ইসলামে নিষিদ্ধ চারটি সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার

লেখাটি লিখবো কিনা এ নিয়ে দুমিনিট ভাবছি । কারণ জ্ঞানীরা বলে গেছেন , “ ভাবিয়া করিও কাজ , করিয়া ভাবিও না । “
ইদানীং নারী পুরুষের বিবাহিত সেক্সুয়াল লাইফ এ কিছু কিছু সমস্যা প্রকট আকারে সামনে চলে এসেছে ।বিবাহিত জীবন গড়াচ্ছে ডিভোর্স পর্যন্ত ।অস্বাভাবিক সেক্সুয়াল লাইফের বলি হিসেবে মহিলারা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা পি , আই , ডিতে ভুগছেন । মেডিকেল ট্রিটমেন্ট ফেইলুরের পর সার্জারি করেও শেষ রক্ষা হয়না । ব্যথা ময় এক জীবন বয়ে বেড়ান ।

পুরুষ নারী নির্বিশেষে যৌন বাহিত অসুখবিসুখ তো আছেই ।

আর মনের উপর যে ভয়াবহ চাপ পড়ে মেন্টাল ট্রমা তৈরি হয় সে প্রসঙ্গ নাই বা বললাম , মনের ব্যাপারটাতো চির উপেক্ষিত আমাদের সমাজে ।

কথা হল , একজন কনজারভেটিভ আর নতুন প্র্যাকটিসিং মুসলিম সর্বোপরি একজন ডাক্তার হিসেবে সমস্যাগুলো দেখে , রবি গুরুর ব্রজেশ্বরের মত জঞ্জাল দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যাব , নাকি সুকান্তের মত , “ প্রাণ পণে সরাব জঞ্জাল “ ?!? 😐

আসলে সময় এসেছে কিছু কিছু ব্যাপারে শালীনতার মধ্য থেকেই আলোচনা করার । কারণ আমরা অনেক কিছুই জানিনা । আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন, দীর্ঘ ১২ বছর পড়াশুনা করে এইছ , এস , সি পাশ দিলেও কেউ না পারে ইহকালে রুটি রোজগারের ব্যবস্থা করতে , আর না হয় তার নৈতিক জ্ঞান ,যা দিয়ে সে বাকি জীবন সঠিক ভাবে চলার দিক নির্দেশনা পাবে । মাছি মারা কেরানী ছাড়া আর কিছুই হতে পারিনা আমরা । পরবর্তী উচ্চশিক্ষায় ও নৈতিক বিষয়টি কোন স্থান পায়না । তাই আমাদের জ্ঞানের অভাব আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দৈন্যতার উপরেই বর্তায় ।

তবুও একটি আশাবাদী কথা দিয়েই শুরু করি । আপনি কি জানেন ? মুসলিমদের সেক্সুয়াল লাইফকে মেডিকেলে খুবই এপ্রিশিয়েট করা হয় । গাইনি মেডিকেল বই এ মুসলিম সেক্সুয়াল বিহেভিয়ারের প্রশংসা করে লেখা থাকে , “মুসলিম ছেলেদের সারকামসেশন ( মুসলমানি ) করা থাকে তাই তাদের স্ত্রীর অমুক অসুখ কম হয় । অথবা সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স এ মুসলিম রা অমুক নিয়মটি ফলো করে তাই তাদের অমুক অসুখটি কম হয় । “

“ মুসলিমদের কি সেক্সের আলাদা নিয়ম আছে ?!? “ ঝট করে প্রশ্নটি মনে জাগে ।

আমার পরম শ্রদ্ধেয় সার্জারির প্রফেসরের উক্তি মনে পড়ে গেলো । সদা হাস্যময়ী স্যার বলেছিলেন , “ Breast feeding (নবজাতকের মায়ের দুধ পান করা ) & Sexual intercourse ( সেক্স করা) reflexly মানুষ শিখে যায় , এটা কাউকে শিখাতে হয় না । “

