একই ভবনে মসজিদ-গির্জা-সিনাগগ!

এক ছাদের নিচে মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের প্রার্থনা কেন্দ্র: মসজিদ, গির্জা আর সিনাগগ সব মিলে ‘একের বাড়ি’ দ্য হাউজ অব ওয়ান! এমন ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত সম্ভবত অভূতপূর্ব। আর নজিরবিহীন এই প্রার্থনাগৃহ বুকে ধারণ করতে যাচ্ছে জার্মানির রাজধানী বার্লিন।

এ ধরনের একটি ভবন নির্মাণের জন্য স্থপতিদের মধ্যে ভবন নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী উইলফ্রেড কুহেনের নকশায় দেখা যায়: একটি টাওয়ারের চারপাশে একই আকৃতির তিনটি ভবন। এই ভবনগুলোর একটি মসজিদ, একটি গির্জা এবং অপরটি সিনাগগ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর মাঝখানের টাওয়ার ভবনটি ব্যবহৃত হবে তিন ধর্মের মানুষের মিলনস্থল হিসেবে।

ভবনের কাঠামো সম্পর্কে স্থপতি উইলফ্রেড কুহেন বলেন, ‌‘প্রার্থনার জন্য ব্যবহৃত প্রত্যেকটি ভবনের আকার সমান হবে। তবে ভবনগুলো নির্মিত হবে ওই ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী প্রার্থনার জন্য উপযোগী করে। যেমন: মসজিদ এবং সিনাগগ হবে দ্বিতল কিন্তু গির্জা হবে একতলা। এছাড়াও মসজিদে ওজু করার জন্য একটি কক্ষ থাকবে এবং গির্জায় প্রার্থনা সঙ্গীতের জন্য থাকবে একটি অর্গান।’

তিন ধর্মের স্থাপত্য রীতি সম্পর্কে কুহেন জানান, ভবনটির নকশা করার আগে তিন ধর্মের ধর্মীয় স্থাপনা সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে তারা দেখতে পান, ধর্মগুলোর স্থাপনার মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে।

দ্য হাউজ অব ওয়ান নির্মাণের জন্যে একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্থানকেই বেছে নেয়া হয়েছে। বারো শতকে নির্মিত সেইন্ট পিটার্স গির্জার ধ্বংসস্তূপের ওপর নির্মাণ করা হবে এই ভবনটি। পাস্তুর গ্রেগর হোবার্গ নামে ফরাসি এক খ্রিস্টান ধর্মযাজক জানান, ‌বারো শতকে নির্মিত সেইন্ট পিটার্স গির্জাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবশিষ্ট ধ্বংসাবশেষ যুদ্ধ শেষে পূর্ব জার্মানি কর্তৃপক্ষ ধ্বংস করে ফেলে।

হাউজ অব ওয়ান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‌‘সিনাগগ, মসজিদ, গির্জা এই তিনটি ভবনকে প্রার্থনার জন্য ব্যবহার করা হবে। আর মাঝের টাওয়ার ভবনটিকে আমরা ব্যবহার করবো নিজেদের মধ্যে আলোচনার স্থান হিসেবে। সেই আলোচনায় নাস্তিকরাও অংশ নিতে পারবে।’

ভবনটি সম্পর্কে তিন ধর্মের অনুসারীদের মধ্য থেকেই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। ভবনটি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে ইহুদি ধর্মীয় নেতা (রাব্বি) তোভিয়া বেন চোরেন বলেন, ‘ইহুদি দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে বলবো, বার্লিনে ইহুদিরা নিপীড়নের শিকার হয়েছিল সেখানেই আজ এক ছাদের নিচে একেশ্বরবাদী তিন ধর্মের প্রার্থনা কেন্দ্র নির্মিত হবে।’

কাদির সান্সি নামে ওই ভবনটির স্থাপনের সঙ্গে জড়িত এক ইমাম (মুসলিম ধর্মীয় নেতা) বলেন, ‘মোসলমানরা যে শান্তিপ্রিয় এবং অহিংস তারই একটি ইঙ্গিত হলো এই ভবন।’



মন্তব্য চালু নেই