ঈদ উৎসবে দেশীয় শাড়ি: কোথায় পাবেন, কেমন দাম

শিরোনাম দেখে অনেকেই হয়ত ভ্রু কুঁচকে বলেই ফেলবেন, সাদামাটা দেশী শাড়িতে ঈদ পালন ! হ্যা, ঠিক আসলেই ঠিক তাই। জমকালো-বাহারী সব ইন্ডিয়ান-পাকিস্তানী সালোয়ার কামিজ আর শাড়ির ভীড়ে, এই ঈদে খুব সহজেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন সবার চেয়ে ব্যাতিক্রমী আর মায়াবতী- অবশ্যই সেটা আমাদের দেশী সব সুন্দরতম শাড়ির কল্যাণে। আর যেহেতু এই ঈদের সময় আবহাওয়া কিছুটা গরম থাকবে, তাই আরামদায়ক দেশী শাড়িতে আপনি থাকতে পারবেন দিনমান ফ্রেশ! তো জেনে নেওয়া যাক, কেমন সব শাড়ি তোলা হতে পারে আপনার ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দেবার জন্য।

জামদানি শাড়িঃ
যেকোন বয়সের নারীদের জন্য উৎসব-পার্বণে একই সাথে জমকালো এবং আরামদায়ক শাড়ি হতে পারে জামদানি শাড়ি। জামদানি শাড়ি মূলত নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বাস করা তাঁতিদের হাতে তৈরি হয়। নজরকাড়া অনন্য সব বুননের জন্য জামদানি শাড়ি দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে অনেক আগেই। এসব শাড়ি মূলত একরঙ্গা অথবা দুই-তিন রঙের সুতো দিয়ে বোনা হয়। যেহেতু গরমকাল চলছে, তাই আপনি গাঢ় কোন রঙ বাদ দিয়ে বেছে নিতে পারেন সাদা, গোলাপী, হালকা সবুজ, বেগুনী, আসমানি – এসব রঙের শাড়ি। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জামদানি শাড়ি সহজলভ্য। সাধারণত এইসব শাড়ির দাম ২০০০-২০০০০ বা এর বেশি। ঢাকার মধ্যে একটু কম দামে, দেখেশুনে ভালো জামদানি কেনার জন্য ঘুরে আসতে পারেন ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেট। এছাড়া কম ঘুরাঘুরিতে সহজেই মনকাড়া সব জামদানি পাওয়া যাবে আড়ং এর বিভিন্ন আউটলেটে। তো আর ভাবনা কি ? এই ঈদে তাই আপনি চোখ বুজে গায়ে জড়িয়ে নিতে পারেন ছিমছাম একটি জামদানি শাড়ি, হতে উঠতে পারেন সকলের চোখে স্নিগ্ধতার প্রতিমূর্তি !

টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িঃ
বাঙ্গালী মেয়েদের সৌন্দর্য্য অনেকটাই ফুটে ওঠে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িতে। যুগ যুগ ধরে বাঙ্গালীর বিভিন্ন উৎসব থেকে শুরু করে নিত্যদিনের কাজে তাঁতের শাড়ি হয়ে উঠেছে নির্ভরতার প্রতীক। আরামদায়কতা, রং আর ডিজাইনের বৈচিত্রের জন্য তাঁতের শাড়ি তরুনী থেকে মধ্যবয়সী- সবারই কম বেশি পছন্দ। তবে সময় বদলের সাথে সাথে তাঁতিরা বুনছেন যুগের চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি। আঁচল আর পাড় জমকালো হলে শাড়ির মূল জমিন থাকছে তুলনামূলক সাদামাটা। এর উল্টোটাও পাবেন আপনার ইচ্ছা ইনুযায়ী। জমিন, জমকালো হলে আঁচল,পাড় থাকছে সাধারণ। এছাড়া কুচিতে শাড়ীর মূল ডিজাইন থেকে আলাদা ডিজাইন দিয়েও শাড়ি বোনা হচ্ছে। এসব শাড়ির দাম সুতোর ভিন্নতা, বুনন ও ডিজাইন ভেদে বিভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত এই রেঞ্জ ৫০০-৭০০০ বা তার বেশি। তাঁতের শাড়ি কিনতে হাতে সময় নিয়ে সরাসরি চলে যেতে পারেন ঢাকার অদূরে টাঙ্গাইল শহরেই। কম দামে হরেক রকম ডিজাইন মিলবে এখানকার বিভিন্ন দোকানে। আর ঢাকার মধ্যে কিনতে চাইলে হকার্স মার্কেট সহ বিভিন্ন বুটিক শপের দোকান তো আপনার জন্য খোলা থাকছেই। সুতরাং, চিন্তা বাদ দিয়ে এই ঈদের সকালে চটজলদি বেছে নিন একটি তাঁতের শাড়ি, খোপায় গুঁজে ফেলুন দুটো বেলী ফুলের মালা; আর প্রিয়জনদের আটকে ফেলুন চিরায়ত বাঙ্গালী নারীর সহজাত স্নিগ্ধতায় !

