একশো পেরোলো ‘রবিবারের চলচ্চিত্র’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রবীন্দ্র কলাভবন। ১২৩ নং কক্ষ। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ। আবছা আবছা আলো। একটা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজমান। প্রজেক্টর অন। ঘড়ির কাঁটাতে ঠিক আড়াইটা। সিনেমা শুরু। এটাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরে (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রতি রোববার ‘রবিবারের চলচ্চিত্র’ শিরোনামের সিনেমা প্রদর্শনীর নিয়মিত দৃশ্য। বিভাগের উদ্যোগে প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ পর্যন্ত ১২০টি সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে।

বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী প্রদীপ দাস বলেন, যদি ক্যাম্পাস খোলা থাকে এবং কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃস্টি না হয় তাহলে এই প্রদর্শনী কখনো আড়াইটার এক সেকেন্ডও দেরী হয়নি। এমনকি কখনো কখনো একজন দর্শক নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে।

প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে পথের পাঁচালী, টুয়েল্ভ ইয়ারস অ্যা স্লেভ, উত্তরের সুর, টু উইমেন, হায়দার, এপোক্যালিপ্টো, দ্য ব্যাটলশিপ পটেমকিন, ঘেটুপুত্র কমলা, জাতিস্মর, গান্ধী’র মতো পুরস্কার বিজয়ী সব চলচ্চিত্র। সর্বশেষ ১২০ তম চলচ্চিত্র নায়িকা সংবাদ রবিবারে (৯ আগস্ট) প্রদর্শিত হয়েছে।

বিভাগসূত্রে জানা গেছে, চলচ্চিত্রের শততম প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের তরুণ পরিচালকদের ছয়টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এগুলো হলো মাজহারুল রাজুর প্রস্তুতকারক, মেহরাব হোসেনের রঙিন জুতা, হাবিবুর রহমানের আইয়াও, সালমান ফারসীর আগুনরথ এবং মাহফুজা মৌ, আখতারুজ্জামান ও সাইফুন নাহারের জাস্ট অ্যানাদার ডে।

বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বিউটি মণ্ডল জানান, আমি প্রতিদিন এখানে সিনেমা দেখি। সিনেমা শুরু হওয়ার আগে আমাদেরকে এই সিনেমার লিখিত একটা সারকথা দেওয়া হয়। লিখিত কপিতে পরিচালকেরও বণর্না থাকে। এটা আমাদেরকে সিনেমাটি সর্ম্পকে চিন্তার পরিধি বাড়াতে ও বুঝতে সাহায্য করে।

নিয়মিত বিভাগের চলচ্চিত্র দেখেন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তাওছিয়া তাজমীম বলেন, ‘এটা খুবই ভালো একটা উদ্যোগ। এর ফলে আমরা দেশে-বিদেশের অনেক ভালো ভালো চলচ্চিত্র দেখতে পারছি। এখানে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে বড়ো পর্দায় চলচ্চিত্র দেখানো হয় যা ল্যাপটপে একা একা দেখার চেয়ে চলচ্চিত্রটিকে বুঝতে এবং উপভোগ করতে বেশি সহয়ক হয়।’ মাস্টার্সের আরেক শিক্ষার্থী তৌফিক আহমেদ বলেন,‘ আর এটা একটা নিয়মিত বিষয় তাই ছাত্র-ছাত্রীদের চলচ্চিত্র দেখার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সাহায্য করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি এই পর্যন্ত প্রায় একশো চলচ্চিত্র এখানে দেখেছি। বিভাগ থেকে এই উদ্যোগটি না নিলে হয়তো এত ভালো সিনেমাগুলো দেখা হতো না।’

বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অন্যান্য বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত চলচ্চিত্র দেখতে আসেন। এমনি একজন ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হিরু মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে মনে করি অনেকগুলো বই পড়ে যতটুকু বোঝা যায় না, সেই বিষয়ের ওপর সিনেমা দেখে তা সহজেই বোঝা যায়। তিনি এ সময় গান্ধী চলচ্চিত্রটিকে

উদাহরণস্বরুপ ব্যাখ্যা করে। তিনি আরো বলেন, চলচ্চিত্র এমন একটি মাধ্যম যেখানে জ্ঞানের প্রায় সব স্তরেই স্বল্পবিস্তর আলোচনা করা হয়ে থাকে।

অন্য সব বিভাগ থেকে ব্যতিক্রমী চিন্তায় বিভাগে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী সম্পর্কে বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, আসলে আমাদের বিভাগে চলচ্চিত্রের ওপরে কোর্স পড়ানো হয়। সেটার কারণেই মূলত ডিপার্টমেন্টে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করা হয়। তাছাড়া গণমাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের ভ‚মিকা অপরিসীম। অন্যভাবে বললে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি প্রায় ধ্বংসের পথে। তাই আমি মনে করি আমরা এই ব্যবস্থাটি করে কিছু সিনেমার দর্শক তৈরি করতে পেরেছি।

চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত এই চলচ্চিত্র বিভাগ থেকে দেখানো হলেও এই বিষয়টি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা ম্যাজিক লণ্ঠন পত্রিকার সম্পাদক কাজী মামুন হায়দার এটি তত্ত্বাবধায়ন করে হিসেবে থাকেন।



মন্তব্য চালু নেই