ে দেখা দরকার, টেকনোলজির দ্রুত পরিবর্তন কি মানুষের মুখোমুখি দেখা-সাক্ষাতের মাত্রা কমিয়ে ফেলছে? টেকনোলজির সহজলভ্যতা কি মানুষের ভেতর খুব দ্রুত সম্পর্ক তৈরিতে সাহায্য করছে? টেকনোলজি ব্যবহার করে যে সম্পর্কগুলো তৈরি হচ্ছে সেগুলো কি একই রকম স্বাভাবিক সম্পর্কগুলোর নিয়ম মেনে চলছে?

সবশেষে তারা বলেন, একাকিত্ব বর্তমান সময়ে এমন এক সমস্যা যাকে আসলে আর অবহেলা করার উপায় নেই এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই