‘ইসরায়েল একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’

পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের আধিপত্যবাদী আক্রমন চলছেই। ইসরায়েলের মধ্যবর্তী ফিলিস্তিন শহরে অবস্থানরত ফিলিস্তিনি নেতাদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে পরবর্তী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে। নাজারত, জাফা, লোদ, রামলি, তাইবেহ, শাখিন, রাহাত, কাফেল কাশেম এবং অন্যান্য শহরগুলোতে ইসরায়েলি পুলিশ বাহিনী ফিলিস্তিনিদের উপর গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার দিনটিকে ফিলিস্তিনিরা ক্রোধের দিবস হিসেবে পালন করেছে। এবং সেই দিবসেও ইসরায়েলি পুলিশ মিছিলের উপর লাঠিচার্জ এবং কাদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। নাজারতের সেই মিছিলে শতাধিক প্রতিবাদকারী আহত হয়। ২০ বছর বয়সী প্রতিবাদকারী ডিমা ফেনি জানান, ‘এখানে কি ঘটছে তা আমরা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চাই। এই ধ্বংসযজ্ঞ এবং বৈষম্যের শেষ হওয়ার দরকার। আমরা ভুলে যাইনি, এখানে কি ঘটেছিল। আমরা জানি ইসরায়েল যেকোনো মুহূর্তে আমাদের উপর চড়াও হতে পারে।’ এই ডিমা ফেনির এক ভাইকেও ১৫ বছর আগে ইসরায়েলি পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছিল।

গত শুক্রবার একই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা বেশ কয়েকটি শহরে ছড়িয়ে যায়। এমনকি শনিবারেও একই পরিস্থিতি বিরাজ করে। নাজারাতে তিন সন্তানের জননীকে ইসরায়েলি নিরাপত্তাকর্মীরা গুলি করে হত্যা করেছে, এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পরলে অসন্তোষ দ্রুত ছড়িয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, ইশরা আবেদ নামের ওই নারী ইসরায়েলি সেনাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তীব্র চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শেষমেষ তাকে ঘিরে থাকা ইসরায়েলি সেনারা গুলি করে হত্যা করে তাকে। এবিষয়ে ইসরায়েলের এক সাংসদ বলেন, ‘পুলিশ এবং মিডিয়া ওই আরব নাগরিকের হত্যাকাণ্ডকে আরও ত্বরান্বিত করছে।’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার রাতে ঘোষণা করেন যে, ইসরায়েল এবং জেরুজালেমে অনতিবিলম্বে অতিরিক্ত দুই হাজার প্যারামিলিটারি পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হবে। কিন্তু কোনো প্রকার প্রকাশ্য ঘোষণা ছাড়াই ইসরায়েলি গোপন পুলিশ যে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে সেব্যাপারে নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বর্তমানে ফিলিস্তিনি নেতারা খুবই ভয়ের মধ্যে তিন কাটাচ্ছেন। কারণ তাদের আশঙ্কা, ২০০০ সালের অক্টোবর মাসের মতো কোনো ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে যেকোনো সময়। সেই সময় ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যা ১৩জন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে নির্বিচারে হত্যা এবং শতাধিক ব্যাক্তিকে আহতও করেছিল। সেই ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রথম ইন্তিফাদার পর দ্বিতীয় ইন্তিফাদার জন্ম হয়। নাজারতের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ জেইদান কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেন, ‘ইসরায়েলে সেনা সংস্কৃতি বেশ কট্টর। আমাদেরকে শুধু ইসরায়েল রাষ্ট্রই নয়, সেই রাষ্ট্রের জনগণও আমাদের নাগরিক হিসেবে দেখার চেয়ে শত্রু হিসেবেই বেশি দেখে।’

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলে বেশ কয়েকটি জনসমাবেশ থেকে ‘আরবদের মৃত্যু চাই’ শীর্ষক স্লোগান দেয়া হয়। এমনকি গত সপ্তাহে জেরুজালেমের মেয়র নির বরকত অস্ত্রধারী ইসরায়েলিদের অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশও দেন। এমন অবস্থায় আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি সেনা অভিযানকে কেন্দ্র করে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যে ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে তা প্রশমনে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করে সাংঘর্ষিক অবস্থাটিকে আরও উস্কে দেয়া হচ্ছে বলেও অনেকেই মনে করছেন।



মন্তব্য চালু নেই