কক্সবাজারের কিছু খবর

উখিয়ায় অস্ত্র সহ ২ ডাকাত আটক

কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া গভীর জঙ্গলে কুতুপালং ক্যাম্প পুলিশ হানা দিয়ে অস্ত্রসহ ২ জন কুখ্যাত ডাকাতকে আটক করেছে। পুলিশ এদের কাছ থেকে একটি দেশীয় তৈরি একনলা বন্দুক, ২ রাউন্ড কার্তুজ ও একটি ধারালো কিরিচ উদ্ধার করেছে।

এব্যাপারে উখিয়া থানায় অবৈধ অস্ত্র ও ডাকাতি আইনে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।

জানা গেছে, কুতুপালং ক্যাম্পের ইউনুছ ও তার ৭ বছরের মেয়েসহ মধুরছড়া জঙ্গলে লাকড়ি সংগ্রহ করতে গেলে ডাকাতেরা তাদের আটক করে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবী করে। রাত ১২টার দিকে ক্যাম্প পুলিশের একটিদল কৌশলে মুক্তিপনের টাকা দেওয়ার বান করে ডাকাতদের আস্তানা ঘিরে ফেলে। পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করে অন্যান্য ডাকাতেরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও পুলিশ রাজাপালং ইউনিয়নের মধুরছড়া গ্রামের মীর আহমদের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (২৭) ও মাছকারিয়া গ্রামের চেংগোলালের ছেলে মোহাম্মদ মালেক মিয়া (২৬) সহ ২ জন ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয়।

কুতুপালং পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মোঃ শহিদুল আলম চৌধুরী জানান, ধৃত ডাকাতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতি আইনে ৫টি মামলা রয়েছে।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদ জানান, মধুরছড়া জঙ্গলে অবস্থানরত সংঘবদ্ধ একটি ডাকাতদলের অপহরণ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে ইতিপূর্বে ৪শতাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

উখিয়া-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে বাতি নেই : বাড়ছে ছিনতাইয়ের ঘটনা
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, যেখানে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য নিত্য খেলা করে। লং ড্রাইভের জন্য খুবই জনপ্রিয় এ সড়কটি কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের এক উলে¬খযোগ্য সংযোজন। অথচ এ সড়কে এখন নিরাপত্তার অভাব। প্রতিমাসে ঘটছে ছিনতাই’র ঘটনা। সড়কে কোন বাতি না থাকায় এবং পুলিশি টহল অপর্যাপ্ত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বালুকাময় সৈকতের তীর ধরে নির্মাণ করা হচ্ছে সড়কটি। বর্তমানে এ সড়কের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই সড়কে রয়েছে দরিয়ানগর, হিমছড়ি ও ইনানী পর্যটন কেন্দ্র।

এছাড়া রয়েছে আরো কিছু বেসরকারি রিসোর্ট, বাগদা চিংড়ি পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারীসহ সমুদ্র তীরবর্তী নিঃসর্গ। প্রতিবছর এ সড়কে প্রায় অর্ধকোটি পর্যটক ভ্রমণ করেন। কিন্তু দরিয়ানগর থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়ক নির্জন এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় দুর্বৃত্তরা এর সুযোগ নিচ্ছে। প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে এ সড়কে ছিনতাই’র ঘটনা ঘটছে। গত এক মাসে এই ধরনের ৩টি ঘটনা ঘটেছে। এসময় দুর্বৃত্তদের হামলায় নারী-পুরুষসহ বেশ কয়েকজন পর্যটক আহত হয়েছেন। এমনটি দিনদুপুরেও ঘটেছে ছিনতাইর ঘটনা। কিন্তু উক্ত এলাকা মোবাইল নেটওয়াকের আওতায় না থাকায় ভুক্তভোগীরা দুর্বৃত্তপনার শিকার হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যও চাইতে পারেন না।

ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, নির্জন এ সড়কে বাতি না থাকায় রাতের বেলায় পর্যটকেরা আতংকের সাথেই মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণ করেন। এছাড়া পুলিশি টহলও অপর্যাপ্ত। অথচ এসড়কে বাতি স্থাপনের পাশাপাশি পুলিশি টহল জোরদার করা হলে রাতের বেলাতেও প্রচুর সংখ্যক ভ্রমণ করবেন।

স্থানীয়রা জানান, দরিয়ানগর ও হিমছড়ি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যবর্তী ২ নং ও ৩ নং ব্রিজ এলাকায় ‘হিট এন্ড রান’ পদ্ধতিতে ছিনতাইর ঘটনা ঘটছে। দুর্বৃত্তরা অপকর্ম করেই পার্শ্ববর্তী নির্জন পাহাড়ে গা-ঢাকা দিচ্ছে। ফলে এসব দুর্বৃত্তকে ধরা প্রশাসনের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়েছে। এতে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, এ সড়কটি পর্যটকদের কাছে এতই আকর্ষণীয় যে, বিশ্বের যেকোন পর্যটন কেন্দ্রের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে। এ সড়কে বাতি স্থাপন করা হলে রাতের বেলায় সড়কটিকে ‘নেকলেস হারবার’ এর মত মনে হবে। তিনি মেরিন ড্রাইভে সড়ক বাতি স্থাপনের পাশাপাশি পুলিশি টহল জোরদার করার দাবি জানান।