মনিপুরী শাড়িঃ
মনিপুরী শাড়ি সাধারণত সিলেট শহরের অদূরে শ্রীমঙ্গলে মনিপুরী আদিবাসীদের তাঁতে বোনা হয়। ডিজাইনের অভিন্নতাই এই শাড়ির মূল আকর্ষণ। মোটামুটি সব শাড়ীর পাড়ের ধরন একই হলেও রঙের ভিন্নতার কারনে দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলছে। চাইলেই পছন্দের যেকোন কনট্রাস্টের শাড়ি মিলবে মনিপুরী শাড়ির মধ্যেই। বুনন ভেদে এর দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। মূলত ১০০০-৫০০০ এর মাঝেই পেয়ে যেতে পারেন কাঙ্ক্ষিত একটি মনিপুরী শাড়ি। এইসব শাড়ি সিলেট ছাড়াও পাবেন ঢাকার বিভিন্ন বুটিক শপ এবং ফ্যাশন হাউসগুলোতে। এছাড়া অনলাইনেও পেয়ে যেতে পারেন চোখ খুলে রাখলেই। তো বলুন এবার, এই ঈদে ভিন্নতা আনতে একটি উজ্জ্বল মনিপুরী শাড়ির চেয়ে আকর্ষনীয় আর কি হতে পারে?

রাজশাহী সিল্কঃ
এতক্ষন সূতি সব শাড়ির গল্প শুনে অনেকেই হয়ত ভাবছেন , সূতি বাদে দেশী শাড়ি আর কি হতে পারে ঈদের জন্য? আপনাদের জন্যই এবার তুলে ধরছি ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সিল্কের আদ্যপান্ত। অনেক বছর ধরেই বাঙ্গালী নারীদের আভিজাত্যের অন্য নাম সিল্ক-শাড়ি। মূলত গুটি পোকা থেকে তৈরি হয় রেশমী সুতো। আর সেই সুতো দিয়ে বোনা হয় অভিজাত সব জমকালো সিল্ক শাড়ি। এই ঈদে দিনের চেয়ে রাতের পার্টিগুলোতে বেশি মানাবে সিল্কের শাড়িগুলো। তবে এসব শাড়ি কেনবার জন্য আপনাকে বেশ ভালো পরিমাণ টাকা গুনতে হবে। মূলত ৪০০০-৩০০০০ পর্যন্ত সিল্ক শাড়ির দাম ওঠানামা করে। রাজশাহী সিল্ক উৎপাদনের জন্য ‘সপুরা সিল্কে’র খ্যাতি দেশজুড়ে। তবে এসব কালেকশন বেছে নেবার জন্য আপনাকে রাজশাহী পর্যন্ত যেতে হবে না। খোদ রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতেই রয়েছে সপুরা সিল্কের শোরুম। এছাড়াও বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসেও মিলবে সিল্কের জমকালো সব শাড়ি। ঈদের রাতের পার্টিতে, হালকা সাজের সাথে তুলনামূলক গাঢ় রঙা সিল্ক শাড়িতে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন সবার চেয়ে উজ্জ্বল, মোহনীয়।

কি, এবার নিশ্চয়ই ইচ্ছা জাগছে এবার ঈদটা অন্যান্য বারের মত বিদেশী চাকচিক্যে না জড়িয়ে একান্ত আপন সব শাড়িতে নিজেকে মেলে ধরবার? তো চলুন না, দেশী শাড়ীতে মায়াময় করে তুলি আমাদের ঈদ উৎসব; প্রকাশ করি নিজেদের একান্ত বাঙ্গালীয়ানা !প্রিয় লাইফ



মন্তব্য চালু নেই