এই মেলা শুধু মহিলাদের : পুরুষরা প্রবেশ করলেই জুটবে লাথি-ঘুষি!

‘কোনও পুরুষ যদি মেলার ভিতরে চলে আসে তাহলে সাধারণত এখানকার মেয়েরা তার গলায় জুতোর মালা পরিয়ে গোটা মেলা ঘোরায়। সেই সঙ্গে করা হয় হাজার টাকার মতো জরিমানা। কখনও-সখনও গণধোলাইও দেওয়া হয় অনধিকার প্রবেশকারীকে।’

ভারতীয় সমাজ নিঃসন্দেহে পুরুষতান্ত্রিক। সেই কারণে নানাভাবে মেয়েরা নিত্যদিনই লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হন ভারতীয় সমাজে। কিন্তু এই ভারতেই অনুষ্ঠিত হয় এমন একটি মেলা যেখানে পুরুষদের প্রবেশ একেবারে নিষেধ। ভুল করেও যদি পুরুষরা সেই মেলায় ঢুকে পড়েন, তাহলে তাঁদের কপালে জোটে ঘুষি, লাথির মতো শাস্তি, সঙ্গে মেটাতে হয় আর্থিক জরিমানাও।

ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার অন্তর্গত রানিশ্বর ব্লকের সাদিকপুর গ্রামে প্রতি বছর মহরম উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় একটি বিরাট মেলা, যার স্থানীয় নাম চুড়ি মেলা। মূলত চুড়ি বা মহিলাদের ব্যবহার্য অন্যান্য পণ্যের বিকিকিনি হয় বলেই মেলার এই নাম। এই মেলার বিশেষত্ব হল— এখানে পুরুষদের কোনও প্রবেশাধিকার নেই। কেবলমাত্র মহিলারাই চুড়ি মেলার আনন্দ নিতে পারেন। দোকানে দোকানে মহিলারাই বিক্রেতা, এবং মহিলারাই ক্রেতা।

ঠিক কী ঘটে যদি কোনও পুরুষ ঢুকে পড়েন মেলা চত্বরে? রানিশ্বরের বাসিন্দা তরুণী সোনম বললেন, ‘কোনও পুরুষ যদি মেলার ভিতরে চলে আসে তাহলে সাধারণত এখানকার মেয়েরা তার গলায় জুতোর মালা পরিয়ে গোটা মেলা ঘোরায়। সেই সঙ্গে করা হয় হাজার টাকার মতো জরিমানা। কখনও-সখনও গণধোলাইও দেওয়া হয় অনধিকার প্রবেশকারীকে।’

অন্তত শ’খানেক বছরের প্রাচীন এই মেলার কেন্দ্রে রয়েছে বিবি ফতেমা মা-র মাজার। লোকবিশ্বাস— এই মাজারে এলে মানুষের মনোস্কামনা পূর্ণ হয়। পূণ্য সঞ্চয়ের আকর্ষণে ও মেলা দেখার লোভে প্রতি বছর ঝাড়খণ্ড, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে অজস্র মানুষ আসেন এই মেলা দেখতে। বলা বাহুল্য, দর্শনার্থীদের সকলেই মহিলা।

পুরুষ-বিবর্জিত এই মেলায় পাহারাদারের কাজ অবশ্য করেন পুরুষরাই। হাইওয়ের ধারে মূল মেলা প্রাঙ্গনের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকেন লাঠিধারী মোটা গোঁফওয়ালা একধিক পাহারাদার। চেতেশ্বর সিংহ নামের এক পাহারাদারকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘আপনি যে পাহারা দিচ্ছেন, তা নিজে কখনও ঘুরে দেখেছেন এই মেলা?’ বিনীত হাসি হেসে সিংজি জানালেন, ‘আজ্ঞে না, নিয়ম নেই। আমাদের কাজ মেলার বাইরেই।’ এই কঠোর নিয়ম পালনের মধ্যে দিয়েই পুরুষতন্ত্রের চোখ রাঙানির একেবারে বিপরীতে সম্পূর্ণ মহিলাদের জন্য আয়োজিত চুড়ি মেলা ভারতের বুকে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।-এবেলা



মন্তব্য চালু নেই