ইউরোপীয় পার্লামেন্টকে সামলাতে প্রস্তুত সরকার

মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার সংক্রান্ত উপ-কমিটির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার রাতে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। এই প্রতিনিধিদল রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে আলাপ করতে চাইলে সে বিষয়ে সরকার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তাদের নিয়মিত সফর। প্রতি বছরই তারা তাদের মানবাধিকারসহ বিভিন্ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সফর করে। এটা তাদের কাজের একটা অংশ।’

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ধারাবাহিকভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। দেশে-বিদেশে সকলেই বলছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই সফর মূলত বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে কেন্দ্র করে এবং বৈশ্বিক এই দলটির সফরে মূলত রাজনৈতিক বিষয়ই প্রাধান্য পাবে।

এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম  বলেন, ‘তারা যদি রাজনৈতিক বিষয়ে আলাপ করতে চায়, তবে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তাদের সঙ্গে সব তথ্য শেয়ার (বিনিময়) করা হবে। কারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত তা জানানো হবে।’

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্ভব নয়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এই বিষয়ে  বলেন, ‘ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দলটি যাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়, তাদের একটি তালিকা পাঠিয়েছে। ওই তালিকাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরকারি দলটি সাক্ষাৎ করতে চাওয়ার কোনো তথ্য নেই।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দলটি যখন ঢাকা সফর করবে তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈশ্বিক একটি সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের পথে থাকবেন। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দলটির সাক্ষাৎ হবে না। তবে আমার (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে।’

কূটনৈতিক একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সফরকারী দলটির পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে। শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হতেও পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ-হরতালে বাংলাদেশের চলমান সহিংসতা সম্পর্কে একাধিক তথ্যচিত্র প্রস্তুত করেছে সরকার। ওই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত চলমান সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত। পাশাপাশি পেট্রোলবোমায় নিরীহ মানুষের আহাজারি, নিরীহ মানুষের ওপর বিনা কারণে আক্রমণ, সাধারণ মানুষের প্রাণহানি এবং অসংখ্য মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে।

আরো জানা গেছে, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দলটি নাক গলালে তাদের জানানো হবে, বিএনপি-জামায়াত জোট বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের মদদ দিচ্ছে। তারা নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সফরকারি দলটির কাছে জাতিসংঘের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের তথ্য জানাবে সরকার।

প্রসঙ্গত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একাধিকবার বিবৃতি দিয়ে বিএনপির প্রতি আহবান জানায়, জামায়াতে ইসলামিকে বাদ দিয়ে রাজনীতি করতে। এদিকে একাধিকবার গণমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশের চলমান সহিংসতা সম্পর্কে নিন্দা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সর্বশেষ ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরো মায়াদু বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। চলমান সহিংসতা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জনজীবনকে প্রভাবিত করছে। যে কোনো ধরনের সহিংসতার বিপক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন—এই তথ্য পুর্নব্যক্ত করে পিয়েরো মায়াদু প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘অনতিবিলম্বে সংলাপের আহবান জানান।’

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মূলত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দলটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে আসছে। পাশাপাশি দলটি মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার ও সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার সংক্রান্ত উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ইলিনা ভেলেন্সিয়ানো চার সদস্যের দলটির নেতৃত্ব দেবেন। বাকিরা হচ্ছেন—ক্যারোল কারস্কী, ক্রিস্টিয়ান ড্যান প্রিদা ও জোসেফ ওয়াইডেনজার।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিভিন্ন দলের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলটির।



মন্তব্য চালু নেই