এখানেই কথা আছে কিন্তু। রিফলেক্সলি ঠিক জিনিসটি শিখার আগেই প্রযুক্তির অকল্যাণে বিধ্বংসী কিছু পারভার্সন ঢুকে গেছে স্বাভাবিক যৌন জীবনে ।

কিভাবে ? ইন্ডিয়ার কিছু চটি সাইট আছে ওগুলোর মূল ভিজিটর বাংলাদেশি । আর ইন্ডিয়ান ভিজিটর বাংলাদেশের ভিজিটরের অর্ধেকের ও কম । আর অনলাইন সংবাদ মাধ্যম গুলোর মূল ভিজিটর আসে অশালীন রগরগে সংবাদগুলো থেকে ।তারা দেশে এরকম সংবাদ না পেলে বিদেশ থেকে সংবাদ আমদানি করে । লক্ষ্যকরে থাকবেন এই রোজার মাসেও ভিজিটরের লোভে সানি লিওনের সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত হয়নি । মোবাইলে মোবাইলে অশালীন ভিডিও সহজে কিনতেও পাওয়া যায় যারা নেট ইউজ করেনা তাদের সুবিধার জন্য ।

তাহলে বুঝাই যায় মুসলিম প্রধান দেশ হওয়া স্বর্তেও পর্ণোগ্রাফী বাংলাদেশে দারুণ জনপ্রিয় । আর পর্ণো পড়ার সময় বা দেখার সময় আমাদের কয়জনের মনে থাকে ,এগুলি কিন্তু গুনাহ । চোখের ব্যভিচার ।

এই সহজলভ্য পর্ণো আর চটিসাইট গুলো মানুষের স্বাভাবিক যৌন জীবন কে অস্বাভাবিকতা দিয়ে রিপ্লেস করে দিয়েছে । সংসার জীবনে নেমে এসেছে অশান্তি ।
“ ভালবেসে স্ত্রীর দিকে তাকালেও সোয়াব “ এই সব হাদিস উঠে গিয়ে এসেছে , “ LOVE করে আর লাভ নেই রে পাগলা ।“

মানুষ সেক্সুয়াল লাইফ নিয়ে পুরোই বেদিশা । তারা শুধু ছুটছে । “ কই আমিতো পর্ণো ছবির পুরুষ বা মহিলাটির মত আনন্দে আত্মহারা হলাম না ।হয়ত আমার ওয়াইফ বা হাসবেন্ড ঠিক পারছেনা । কোথায় ? কোথায় আছে সেই সোনার হরিণ । কোথায় সেই আনন্দের ফোয়ারা ? সবাই পায় , আমি পাই না কেন ? “

বিবাহ বহির্ভূত সেক্স , হোমোসেক্সুয়ালিটি , এনাল সেক্স মহামারির মত ছড়িয়ে গেছে ।
দুনিয়াতে এত মজা নিলে আখেরাত কিন্তু অন্ধকার । আজ আমরা জানবো ইসলামে সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার এ ৪ টি নিষিদ্ধ ক্ষেত্র ।

Extramerital sex
Sexual intercourse during menstruation and Puerperium
Homosexuality
Anal Sex

# Extramerital sex
বিবাহ বহির্ভূত সেক্স – এর কারণে সিফিলিস , গনোরিয়া , ক্ল্যামাইডিয়া , মোনিলিয়াসিস , ট্রাইকোমোনিয়াসিস , ব্যাকটেরিয়াল ভেজাইনোসিস , জেনিটাল হার্পিস , জেনিটাল ওয়ার্টস প্রভৃতি সমস্যা আর তাদের কমপ্লিকেশন তো আছেই । সারভাইক্যাল ক্যন্সার ( জরায়ু মুখের ক্যান্সার ) যার মূল কারণ হিউমেন প্যাপিলোমা ভাইরাস তাও ট্রান্সমিট হয় । আর ঘাতক ব্যাধি এইডস তো আছেই ।

আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন , “ তোমরা ব্যভিচারের নিকটেও যেওনা , কারণ এটি অশ্লীল ও মন্দ পথ ।‘ ( সূরা বনী ইসরাইল , ৩২)
# যে মুহাররামাত মহিলার সাথে যিনা করবে তার হুকুম ঃ
যে ব্যক্তি কোন মুহররামাত ( যাদেরকে বিবাহ করা হারাম ) যেমন – আপন ,বোন , কন্যা ও বাবার স্ত্রী ইত্যাদি এর সাথে হারাম জানা স্বর্তেও যিনা করবে তাকে হত্যা করা ফরজ ।

বারা ইবনে আজেব (রা ) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন , “ আমার চাচাকে ঝান্ডা উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেখে বললাম ঃ কোথায় চলেছেন ? তিনি বললেন- আমাকে রাসুল করিম ( সাঃ ) প্রেরণ করেছেন ঐ মানুষের নিকট যে তার বাবার স্ত্রীকে বিবাহ করেছে । তিনি ( সাঃ ) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তার গর্দান উড়িয়ে দেয়ার জন্য এবং সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য । ( সহীহ হাদিস , তিরমিজি হাদিস নং ১৩৬২ , নাসাঈ হাদিস নং ৩৩৩২ ) ।

তাহলে ইনচেস্ট ( Incest ) ভর্তি পর্নো চটি সাইট গুলো আমাদের নিজেদের ঐতিহ্য বাহী মূল্যবোধ সম্পন্ন সম্পর্ক গুলোকে কোথায় নিয়ে চলেছে ?

# Homosexuality ( সমকামিতা )
লূত (আঃ ) এর সময়ের আগে পৃথিবীতে হোমোসেক্সুয়ালিটি ছিলনা । সমকামিতা চরিত্র আর স্বভাব বিধ্বংসী এক জঘন্যতম অপরাধ ইসলামের দৃষ্টিতে । লূত ( আঃ ) এর জাতি এ অপকর্ম করার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন । তাদের উপর পাথর বৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন । এ ছাড়া শেষ বিচারের দিনেও তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন , “ এবং আমি লূতকে পাঠিয়েছি । যখন সে নিজ জাতিকে বলল- তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ , যা তোমাদের পূর্বে গোটা বিশ্বের কেউ করেনি ? তোমরাতো কামবশতঃ পুরুষের নিকট গমন কর মহিলাদের ছেড়ে । এবং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছো । [ সূরা আরাফ ৮০-৮৪ ]

আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- “ অবশেষে যখন আমার আদেশ পৌঁছল , আমি উক্ত জনপদকে উপুড় করে নীচ করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম । যার প্রতিটি তোমার রবের কাছে চিহ্নিত ছিল । এবং পাপিষ্ঠ দের কাছ থেকে বেশি দূরেও নয় । “( সুরা হূদ ৮২-৮৩)
আর রাসুল ( সাঃ ) বলেন , “ তোমরা লূতের জাতির কর্ম অবস্থায় যাকে পাবে তার কর্তা এবং কর্ম উভয়কে হত্যা করবে । ( সহীহ হাদিস আবু দাউদ হাদিস নং ৪৪৬২ , তিরমিযী হাদিস নং ১৪৫৬)

হোমোসেক্সুয়ালিটি জন্মগত ভাবে আসে , হোমোদের এমন আজব কথা তাদের নিজেদের আবিষ্কার ।

# Anal sex
Anus ( মলদ্বার ) অনেক রকম মাইক্রোওর্গানিজম দিয়ে পূর্ণ । আনহাইজিনিক সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের কারণে ফিমেল পার্টনার ভয়াবহ রকমের পি, আই , ডি তে আক্রান্ত হয়ে যায় । এনাল ফিসার , পাইলস হবার ঝুঁকি বাড়ে । এনাল স্ফিংটার এর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় ।

হাদিসে আছে , “ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে এনাল সেক্স ( নিতম্বে সহবাস ) করবে আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না । “ ( নাসাঈ আল ইশ্রাহ ২/ ৭৭- ৭৮/১ ; তিরমিযী ১/২১৮ )

হাদিসে আরো আছে , “ যে ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে নিতম্বে সহবাস করবে সে লা’নত প্রাপ্ত “ ( আবু দাউদ ২১৬২ , আহমদ ২/ ৪৪৪, ৪৭৯ )

