উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাঞ্চিত : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশসহ আহত ৩

হামিদা আক্তার : ২৫ জানুয়ারী দুপুরে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কৈলাশ চন্দ্র রায়ে কানে ও গালে কিলঘুষি মেরে লাঞ্চিত করার ঘটনায় ছাত্র/ছাত্রীরা ফুঁেস উঠেছে। শিক্ষক লাঞ্চিতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঐ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্যকে ঘেরাও করে আটক করেছে বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীরা। এ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ডিমলা থানা পুলিশ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কামরুজ্জামান ওরফে লিঠু (৩৮)কে উদ্ধার করতে পুলিশ চেষ্টা চালালে ছাত্র/ছাত্রীরা ক্ষিপ্ত হয়ে লিঠুকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুরতে থাকলে ঢিলের আঘাতে আহত হয় থানা পুলিশের এএসআই বিকাশ চন্দ্র রায় ও কামরুজামান লিঠু। ঘটনার সূত্র ধরে জানা যায়, উক্ত বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরী জিকরুল হক ভূট্টু (৪০)’র মৃত দেহ উদ্ধার হয় ১ অক্টোবর সকালে উক্ত বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের প্রাচীর সংলগ্ন একটি ছোট্ট পুকুর (পানির গভীরতা মাত্র ৪ ফুট) লাশ পাওয়া গেলে ডিমলা থানা পুলিশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় তাৎক্ষনিকভাবে একটি ইউডি মামলা দায়ের করে তার স্ত্রী। ভূট্ট’র মৃর্ত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় সৃষ্টি হয় ধু¤্রজাল। কিভাবে তার মৃর্ত্যু হয়েছে এলাকার কেহই বলতে পারেননি সে সময়ে। এমনকি তার স্ত্রীও বলেছেন আমার স্বামীকে কেউ মারেনি। বিদ্যালয়ে জিন-ভূতের আনাগোনা থাকায় সম্ভবত তারাই আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। নৈশ্য প্রহরী মৃত জিকরুল হক বন্ধর খড়িবাড়ী গ্রামের মৃত আঃ মজিদের পুত্র। ইউডি মামলা নম্বর-১৫/১৬,তাং-০১অক্টোবর/১৬ ইং। এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর ১৯ ডিসেম্বর/১৬ তারিখে মৃত জিকরুলের হকের স্ত্রী ফেন্সি বেগম বাদী হয়ে কোর্টে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ৯ জনকে আসামী করে। আসামীদের মধ্যে উক্ত বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক কৈলাশ চন্দ্র রায়, আব্দুস ছালাম ও সামিম হোসেনকে আসমী করায় এলাকাবাসীসহ ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে চাঁপা ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। শিক্ষকদের আসামী করে বাদী ফেন্সি বেগম গা ঢাকা দিয়েছে বলেও এলাকাবাসীরা জানান। এদিকে বিদ্যালয়ের অভিভাববক সদস্য কামরুজ্জামান লিঠু ও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোফাক্কারুল হক পিলব এ মিথ্যা হত্যা মামলার পিছনে থেকে চক্রান্তের জাল বুনছেন বলেও বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীর ছাত্র রিয়াদ হোসেন রুমন, নুর নবী, মানিক অনিক ও সাগরসহ এলাকাবাসীর অনেক জানায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক কৈলাশ চন্দ্র জানান, উক্ত লিঠু ভুঁয়া অভিভাবক সদস্য। তার ছেলে গত বছর এই বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেনীতে পড়তো। ক্লাস রোল ছিলো-৯। কিন্তু এখন সে আর পড়ে না। সে সুন্দর খাতা স্বপন ফাজিল মাদ্রসায় ৭ম শ্রেণীতে পড়ে। ক্লাস রো ২৯। সেখানে তার ছেলে বৃত্তির টাকাও পায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন উক্ত মাদ্রসার উপাধ্যক্ষ আইয়ুব আলী। ঐ শিক্ষকের দাবী তাহলে কিভাবে লিঠু এই বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বনে রয়েছেন। এর মূল হোতা কে ? ঘটনার দিন ২৫ জানুয়ারী বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে কামরুজ্জামান লিঠু সহকারী শিক্ষককে লক্ষ্য করে বলেন, এই শিক্ষক খুব বাড়াবাড়ি করছে বলেই শিক্ষক কৈলাশ চন্দ্র রায়ের গালে স্ব-জোড়ে মুষ্ঠি বেঁধে শিক্ষকের গালে ও কানে ঘুষি মারতে থাকে। শিক্ষককে লাঞ্চিতের ঘটনা ছাত্র-ছাত্রীরা দেখে ফেলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এ ঘটনায় ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসী এক হয়ে সদস্য লিঠুকে ঘিরে ফেলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দিলে পুলিশ লিঠুকে উদ্ধারের চেষ্টা কালে ছাত্র-ছাত্রীরা ঢিল ছুড়তে থাকে। ঢিলের আঘাতে লিঠুর কপালে ঢিল লেগে রক্তাক্ত জখম হয়। অপর দিকে লিঠুকে বাঁচাতে পুলিশের এএসআই বিকাশের কানের উপড়ে ঢিল লেগে জখম হয়। পুলিশ তাদের দু’জনকেই উদ্ধার করে ডিমলা হাসাপাতালে দুটি করে সেলাই দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থানায় নিয়ে যান। এ দিকে শিক্ষক কৈলাশ চন্দ্রকে মারপিটের সময় থামাতে এসে আহত হয় সহকারী শিক্ষক মোফাক্কারুল পেলব, প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন প্রমূখ। সহকারী শিক্ষক কৈলাশ চন্দ্র ডিমলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিলেও অন্য শিক্ষকরা স্থানীয় ভাবেই চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এ ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে। উভয় পক্ষে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও উভয় পক্ষ দাবী করেছে। তবে কামরুজ্জামান লিঠু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানার হাজত খানায় রয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবী হত্যা মামলার বাদীনিকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল ঘটনাসহ থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর ধরে উক্ত বিদ্যালয়ে নৈশ্য প্রহরী (খন্ডকালীণ) পদে চাকুরী করে আসছিল জিকরুল হক। ঐ বিদ্যালয়ের পার্শ্বেই বাড়ী করে বসবাস করলেও প্রতি রাতে স্ত্রী পুত্র নিয়ে বিদ্যালয়ের ২য় তলার সিড়ির নীচে ঘুমিয়ে থাকতো তারা। ঘটনার দিন গভীর রাত পর্যন্ত স্ত্রী সন্তান কে নিয়ে জিকরুল জেগেই ছিলেন। কিন্ত পরের দিন পুকুরে জিকরুলের লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ঘটনার সে সময়ের তদন্তকারী অফিসার এসআই মোঃ সফিয়ার রহমান লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন।



মন্তব্য চালু নেই