ইসলামি দলগুলোও নামছে আন্দোলনে

​ইসলামপন্থি দলগুলোও বিএনপির সাথে সাথে ঈদের পর আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত ও জোটের বাইরের সব ইসলামি দলই জাতীয় ও ধর্মীয় ইস্যুগুলোতে নতুন করে মাঠে নামবে। রমজান মাসে ইফতার মাহফিল কেন্দ্রিক দলগুলোর মধ্যে আন্দোলন প্রশ্নে অভ্যন্তরীণ এবং পারস্পরিক আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে ঈদের পর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার যুক্তি দেখিয়ে দীর্ঘদিন চুপসে থাকা ইসলামপন্থী এসব দল এখনো সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব বাধার কথা মাথায় রেখেই মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব দলের অনেকে মনে করছেন, বর্তমান সরকার নৈতিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। ৫ জানুয়ারির ভোটারশূন্য নির্বাচনের পর ৭ মাস হতে চললেও নতুন নির্বাচনের উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করার কথা বলে বেড়াছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে সরকার ও সরকারি দলের দুর্বলতা আরো প্রকটভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। তারা মনে করছেন, দেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি শুধু চরমভাবে বিরক্তই নয়, তারা বর্তমান শাসনতান্ত্রিক অবস্থার পরিবর্তনও চায়। একই সাথে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা বিশ্বাস তুলে দেয়াসহ ধর্মীয় বিষয়গুলোতে সরকারের হস্তক্ষেপের দিকও এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ মেনে নিতে পারছে না। ফলে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে। জনমত ব্যাপকভাবে বিপক্ষে থাকা এবং নৈতিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল অবস্থানে থাকার কারণে বর্তমান সরকার আন্দোলন দমনে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগের মতো ব্যবহার করতে পারবে না বলেই মনে করছেন ইসলামপন্থী দলগুলোর অনেকে। তাদের মতে, আগের মতো পুলিশ-র‌্যাবকে রাস্তায় আন্দোলন দমনে ব্যবহারের চেষ্টা সরকারের জন্য এবার হিতে বিপরীত হতে পারে। আগের ধারাবাহিকতায় সরকার আন্দোলন দমনের নীতি অবলম্বন করার চেষ্টা করলে সেটি বুমেরাং হতে পারে। এতে প্রচণ্ড গণবিস্ফোরণও ঘটতে পারে। ইসলামপন্থী দলগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপ করে আরো জানা যায়, ২০ দলীয় জোটভুক্ত ইসলামি দলগুলো জোটের কর্মসূচিতে আন্দোলনে অংশ নেবে। পাশাপাশি জোটের বাইরের দলগুলো প্রাথমিকভাবে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। পরিস্থিতির আলোকে সব ইসলামি দল সমন্বিত কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার ব্যাপারে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় ও ধর্মীয় ইস্যুতে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে বর্তমান সরকারের পতন এবং সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আন্দোলনকে লক্ষ্যে পৌঁছানোই হবে সবার একক লক্ষ্য। ঈদের পর পরই বেশ কয়েকটি ইসলামি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম, মজলিসে শূরা বা নির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই সব বৈঠকেই আন্দোলনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জোট মহাজোটের বাইরে থাকা বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ঈদের পর বৃহত্তর আন্দোলনের ব্যাপারে আমাদের ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে আলাপ আলোচনা হয়েছে। রমজানে ইফতার মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিভিন্ন দলের নেতাদের মধ্যে এ বিষয়ে পারস্পরিক আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন হবে ইসলামি ইস্যুর পাশাপাশি জনগণের ভোটের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়ও আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। বরাবরই আলাদাভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালনকারী চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামি আন্দোলনের ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারি মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম একই দলের ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা এ টি এম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, আমাদের নেতারা রমজানে সব জায়গায় বলেছেন, রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ঈদের পর অন্যায় অসত্য ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানা সরকার জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ঘাড়ে চেপে বসে আছে। তারা রাতকে দিন আর দিনকে রাত বানাচ্ছে। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতেই জুলুম ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমরা মাঠে নামবো। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, দেশের বর্তমান যে সঙ্কটাপন্ন ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা তা নিয়ে ইসলামি দলগুলো গভীরভাবে ভাবছে। এই অবস্থায় করণীয় নিয়ে দলগুলোর নেতাদের মধ্যে আলাপ আলোচনাও চলছে। ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের পর বিএনপি জোটের আন্দোলনের যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেটা কতটুকু কী হবে তা নির্ভর করবে প্রধান দল বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠে নামার ওপর। তিনি বলেন, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের একটি প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করা হচ্ছে অতি দ্রুত এ ব্যাপারে একটি ফল পাওয়া যাবে।



মন্তব্য চালু নেই