# Sexual intercourse during menstruation and puerperium – ( পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে আর সন্তান জন্মদানের পরবর্তী ৪০ ( ৪৫) দিনের মধ্যে সহবাস )
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নরমাল ডিফেন্স মেকানিজম নষ্ট হয়ে যায় । মহিলাদের প্রজনন অঙ্গের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । একই ঘটনা ঘটে সন্তান জন্মদানের পরবর্তী ৪০-৪৫ দিন । আর এসময়ের সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স প্রজনন অঙ্গ গুলোতে ভয়াবহ ইনফেকশন ঘটায় লোকাল অর্গানিজম ।

স্ত্রীর হায়ে্য ( পিরিয়ড ) চলাকালীন তার সাথে সহবাস করা স্বামীর জন্য হারাম । ( ফথুল কাদীর , ১/২০০ )

আল্লাহ তায়ালা বলেন , “ আর তারা তোমার নিকট হায়ে্য প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করে । তাহলে বলে দাও এটা অশুচি বা কষ্ট । কাজেই তোমরা হায়েয চলাকালীন সময় সহবাস থেকে বিরত থাক । তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাস করবেনা , যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায় । যখন তারা ভালোভাবে পবিত্র হয়ে যাবে , তখন তাদের নিকটে যাও যেভাবে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন । নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারি কে ভালবাসেন এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরও ভালবাসেন । ( সুরা আল বাকারাহ ২২২ )

এ প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ ) বলেন , ‘ যদি কোন ব্যক্তি হায়েযাহ নারীর সাথে বা তার নিতম্বে সহবাস ( এনাল সেক্স) করে , জ্যোতিষীর নিকট যায় আর জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করে তাহলে সে মুহাম্মদ (সাঃ ) এর প্রতি যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি কুফরি করল । “

তাহলে এই হল চারটি বিধি নিষেধ ।

উপসংহার হিসেবে কয়েকটি কথা বলি । জাতি হিসেবে আমরা হীন মন্যতায় ভোগা জাতি । নিজের দেশ ভাল লাগেনা । গরীব । নিজের ভাষা ভাল লাগেনা । টিভি , এফ,এম রেডিওতে বাংরেজি ভাষায় কি যে কথা বলি আমরা নিজেদেরই বুঝতে কষ্ট । নিজের সংস্কৃতি ভাল লাগেনা । সেদিন দেখলাম এক টিভি চ্যানেল নাম ৭১ , ফিমেল নিউজ প্রেজেন্টার শার্ট , কোর্ট পরে খবর পড়ছেন । এটা কি আমাদের নতুন সংযোজিত বাঙ্গালী সংস্কৃতি কিনা জানিনা । আমাদের নিজেদের ধর্ম ও ভাল লাগেনা । দু কলম পড়াশুনা করে অনেকেই নিজের ধর্মকে মৌলবাদী আখ্যা দিয়ে নামাজ , রোজাকে শিকেয় তুলে রেখেছেন । আমাদের ধর্ম বাস করে ঈদের বিপণী বিতানে , পোশাক কেনার মধ্যেই আমাদের ঈদ । কোরবানির সময় বড় ধার্মিকতার পরিচয় দিয়ে লাখ টাকার গরু , উট কুরবানি দিই নাকি জবাই দেই । শ্বশুর বাড়ি থেকে কি পশু পাঠাল কুরবানি দেয়ার জন্য তার হিসেব করি ।

এই অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে নিজের পরিচয় নিয়ে গর্ব করার মানুষিকতা তৈরি হোক আমাদের । জন্মসূত্রে পাওয়া মুসলিম পরিচয় কে শানিত করে প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হয়ে উঠার তৌফিক আল্লাহ যেন আমাদের দেয় । ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে বাংলাদেশি প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হোক আমাদের পরিচয় ।

[ লেখকঃ ডাঃ নার্গিস পারভীন, তথ্যসূত্র, প্রকাশিত লেখার দায়বদ্ধতা একান্তই লেখকের ]



মন্তব্য চালু নেই