ইতিহাসের শীর্ষ ১০ ধনবান

ক্ষুধার্তরা নাকি কালে ভদ্রে অন্যের খাওয়া দেখে আনন্দ পান। আর আমরা যারা প্রায় সম্পদহীন লোক, তারা মাঝেমধ্যে সম্পদশালীদের সম্পত্তির খোঁজ-খবর নিয়ে বিশেষ মজা পাই। এজন্যই প্রতিবছর ফোর্বেস ম্যাগাজিনের করা ‘বিশ্বের শীর্ষ ধনী’র তালিকা পড়ি।

কার সম্পদ কত বেশি, কে কত বিলিয়ন ডলারের মালিক, কার বাড়িটা রাজপ্রাসাদের মতো, কার ব্যক্তিগত বিমান বা প্রমোদতরী আছে- এ নিয়ে আমাদের অনুসন্ধিৎসা বরাবরই বাড়াবাড়ি রকমের বেশি।

ফোর্বেস ম্যাগাজিন তো শুধু বর্তমান সময়ের শীর্ষ ধনীদের তালিকা করে, প্রতিবছর সেটা দেখে আর মন ভরে না। জানতে চাই, সর্বকালের সেরা ধনীদের বিষয়ে। আমার মতো যারা এ বিষয়ে জানতে চান, তাদের জন্য এ লেখা।

১. মানসা মুসা

সম্রাট মানসা মুসা (১২৮০-১৩৩৭) ছিলেন ১৪ শতকের মালি সাম্রাজ্যের একজন মানসা বা সম্রাট। মালি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সান্দিয়াতা কেইতার ভাগ্নে ছিলেন তিনি। ১৩০৭ সালে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি প্রথম আফ্রিকান শাসক যিনি ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। তার সম্পদ এত বেশি ছিল যে তা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

প্রচলিত আছে, ১৩২৪ সালে তিনি যখন হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যান, তখন তার হজবহরের ৬০ হাজার লোক ছিল শুধু রসদপূর্ণ ব্যাগ বহনের জন্য। সঙ্গে ছিল ৫০০ গোলাম, যারা প্রত্যেকে একটি করে সোনার দণ্ড বহন করছিল। ৮০ থেকে ১০০টি উট ছিল, যেগুলো প্রত্যেকটি প্রায় ১৪০ কেজি সোনা বহন করছিল। তার এই যাত্রাপথে তিনি প্রায় কয়েক শত কোটি টাকা মূল্যের সোনা বিতরণ করেছিলেন। কায়রোতে তিনি এত বেশি সোনা বিতরণ করেছিলেন যে, বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানে সোনার দাম অনেক কম ছিল।

২. অগাস্টাস সিজার

অগাস্টাস সিজার (৬৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ-১৪ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন বা ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমান বাজারদরে বিশ্বের মোট সম্পদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মালিক ছিলেন তিনি। পুরো মিসর তার নিজস্ব সম্পদের তালিকায় ছিল।

৩. সম্রাট শেনজেন

শেনজেন ছিলেন চীনের সং সাম্রাজ্যের সম্রাট (১০৪৮-১০৮৫)। তার সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা সম্পদের পরিমাণ হবে বর্তমান বিশ্ব জিডিপির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের সমান।

ওই যুগে নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও বিশাল অংকের কর আদায়ে সফলতা ছিল তার অর্থের মূল উৎস। বিপুল সম্পদের মালিক এ সম্রাট জীবিত ছিলেন মাত্র ৩৭ বছর।

৪. সম্রাট আকবর

জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর (১৫৪২-১৬০৫) ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। আকবরের সময়ে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে যে সম্পদ ছিল তা হবে বর্তমান বিশ্ব জিডিপির ২৫ শতাংশের সমান। তার রাজস্ব ব্যবস্থাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা মনে করা হয়।

বাবা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেণ। বৈরাম খানের তত্ত্বাবধানে তিনি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাঁকে সরিয়ে আকবর সব কিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। কিন্তু আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তারের কাজ চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে।

