ইটভাটায় ‘পুড়িয়ে মারা’ কিশোর জীবন্ত উদ্ধার!

সংবাদ সম্মেলন করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আবদুল মজিদ দাবি করেন তাঁর ছেলে ইসরাফিলকে (১৫) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ করেন ছেলেকে অপহরণ করে ভারতে পাচার করা হয়েছে নয়তো ইটভাটায় পুড়িয়ে মারা হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলাও করেন তিনি।

সেই ইসরাফিলকে পাওয়া গেল গাজীপুরে মজিদের বোন অর্থাৎ ইসরাফিলের ফুপুর বাড়িতে! বেশ সুস্থ মেজাজেই ছিল ইসরাফিল!

এ ঘটনায় আবদুল মজিদের বোন মরিয়ম আক্তার সাথী (৪০) ও মরিয়মের মেয়ে মর্জিনাকে (২৬) আটক করেছে পুলিশ।

তিনি যে দাবি করেছিলেন
ছেলে ইসরাফিল নিখোঁজ এ দাবি করে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলার তারানিপুর গ্রামের আবদুল মজিদ। নিজেকে ‘বালু শ্রমিক’ পরিচয় দিয়ে তিনি জানান, নদী থেকে বালু তুলে তিনি ইটভাটায় বিক্রি করেন। কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম একটি ইটভাটার মালিক।

তিনি মজিদের কাছ থেকে বালু ক্রয় করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘পাওনা দুই লাখ ৫৫ হাজার টাকা আদায়ের জন্য গত ২ ফেব্রুয়ারি আমি আমার ছেলে ইসরাফিলকে চেয়ার‍ম্যানের ইটভাটায় পাঠাই।’ এর পর থেকেই ইসরাফিল নিখোঁজ বলে তিনি দাবি করেন।

আর যা হলো
গাজীপুরের শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার তারানিপুর গ্রামের আবদুল মজিদ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শ্যামনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে তাঁর ছেলে ইসরাফিলকে গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অপহরণ করে প্রতিপক্ষরা। অপহৃত ইসরাফিলকে ইটভাটায় পুড়িয়ে হত্যা বা ভারতে পাচার করা হয়েছে। মামলায় কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ আবদুর রহিম, তাঁর বড় ভাই শেখ আবদুর রহমানসহ আট ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। থানায় মামলা দায়েরের আগে তিনি সাতক্ষীরা জেলার আমলি আদালতে ওই অভিযোগ দায়ের করেন।

ওসি আসাদুজ্জামান আরো জানান, ইসরাফিল শ্রীপুরে ফুপুর বাসায় আত্মগোপন করে আছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার গভীর রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া গ্রামের আবদুস ছামাদের বাড়িতে অভিযান চালায় শ্রীপুর মডেল থানার পুলিশ। এ সময় ওই বাড়িতে ইসরাফিলকে পাওয়া যায়। ইসরাফিলকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে মামলার বাদী মজিদের ছোট বোন মরিয়ম আক্তার সাথী ও মরিয়মের মেয়ে মর্জিনাকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা ওই বাড়িতে ভাড়া থাকে। স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করে উভয়েই।

এ ব্যাপারে আটক মরিয়ম ও মর্জিনা জানান, তাঁরা প্রায় দেড় বছর ধরে শ্রীপুরের আবদুস ছামাদের বাড়িতে ভাড়া আছেন। গত দুদিন আগে ইসরাফিল তাঁদের বাসায় এসেছে। তবে মামলা সংক্রান্ত ঘটনার বিষয়ে তারা কিছুই জানে না।

মামলায় অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শেখ আবদুর রহিম বলেন, ‘বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থী রেজাউল করিমের সমর্থক ছিল আবদুল মজিদ। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে রেজাউল করিম তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হয়। তাঁর সুনামে ঈর্ষান্বিত হয়ে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আবদুল মজিদের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা দায়ের করানো হয়েছে।’ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মজিদের সংবাদ সম্মেলনের পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে সেদিনও নিজেকে নির্দোষ দাবি করে একই কথা বলেন চেয়ারম্যান শেখ আবদুর রহিম।

এদিকে এ ব্যাপারে বুধবার ইসরাফিলের বাবা আবদুল মজিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। মজিদের ব্যবহৃত ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।



মন্তব্য চালু নেই