ইসির ‘কঠিন কাজ’ ইউপি নির্বাচন তদারকি

পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবলের অভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিধি প্রয়োগ ও আচরণ বিধি তদারকি নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথম ধাপ ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দশ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত ৭৩৯ ইউপির কোথাও আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ পায়নি ইসি। বিষয়টি অনেকেটাই অস্বাভাবিক ঠেকছে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে।

ইসি সূত্র জানায়, বিধি অনুসারে ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫ লাখ টাকা ও সদস্য ১ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় করতে পারবেন। এর বাইরে চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ ৫০ হাজার টাকা ও সদস্য ১০ হাজার টাকা ব্যয়ের সুযোগ রয়েছে নির্বাচন বিধিতে। তবে প্রার্থীদের ব্যয় তদারকি করার মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই ইসির।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এখন মনোনয়নপত্র জমা দেয়া শুরু হয়েছে। প্রার্থী হওয়ার পর সবার দিকে সমান নজর রাখা হবে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে এ বিষয়ে দেখভাল শুরু করা হবে। স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে ছোট্ট এ নির্বাচনে বিধিলঙ্ঘনের তদারকি করাটাও সহজ হবে না তাদের কাছে। প্রতিটি উপজেলায় কমপেক্ষ পাঁচশ’র বেশি প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিবেন। এসব প্রার্থী বিধি প্রতিপালনসহ তাদের নির্বাচনী ব্যয় দেখভালের জন্য একজন করে বিচারিক ও নির্বাহী হাকিম দিয়ে তা প্রায় অসম্ভব।

এদিকে প্রথমধাপে ৭৩৯ ইউপিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হচ্ছে ২২ ফেব্রুয়ারি সোমবার। ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২ মার্চ। ভোট হবে ২২ মার্চ।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রতি উপজেলায় অন্তত ৬ থেকে ৯টি ইউপি থাকে। প্রতিটি ইউপিতে একজন চেয়ারম্যান এবং অন্তত ৯টি সাধারণ ওয়ার্ড ও তিনটি সংরক্ষিত রয়েছে। প্রতি ইউনিয়নে গড়ে ১৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে প্রতি উপজেলায় ১০০ পদ রয়েছে। এসব পদে গড়ে ৫ জন করেও প্রার্থী হলে পাঁচশ প্রার্থী প্রতি উপজেলায়। এ অবস্থায় নির্বাচনী ব্যয় ঠিকমতো করছে কি না বা আচরণবিধি সঠিকভাবে পালন হচ্ছে কি না তা কয়েকজন কর্মকর্তার পক্ষে তদারকি করা কঠিন হবে- বলে জানান কর্মকর্তারা।

ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫ লাখ টাকা ও সদস্য ১ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় করতে পারবেন। এর বাইরে চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ ৫০ হাজার টাকা ও সদস্য ১০ হাজার টাকা ব্যয়ের সুযোগ রয়েছে নির্বাচনবিধিতে। রাজনৈতিক দল ইউপি প্রতি ৩০ হাজার টাকা করে ব্যয় করতে পারবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা জরিমানার সুযোগ রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে ব্যয় বিবরণী জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সদস্য পদে নেই।

প্রথম ধাপের নির্বাচনের জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি ৭৩৯ ইউপির তফসিল ঘোষণা করা হয়। এরপরেই ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আগাম প্রচারণামূলক পোস্টার-প্রচার সামগ্রী সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয় ইসি।

তফসিল ঘোষণার পর এ পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি জানিয়ে ইসি নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, নির্বাচনী ব্যয় তদারকি করা কঠিন হলেও উপজেলা পর্যায়ে ভিজিলেন্স টিম থাকবে বিচারিক ও নির্বাহী হাকিম থাকবে। ব্যয়সীমার মধ্যে প্রার্থী নির্বাচনী খরচ করছে কি না এবং আচরণবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কি না তা ভালোভাবে দেখা হবে।

এখনো যাদের প্রচার সামগ্রী থাকবে তার ছবি তুলে রাখা হচ্ছে, প্রার্থী হওয়ার পরই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

সহকারী সচিব পযায়ের এক কর্মকর্তা জানান, সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনের অন্য স্তরে বিধি লঙ্ঘনের তদারকি করাটাই কঠিন হয়ে পড়ে সেখানে ছোট্ট ইউপিতে তা খুঁজে বের করা অসম্ভব বললেই চলে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনে শুরু থেকে ইউপি নির্বাচন নিয়ে সমন্বয়হীনতা চলছে। অগোছালো অবস্থায় নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে ইসির কাজের সমন্বয়হীনতা বেড়েই চলেছে।

মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বিতরণে বিলম্ব হয়েছে। তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই মনোনয়ন বিতরণ করা হয়। তবে আমরা একদিন পর মনোনয়ন হাতে পেয়েছি। একই সঙ্গে প্রার্থীদের ভুল ভোটার তালিকার সিডি দেয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে ইসির উপ সচিব পর্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, তাড়াহুড়ো করে তফসিল দিতে গিয়ে বেশ কিছু কাছে ত্রুটিবিচ্যুতি ধরা পড়েছে। এখন তা সারিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে। প্রথম কয়েকদিন ভুলসহ সিডি ও মনোনয়নপত্র বিতরণ হলেও পরে তাদের কাছ থেকে ফেরত নেওয়া হয়েছে। আগামী পর্বে এসব ত্রুটি আর থাকবে না। সময় মতো প্রয়োজনী কাগজপত্র-নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে যাবে।

উল্লেখ্য, এবার সারাদেশে ছয় ধাপে ইউপি ভোট হচ্ছে।দ্বিতীয় ধাপের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৬৮৪ ইউপিতে ২ মার্চ পর্যরন্ত মনোনয়ন জমার শেষ দিন, ভোট ৩১ মার্চ। এর পরে যথাক্রমে চার ধাপে ২৩ এপ্রিল ৭১১টি, ৭ মে ৭২৮টি, ২৮ মে ৭১৪টি এবং ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।



মন্তব্য চালু নেই