রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির নেপথ্যে

উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বস্তিতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ

সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তির উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকার ঘটনা নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। পাশাপাশি কতিপয় এনজিও সংস্থার ঢালাও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে অবৈধ রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগীতার হাত সম্প্রসারিত হওয়ায় সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মাসের এ পর্যন্ত প্রায় ৭শ’ শতাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে বিজিবি মিয়ানমারে ফেরত পাঠালেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে বলে মনে করছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দরা।

জানা গেছে, ২০১০ সালে তুমব্র“, ঘুমধুম, বালুখালী ও পালংখালী সীমান্তের নাফনদী অতিক্রম করে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের পার্শ্বে বিশাল বনভূমির জায়গা দখল করে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নিদের্শে স্থানীয় বনবিভাগ, পুলিশ-বিজিবি দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারেনি।

এসময় জেলা প্রশাসক অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের অবৈধ ঘোষণা করে তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা না করার নিদের্শ প্রদান করেন। তথাপিও কতিপয় এনজিও সংস্থা এসব অবৈধ রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের অভিযোগে জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী এনজিও সংস্থা মুসলিম এইড, এমএসএফ হল্যান্ড ও এসিএফ’র রোহিঙ্গা ভিত্তিক সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করেন দেন।

সম্প্রতি আইএমও, মুক্তি, এমএসএফ হল্যান্ড, এসিএফ, মুসলিম এইড ও শেড সহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা বস্তিতে ত্রাণ সামগ্রীসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনজিও সংস্থা আইএমওকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করার জন্য সরকারি ভাবে নিদের্শ দেওয়ার কথা জেলা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা ফরিদ আহমদ ভূইঁয়া স্বীকার করলেও অন্যান্য এনজিও সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারী রাকিব উল¬াহ এঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মুক্তি নামের একটি এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা বস্তিতে লেট্রিন, টিউবওয়েল, ঔষুধ সামগ্রী, সাবান, খাবার স্যালাইন সহ মহিলাদের বিভিন্ন প্রকার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছে। এনজিও সংস্থা মুক্তির ফিল্ড কোর্ডিনেটর মোহাম্মদ জাবের জানান, তারা আইএমও’র প্রতিনিধিত্ব করছেন।

স্থানীয় আ’লীগ নেতা মোহাম্মদ নুরুল হক জানান, এসব অবৈধ রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রীসহ সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে বস্তিতে বসবাসরত অবৈধ রোহিঙ্গারা উৎসাহিত হওয়ার প্রেক্ষিতে মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এদের কিছু কিছু বিজিবি’র হাতে ধরা পড়লেও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে রোহিঙ্গা বস্তিসহ দেশের আনাচে কানাছে আশ্রয় নিতে সক্ষম হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে বস্তি এলাকায় এনজিও সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ করার দাবী জানান। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের এ পর্যন্ত প্রায় ৭শ’ শতাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে, কক্সবাজার ১৭ বিজিবি’র অধিনায়ক লে.কর্ণেল খন্দকার সাইফুল আলম জানান, সীমান্তে বসবাসরত একশ্রেণির দালাল চক্রের কারণে রোহিঙ্গারা এখানে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, কতিপয় এনজিও সংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের আখের গোছানোর জন্য দায়ভার বহন করতে হচ্ছে এদেশের মানুষকে। তাই এসব এনজিও সংস্থাগুলোর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কোন দিনও সফলতা লাভ করবে না। উপরোন্তু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আরো বৃদ্ধি পেয়ে উখিয়া-টেকনাফের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশংকা রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই