ঈমানদার ব্যক্তি কখনো নামাজ থেকে দূরে থাকে না

আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে (পরকালে) বিশ্বাস রাখে, তারা জীবন ও সম্পদ দিয়ে যুদ্ধ করা থেকে তোমার কাছে অব্যাহতি কামনা করে না (বরং আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত এগিয়ে যায়)। আল্লাহ দায়িত্বনিষ্ঠদের সম্পর্কে ভালোই জানেন। (সুরা তাওবা, আয়াত : ৪৪)। তাফসির: তাবুকের বিভীষিকাময় যুদ্ধে আবারও প্রমাণিত হয়েছে, মুমিনরা জীবন ও সম্পদের মোহে পড়ে যুদ্ধ থেকে অব্যাহতি কামনা করে না। কেননা, সত্যের সংগ্রামে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত প্রতিদান দুনিয়ায় নেই। প্রতিদান মিলবে পরকালে। আর মুমিনরা পরকালে দৃঢ়বিশ্বাসী। পরকালে এই আত্যাগের প্রতিদান পাওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই তাদের অন্তরে। যেহেতু সেই প্রতিদান নিশ্চিত, তাই তারা পারলৌকিক প্রতিদানের আশায় অব্যাহতি না চেয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। কেবল এ বিষয়েই নয়, জীবনের সব ক্ষেত্রেই তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধকে প্রাধান্য দেয়। প্রকৃত মুমিনরা বিশ্বাস করে, পরকালের সফলতাই চূড়ান্ত সফলতা। তাই তারা জাগতিক ক্ষুদ্র বিষয় বিসর্জন দিয়ে পরকালের জন্য পাথেয় জোগাড় করে। খাঁটি মুমিন বান্দা ইহজগৎকে প্রয়োজনমতো ধারণ করে, কিন্তু পরকাল তাদের কাছে প্রাধান্য পায়। তাই প্রকৃত ইমানদার ইবাদত থেকে দূরে থাকে না। শত ব্যস্ততা তাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখে না। জীবনের সব ক্ষেত্রে তারা দ্বিধাহীনচিত্তে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশনা মেনে নেয়। নিজের কুপ্রবৃত্তির ওপর তারা শরিয়তের বিধানকে প্রাধান্য দেয়। জীবনের প্রতিটি ধাপে তারা নিজেদের বিশ্বাসের চূড়ান্ত বাস্তবায়ন ঘটায়। আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, আল্লাহ মুত্তাকি তথা দায়িত্বনিষ্ঠদের সম্পর্কে ভালোই জানেন।’ অর্থাৎ আল্লাহ তাদের সবার অন্তরের অবস্থা ভালোই জানেন। সে অনুযায়ীই তিনি তাদের সবাইকে যথাযথ প্রতিদান দেন। আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন। তাই মুমিনরা নিজেদের জান ও মাল তথা সব কিছু আল্লাহর কাছে অর্পণ করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন।’ (সুরা তাওবা : ১১১)। যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিভিন্ন দিক এই আয়াতে যুদ্ধে অংশগ্রহণকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এক. যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সম্পদ খরচ করার মাধ্যমে তাতে অংশগ্রহণ করা। দুই. শারীরিক শক্তি দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম। সম্পদ দিয়ে সংগ্রাম আবার দুই ধরনের হতে পারে। এক. যুদ্ধের জন্য যেসব অস্ত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়, সেগুলো সরবরাহের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করে দেওয়া। দুই. যোদ্ধাদের খাবার, পানীয় ও সওয়ারিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম, প্রয়োজন পূরণ ও তাদের পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন পূরণ করা। এই দুইয়ের মধ্যে সশরীরে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা উত্তম। তবে আর্থিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকে অংশগ্রহণ করাই সবচেয়ে উত্তম। আয়াতে সম্পদের মাধ্যমে সংগ্রামের কথা আগে বলা হয়েছে। এর কারণ হলো, অনেকে শারীরিকভাবে অংশগ্রহণ করলেও অর্থের মায়া ত্যাগ করতে পারে না। এটা প্রকৃতপক্ষে মুনাফিকির বহিঃপ্রকাশ। তবে কিছু লোক আর্থিক ও শারীরিকভাবে যুদ্ধে শরিক না হলেও তারা যোদ্ধার মর‌্যদা লাভ করবে। তারা ওই সব লোক, যারা যুদ্ধকে সফল করতে বিভিন্নভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই করে, পরামর্শ দিয়ে যোদ্ধাদের সঠিক পথ দেখায়। তারা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, উৎসাহ প্রদান ও দিকনির্দেশনা দেয়। শত্র“পক্ষের তথ্য সরবরাহকারীরাও যোদ্ধাদের মর‌্যদা পাবেন। (তাফসিরে মুনির)।-কালের কন্ঠ



মন্তব্য চালু নেই