ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাড়ে তিন মাস ধরে বন্ধ

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। বাসচাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের অবরোধ-হরতালকে কেন্দ্র করে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ইবির প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী দীর্ঘ সেশনজটে পড়েছেন। এমনকি চার মাস আগে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও প্রশাসন তাদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ক্যাম্পাসের ভাড়া করা বাসের চাপায় বায়োটেকনোলজি বিভাগের টিটু নামের এক শিক্ষার্থী মারা যান। তার ওই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এক মাসেরও বেশী সময় বন্ধ থাকার পর ৭ জানুয়ারি ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিন ২০ দলীয় জোটের দেশব্যাপী অবরোধ-হরতাল সমর্থনে ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুনরায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন।

প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা গেছে, গত সাত মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৪০ দিন। ফলে অগের সেশনজটের সঙ্গে আরও তিন মাসের সেশনজট যোগ হয়েছে। বিগত বছরগুলোর বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাস বন্ধ ও অস্থিতিশীল অবস্থার কারণে বিভাগ ভেদে তিন থেকে চার বছরের সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে।

ইংরেজি বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও ক্যাম্পাস থাকে অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় ক্যাম্পাস একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে পাঁচ বছর ধরে পড়ালেখা করেও তৃতীয় বর্ষের গণ্ডি পেরোতে পারিনি।’

আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সারা পৃথিবীর মধ্যে আমরাই এখন সবচেয়ে সিনিয়র ছাত্র। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফ্রিকার দেশগুলোতেও আমাদের বর্ষের শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বহু আগে শেষ হয়ে গেছে। অথচ আমরা এখনো মার্স্টাস পরীক্ষা শেষ করতে পারিনি।’

তিনি সেশনজটের জন্য প্রশাসনের ক্যাম্পাস পরিচালনায় ব্যর্থতা এবং বিভাগের শিক্ষকদের উদাসীনতাকে দায়ী করেন।

ইবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ইকবাল হোছাইন বলেন, ‘গত বছরের ৩০ নভেম্বর বাসচাপায় এক শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় প্রশাসন আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়। মাঝে ৭ জানুয়ারি আবাসিক হল খুলে দিয়ে এক দিনের মাথায় আবারও জুজুর ভয় দেখিয়ে হল বন্ধ করে দেয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ শিক্ষক নেতা অভিযোগ করেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এ ধরনের একাডেমিক বিপর্যয়ে ক্যাম্পাস আর পড়েনি। বর্তমান প্রশাসনের মতো অযোগ্য ও অকার্যকর কোনো প্রশাসন আমরা পাইনি।’

শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘বিগত ছয় বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের লাশ পড়েছে। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত এক দশকেও সংঘর্ষ-সহিংসতায় কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যুতো দূরের কথা গুরুতর আহতও হয়নি।’

প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন রেখে ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘কেন আমাদের ক্যাম্পাসে সেশনজট হবে। এটা সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজিরবিহীন ব্যর্থতা।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ক্যাম্পাসের ভৌগলিক অবস্থান এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাবে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ ক্যাম্পাস দ্রুত খুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেশনজট কমিয়ে আনতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই