ইমরানের ‘গণেশ উল্টে’ গেল

সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে পড়লেও অন্যান্য সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলের সমর্থন পাচ্ছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

তিন বছর আগে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর পর ইমরানকে ‘সরকারের এজেন্ট’ আখ্যায়িত করা বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এখন উল্টো তার সমর্থন করছেন। জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে ইমরানের এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্টে গেল তার গণেশ।

অপরদিকে ইমরানকে ‘সুবিধাবাদী’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর এখন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের সমালোচনায় মুখর আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। বিপরীতে গণজাগরণ বিরোধী এবং বিএনপি সমর্থকদের মধ্য থেকে এখন দেখা যাচ্ছে ইমরানের পক্ষে দাঁড়াতে।

হেফাজতের পক্ষে দাঁড়িয়ে গণজাগরণ আন্দোলনের বিরোধিতাকারী কলামিষ্ট ফরহাদ মজহারও তার পক্ষে লিখেছেন। ফরহাদ মজহার লিখেছেন- ‘ইমরান এইচ সরকারকে সমর্থন করুন। তার পাতায় আরও বেশি বেশি করে লাইক দিন।”

যুক্তরাষ্ট্রে জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্রের মামলায় বিএনপি ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গত শনিবার গ্রেপ্তারের পর ইমরান ফেইসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, “শফিক রেহমানের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে আমি একমত নই। ভিন্নমতের হলেই তাকে দমন করার যে নোংরা রাজনৈতিক অপকৌশল, এর একটা অবসান চাই।”

প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয় তখন ইমরানকে ‘মিথ্যাবাদী ও সুবিধাবাদী’ আখ্যায়িত করে তাকে বর্জনের আহ্বান জানালে একে ‘স্বাধীন মত প্রকাশের হুমকি’ বলে প্রতিক্রিয়া জানান গণজাগরণের মুখপাত্র। শফিক রেহমানের পক্ষে ইমরানের প্রতিক্রিয়াকে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন ফেইসবুকে লিখেছেন- “পিপীলিকার পাখা উঠে মরিবার তরে।”

তিনি লিখেছেন, “ইমরান এখন যুদ্ধাপরাধী ও খালেদা জিয়ার ভাষায় বর্তমান সরকারকে আক্রমণ করে নিজের স্বরূপ উন্মোচন করেননি; কার সুতার টানে পুতুল নাচ হচ্ছে, তা-ও কিন্তু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।”

এদিকে জয় যেখানে ইমরানকে বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন, তখন ইমরানের অবস্থানকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রে শফিক রেহমানের মুক্তি দাবিতে এক কর্মসূচিতে বক্তব্য এসেছে ‘তারেক পরিষদ আন্তর্জাতিক কমিটি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বাদলের কাছ থেকেও।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল তার ফেইসবুক পাতায় লিখেছেন- “ইমরান সরকারকে আমরা কয়েকজন আনফ্রেন্ড করেছিলাম গণজাগরণ মঞ্চ শুরু হওয়ার দুই/তিন মাসের মধ্যেই। সেদিনই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম রাজনৈতিক ও নৈতিক মানদন্ডে এই লোক কতটা অসৎ!”

বিএনপি সমর্থকদের পক্ষে দাঁড়ানোর বিষয়ে ইমরানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গণমাধ্যমের কাছে ইমরান বলেন, “নিজেদের পক্ষে গেলে সমর্থন, আর বিরুদ্ধে গেলে বিরোধিতা- এটা আমাদের রাজনীতির পুরনো সংস্কৃতি। “আমরা সব ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি সবার সমর্থন থাকবে, এটাই আমি আশা করি। কেবল নিজেদের পক্ষের বিষয়গুলোতে নয়।”

এদিকে বিএনপিপন্থি শিক্ষক কলামিষ্ট আসিফ নজরুল গতকাল মঙ্গলবার তার ফেসবুকে লেখেছেন, “সরকার কি ইমরান সরকারকে নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছেন?

তিনি তার সম্পূর্ণ পোস্টে বলেছেন, “ইমরান যা ইচ্ছে বলতে পারে। কিন্তু তাই বলে জয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা? ইমরান এইচ সরকারের এতো সাহস! বিশ্বাস হয় না। মনে হচ্ছে পুরাটাই নাটক।”

“ইমরানকে দিয়ে নতুন পলিটিকেল পার্টি (রাজনৈতিক দল) খুলানোর চিন্তা থাকতে পারে! এই চিন্তাটা সম্ভবত যারা বাংলাদেশকে পেছন থেকে চালায় তাদের! তাই সাবধান!!”

রংপুর মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগ নেতা ইমরান ২০১৩ সালে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক হিসেবে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্বে আসেন।



মন্তব্য চালু নেই