একটি ম্যাচ না খেলেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন !

সুনীল ওয়ালসন নামটি কয়জন জানেন? আপনারা কি জানেন এই সুনীল ওয়ালসন একজন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন? না, না, অন্য কোনো খেলার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নন, তিনি ক্রিকেটের একজন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন একটি দলের অন্যতম সদস্য। কিন্তু এই সুনীল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েও এমন অদ্ভুত একটি রেকর্ডের মালিক, যা আর কারোরই নেই। ক্রিকেট ইতিহাসের আর কোনো খেলোয়াড়ই বিশ্বকাপ আসরের পুরোটা সাজঘরে কাটিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার উৎসবে মাতেননি। এই রেকর্ড তাঁকে গর্বিত করে কি না, তা নিয়ে বোধ হয় বিভ্রান্ত খোদ সুনীলই।

১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন সুনীল ওয়ালসন। অন্ধ্রপ্রদেশের এই বাঁ হাতি ফাস্ট মিডিয়াম বোলার তিরাশির বিশ্বকাপে একটি ম্যাচেও মাঠে নামার সুযোগ পাননি। অথচ, নিজ গুণেই সেবার ভারতের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কপিল দেবের পাশাপাশি বলবিন্দর সিং সান্ধু ও রজার বিনিকে দিয়ে সাজানো পেস আক্রমণের কম্বিনেশনই সম্ভবত তাঁকে ম্যাচের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছিল। অপেক্ষার প্রহর গুণে সাজঘরে বসেই পুরো বিশ্বকাপ কাটিয়ে দেন ওয়ালসন। সেই অপেক্ষার প্রহর আর কখনোই শেষের মুখ দেখেনি। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্বকাপের পর আর কোনো দিনই ভারতীয় দলে ডাক পাননি এই ওয়ালসন।
১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে ক্রিকেটকে বিদায় জানান ওয়ালসন। ১৯৭৭-৮৮ মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত ভালসন ৭৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে মালিক হয়েছিলেন ২১২টি উইকেটের। ঘরোয়া প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে কখনোই ওভারপ্রতি তিন রানের বেশি না দেওয়া এই ওয়ালসনকে ভারতেরই অন্যতম সেরা ফাস্ট মিডিয়াম বোলারের মর্যাদা দেওয়া হয়। অথচ ওয়ালসন বিশ্বকাপের পর আর কখনোই ভারতীয় দলে সুযোগ পাননি।

আজ এত বছর পরও ব্যাপারটি নিয়ে কোনো খেদ নেই ৫৬ বছর বয়সী ওয়ালসনের। বর্তমানে ক্রিকেটের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন ওয়ালসন। জিএমআর গ্রুপ নামের একটি ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তিনি। এই জিএমআর গ্রুপই আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজি দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের কর্ণধার। বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ে ক্রিকেট উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ওয়ালসনের কাছে একটি ম্যাচ না খেললেও তিরাশির বিশ্বকাপের অনুভূতি একেবারেই অন্য রকম, ‘আমার কোনো দুঃখ নেই। একটি ম্যাচও খেলতে পারিনি, এ নিয়ে আমার মনে কোনো কষ্টও নেই। আমি গর্বিত যে ভারতের বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলাম আমি।’

তিরাশির বিশ্বকাপের স্মৃতি হাতড়ে ওয়ালসন বলেন, ‘বিশ্বকাপের আগে আমি ইংল্যান্ডের ডারহামে ক্লাব ক্রিকেটে খেলছিলাম। হঠাৎ একদিন কীর্তি আজাদ (সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার) আমাকে ফোন করে জানায় যে আমি ভারতের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছি। সেদিনের অনুভূতি বলে বোঝানোর মতো নয়।’

সেবারের বিশ্বকাপ ওয়ালসনের হৃদয়ে অন্য রকম ব্যঞ্জনারই জন্ম দেয়। তিনি বলে যান, ‘সেবার কেউ এক মুহূর্তের জন্য ভাবেনি যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের একটি ওয়ানডে ম্যাচে ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটে আমাদের সাফল্য বলতে ছিল ওই জয়টিই। এমনকি জিম্বাবুয়ের তৎকালীন অধিনায়ক আলী শাহও আশাবাদী ছিল গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে তারা আমাদের হারাবে। সব স্মৃতিই মনে হয় এই সেদিনের। কী অসাধারণ মুহূর্ত। মাঠের বাইরে বসেও প্রতিটি মুহূর্ত আমি উপভোগ করেছিলাম।’



মন্তব্য চালু নেই