একজন ‘নেকড়ে মানবের’ টিকে থাকার লড়াই

কয়েক দশক ধরে সার্কাস দলে খেলা দেখিয়ে আসছেন। তার ব্যতিক্রমী মুখমণ্ডলের কারণে সার্কাসে নিয়মিত মুখ হলেও এ নিয়ে কষ্টের অন্ত নেই ৪১ বছরের জেসাস অ্যাচেভেসের।

ম্যাক্সিকান এই বাসিন্দার বৈশিষ্ট হচ্ছে মুখভর্তি লেঅম। যে কারণে তাকে ‘নেকড়ে মানব’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তিনি একা নন। তার পরিবারের সাত জন পুরুষ ও ছয় জন নারী মোট পাঁচ সদস্য এই লোম সমস্যায় ভুগছেন। এ নিয়ে কষ্টের অন্ত নেই জেসাসের। ‘ঈশ্বর আমাকে কেন এভাবে তৈরি করলেন, বলুন তো। আমি কেন অন্য মানুষদের মত হলাম না।’

সার্কাসে খেলা দেখানোর সময় সে নিজের দুই হাতের ওপর ভর করে হেঁটে বেড়ান যা দেখে দর্শকরা মজা পায়। এই অভ্যাস তিনি রপ্ত করেছেন শৈশব থেকেই। স্কুলে সতীর্থরা তার মুখভর্তি লোম নিয়ে হাসাহাসি করত। নানা রকম অপমানও করত। শেষে স্কুল ছেড়ে দিলেন। আর ওমুখো হননি। পরে সার্কাসে যোগ দিলেন। তার দুই চাচাত ভাই ইতিমধ্যে সার্কাসে যোগ দিয়ে ভালোই কামাচ্ছিল-দিনে প্রায় আট ডলার। তাদের দেখাদেখি সাকার্সে নাম লেখালেন জেসাসও।

মানব দেহে অতিরিক্ত লোম গাজানোর এই সমস্যাটি আসলে একটি রোগ-যার ইংরেজি নাম হাইপারথ্রিচোসিস। মুখ অার শরীরে বড় বড় লোম থাকা ছাড়া আর কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এই সমস্যাটি সামাজিকভাবে একজন মানুষকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে দেয়। ঘর থেকে বের হওয়া যায় না, কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়না, প্রেম করা এমনকি বিয়ে করার মত সঙ্গী পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না।

এ নিয়ে কষ্টকর অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে গিয়েছেন জেসাস। তিনি এ সম্পর্কে সংবাদ সংস্থা এএফপি’কে বলেন, ‘আপনি দেখতে ব্যতিক্রম। আর এ কারণেই তারা আপনাকে কোনো সুযোগ দেবে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটাই বাস্তব।’

জেসাস কাজ করেন লন্ডনের এক সাকার্স টিমে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে একজনের সঙ্গে পরিচয় এবং বিয়ে। তার ১৩ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। বাবার মত মেয়েটিও হাইপারথ্রিচোসিস রোগে ভুগছে। তবে পরিবারকে নিয়ে এখন তিনি সুখেই আছেন।

তিনি বলেন,‘আমরা অবশ্যই ভাগ্যবান। আমরা ভালোই আছি। যদিও মাঝে মধ্যে সমস্যায় পড়ি। তবে আপনি যদি নিজের প্রতি সৎ থাকেন তবে আপনি অবশ্যই জীবনে শান্তি খুঁজে পাবেন।’

মদ্যপান ছেড়েছেন অনেকদিন হলো। এখন আর রাস্তাঘাটে লোকলজ্জার ভয়ে তাকে নিজের মুখ লুকাতে হয়না। ‘আসলে আমি এখন আর কোনো কিছুর পরোয়া করছি না। আমি আর দশজনের মতই জীবনযাপন করতে চাই। সত্যিকার অর্থেই আমি সুখী হতে চাই।’



মন্তব্য চালু নেই