এ সম্পর্কে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমেদুল কবীর জানান, অতীতে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে এ সড়কে পর্যাপ্ত পুলিশি টহল রয়েছে। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কোন অবকাশ নেই। সড়ক বাতি স্থাপন হলে নিরাপত্তার বিষয়টি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, কোথাও ছিনতাইয়ের ঘটনা  ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

উখিয়ায় যৌতুকের দাবীতে স্বামীর নির্যাতনে স্ত্রী ঘরছাড়া
যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনে মাত্র ১ বছরের সোনার সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়ার মুহুরীপাড়া গ্রামের এক গৃহবধুর। বর্তমানে স্বামীর ঘর ছেড়ে পিতার বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে গৃহবধু আকাশী। বিয়ের কিছু দিন যেতে না যেতেই যৌতুকের জন্য স্বামী মোঃ ওমর ফারুক প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। নির্যাতনের মাত্রা এতই বর্বর ছিল যে, স্ত্রী নাসরিন সুলতানা আকাশীকে গোয়াল ঘরের গরুর সাথে রশি দিয়ে বেঁধে রাত্রি যাপন করাত ওই পাষান্ড স্বামী।

এঘটনা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের অত্মীয় স্বজনদের মধ্যে সামাজিক ভাবে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিকবার বিচার-শালিসের ঘটনাও ঘটে। এমন কি বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ ও বেশ কয়েকবার সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

জানা গেছে, উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের মুহুরীপাড়া গ্রামের অসহায় গুরা মিয়ার কন্যা নাসরিন সুলতানা আকাশের সাথে একই উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে মোঃ ওমর ফারুকের ২০১৩ সালে ডিসেম্বরে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক (কাবিন নং-৯৩০) বিবাহ সম্পন্ন হয়। ইত্যবসরে বিয়ের ২ মাস স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন সুখের কাটলেও যৌতুক লোভী পাষান্ড স্বামী ওমর ফারুক, তার পিতা-মাতা ও তার ভাই মিলে গৃহবধু আকাশীকে প্রায় সময় মারধর ও অত্যচার নির্যাতন করে আসতো। সামাজিক লোক-লজ্জা ও দরিদ্র পিতার অভাবের কথা ভেবে নীরবে এসব অত্যচার নির্যাতন আসতো গৃহবধু আকাশী। স্বামী ও শশুর পক্ষের লোকজনের এসব নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে স্বামীর ঘর করার চেষ্টা করে আসছিল আকাশী। ২০১৪ সালের ২৬ জুন সহকারী পুলিশ সুপারের (উখিয়া) নিকট স্বামীর নির্যাতনের বিচার চেয়ে গৃহবধু আকাশী একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে যৌতুক লোভী স্বামী ওমর ফারুকের তার স্ত্রীর প্রতি অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ভবিষ্যতে এধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করার অঙ্গিকার দিয়ে থানায় একটি মুছলেকা দেন। এরপর স্বামী স্ত্রী কিছু দিন এক সাথে সংসার করে।

এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের শুরু হয় গৃহবধুর উপর যৌতুকের দাবী নির্যাতন। গৃহবধু আকাশীর উপর শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে সে কোন উপায়ান্তর না দেখে পুনরায় উখিয়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ বরাবর গত ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের ১৯ তারিখে যৌতুক লোভী স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একখানা অভিযোগ দায়ের করেন। থানা পুলিশের আদেশ-নিষেধ তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে দিনের পর দিন গৃহবধু আকাশী ও তার পরিবার পরিজনকে প্রতিনিয়ত হুমকি দমকিসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করার তৎপরতা শুরু করে।

এ ঘটনার জের ধরে গত ৭ জানুয়ারি বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট আকাশী ও তার পিতা মাতাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মহিলা ইউপি সদস্য নুর নাহার বেগম সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি ভিত্তিহীন মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। যা বর্তমানে উখিয়া থানা পুলিশের নিকট তদান্তাধীন রয়েছে।

মুহুরীপাড়া গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি আকাশীর শশুর আব্দুর রহিম মামলা থেকে রেহাই পেতে নিজের ছেলে ওমর ফারুককে অন্যত্রে লুকিয়ে রেখে আদালতে গত ৭ জানুয়ারি এ মিথ্যা মামলা সৃজন করেন।

উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খানের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহবধু আকাশীর ঘটনা নিয়ে পুলিশ ইতিপূর্বে ২/৩ বার নিষ্পত্তি করেছে। কিন্তু আকাশীর শশুর পক্ষের লোকজন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়ায় ঘটনাটি নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলে তিনি জানান। এছাড়াও মামলার পুর্বের তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রবোধ দাশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।



মন্তব্য চালু নেই