৫. জোসেফ স্টালিন

জোসেফ স্টালিন (১৮৭৮-১৯৫৩)রুশ সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯২২ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের এই শাসক সরাসরি অর্থ-সম্পদের মালিক না হলেও দেশের সমুদয় সম্পদের ওপর একচ্ছত্র ক্ষমতার কারণে সর্বোচ্চ ধনীদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তিন দশকের বেশি সময় দোর্দণ্ড প্রতাপে রাশিয়া শাসন করা স্টালিনের অধীনে সোভিয়েত ইউনিয়নের ৭ লাখ ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ ছিল।

৬. অ্যান্ড্রু কার্নেগি

১৮৩৫ সালেস্কটল্যান্ডের নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন অ্যান্ড্রু কার্নেগি। জীবনের শুরুতে ক্ষুধা ও দারিদ্র ছিল তার পরিবারের নিত্যসঙ্গী। তার বাবা পরিবারের সবাইকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এখানে সুতার কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু। দৈনিক ১২ ঘণ্টা করে সুতার কাজ করতেন কার্নেগি। এরপর সপ্তাহে আড়াই ডলার বেতনে টেলিগ্রাফ বাহকের কাজ শুরু করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তার বেতন সপ্তাহে ৪ ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি ওই কোম্পানির অনেক ওপরের অবস্থানে ওঠেন।

এভাবে ধীরে ধীরে একজন বিনিয়োগকারীতে পরিণত হন। অল্প অল্প বিনিয়োগ করেন অ্যাডামস এক্সপ্রেস কোম্পানিতে। এরপর কার্নেগি তার এক বন্ধুকে সাহায্য করতে তার গাড়ির ব্যবসার শেয়ার কেনেন। এই সুযোগে কার্নেগি তার সব টাকা রেলওয়েতে পুনর্বিনিয়োগ করেন। দেশে গৃহযুদ্ধ লাগলে ওই সময় তিনি যেসব বিনিয়োগ করেছিলেন তাতে আরো লাভবান হন এবং তার ভাগ্য খুলে যায়।

১৯০১ সালে নিজের মালিকানাধীন ইউএস স্টিল কোম্পানি ৪৮ কোটি ডলারে জেপি মরগ্যানের কাছে বিক্রি করেন। বর্তমান বাজারদরে অ্যান্ড্রু কার্নেগির সম্পদের পরিমাণ হবে ৩৭ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। ১৯১৯ সালে মারা যান অ্যান্ড্রু কার্নেগি।

৭. জন ডি রকফেলার

জন ডি রকফেলার (১৮৩৯-১৯৩৭) বিখ্যাত মার্কিন শিল্পপতি, উদ্যোক্তা ও জনদরদী। তিনি ১৮৬৩ সালে ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। তিনি স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম আমেরিকান হিসেবে ১ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তির মালিক হন তিনি।

১৯১৮ সালে তার মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেই সময়ের জিডিপির ২ শতাংশ। বর্তমান বাজারদরে তার মোট সম্পদের মূল্য ৩৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার।

. সম্রাট অ্যালান রুফুস

ব্রিটিশ সম্রাট রুফুস (১০৪০-১০৯৩) ছিলেন নরম্যান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট উইলিয়ামের ভাগনে।

তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড, যা ছিল তৎকালীন ইংল্যান্ডের মোট জিডিপির শতকরা ৭ ভাগ। এটি বর্তমান সময়ের হিসাবে ১৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

৯. বিল গেটস

টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস (জন্ম: ১৯৫৫)। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৭ হাজার ৮৯০ কোটি ডলার। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় তিনি বর্তমানে বিশ্বের সেরা ধনী। টাইম ম্যাগাজিনের করা সর্বকালের সেরা ১০ ধনীর তালিকার একমাত্র জীবিত সদস্য তিনি। অর্জিত সম্পদের ৯৫ শতাংশই জনহিতকর কাজের জন্য দান করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

১০. চেঙ্গিস খান

প্রধান মঙ্গোলিয়ান সামরিক নেতা। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি অন্যতম বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ। তিনি মঙ্গোল গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করে মঙ্গোল সম্রাজ্যের (১২০৬ – ১৩৬৮) গোড়াপত্তন করেন। নিকট ইতিহাসে এটিই ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সম্রাজ্য। চীন থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তার সাম্রাজ্য। তার অধীনে থাকা সাম্রাজ্যভুক্ত জমিই তার সম্পদের মূল উৎস ছিল। তবে এর বাজারদর সুনির্দিষ্ট করে পরিমাপ করা যায়নি।



মন্তব্য চালু নেই