ইঁদুরের শরীরে যে রোগগুলো ছড়িয়ে দিয়েছে মানুষ!

এই যে বিজ্ঞানীরা প্রায়ই মানুষের নতুন নতুন সব রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি ও ঔষধ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, সেটার প্রক্রিয়াটা কি কেউ কি তা জানেন? না না, রোগকে পরীক্ষার জন্যে গিনিপিগ হিসেবে অবশ্যই কাউকে না কাউকে ব্যবহার করে থাকেন তারা। তবে সেই কেউটা কিন্তু মানুষ নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের নানারকম রোগ-ব্যধির প্রতিকার বের করার জন্যে ইঁদুরের ওপর নির্ভর করেন বিজ্ঞানীরা। নিজেদের মতন করে কিছু টিস্যু, জীন আর অন্যান্য ব্যাপার-স্যাপার এদিক ওদিক করে নিয়ে ইঁদুরের শরীরকে অনেকটাই মানুষের কাছাকাছি কিছু একটায় নিয়ে যান তারা। যে পর্যায়ে দেখতে ইঁদুরের মতন হলেও শরীরটা অনেকটাই মানুষের মতনই প্রতিক্রিয়া জানায়। আর তারপর? তারপর সেই ইঁদুরগুলোর ওপর চলে নানারকম গবেষণা। এই গবেষণা প্রক্রিয়ারই প্রথম ধাপটি হচ্ছে ইঁদুরের দেহে মানুষের সেই রোগটি পুরে দেওয়া যেটার প্রতিষেধক খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। আর এমন করেই মানুসের অনেক অসুখকে কালে কালে ইঁদুরের দেহে পুরে দিয়েছে মানুষ। চলুন জেনে নিই এমনই কিছু অসুখের নাম।

১. গনোরিয়া
নেইসেরিয়া গনোরিয়া নামক ব্যাটেরিয়ার মাধ্যমে তৈরি হওয়া এই রোগটি বিশেষ কারণে কেবল মানবদেহেই ছড়াতে পারে। অন্য কোন প্রাণীর ভেতরে এই ব্যাকটেরিয়া স্থায়ী হতে পারেনা, এমনকি ইঁদুরের দেহেও নয়! তবুও গবেষণার স্বার্থে বেশ চেষ্টা চরিত্র করে বারকয়েক বিফল হবার পর অবশেষে ইঁদুরের দেহে রোগটি প্রবেশ করাতে সক্ষম হন তারা। আর এতসব গবেষণার ফলাফল হিসেবে গনোরিয়ার নতুন রকমের ওষুধও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। যদিও, গনোরিয়া রোগ হওয়ার পরিমাণ মানুষের ভেতরে অনেকটাই কম!

২. আলঝেইমারস
মানুষের ভেতরে ভুলে যাওয়ার ঘটনাটা খুবই সাধারণ। তবে সেটা মাঝে মাঝে খুব দ্রুত এসে পুরো জিনিসটাকে একটা রোগের কাতারে ফেলে দেয়, যাকে কিনা বলা হয় আলঝেইমারস। এ রোগের ক্ষেত্রে রোগীর মস্তিষ্কে সবচাইতে বাজেভাবে কাজ করে এপিপি নামক একটি প্রোটিন। আর এই প্রোটিনকেই ইঁদুরের দেহের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে তাদেরকেও আইলঝেইমার্সের রোগী বানিয়ে দেন বিজ্ঞানীরা ( লিস্টভার্স )। এক্ষেত্রে তারা সাহায্য নেন একটি সুইডিশ পরিবারের।

৩. এইচআইভি
সময়ের বিবর্তনে আরো অনেক প্রাণীর সাথে ইঁদুরের শরীরেরও যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে যার ফলে এইচআইভির মতন ভাইরাস তার শরীরে প্রবেশ করা বা তাকে আক্রমণ করা অনেকটাই অসম্ভব। তবে মানুষের শরীরে থাকা এইচআইভি ভাইরাসকে বুঝতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের শরীরেও এটি প্রবেশ করানোর চেষ্টা করেন। প্রথমে মানুষের রোগকে বাধাদানকারী শারীরিক শক্তিকে ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করান তারা আর এরপর এইচআইভি নামের ভাইরাসটিকে ঢুকিয়ে দের ইঁদুরের ভেতরেও।

৪. ফুসকুড়ি
আমাদের গাশে, কপালে কিংবা শরীরের অন্যান্য স্থানে পিম্পল বা ফুসকুড়ি হয় খুব সহজেই। তবে মানুষ বাদে অন্য কোন প্রাণীর কিন্তু এটা খুব বেশি একটা হয়না। তবুও বিজ্ঞানী বলে কথা! বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টার পর এই পিম্পলকে মানুষের শরীর থেকে ইঁদুরের শরীরে নিতে সক্ষম হয়েছেন ( হাইভ ভাইরাল )। এর জন্যে মানুষের কোষকে ইঁদুরের দেহে প্রতিস্থাপন করেন তারা আর তারপর পি. একনের জীবানু প্রবেশ করান।

৫. অন্যান্য…
শুধু কি এই কয়টা রোগ? মানুষের শরীরে দেখা যাওয়া আজ অব্দি যতগুলো রোগ সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর প্রায় সবকটিকেই ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সিজোফ্রেনিয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান করা ইঁদুর, হান্টিংটন ডিজিজ, অটিজমসহ নানারকমের প্রকল্পে ইঁদুরদেরকে বারবার গিনিপিগের স্থানে বসিয়েছেন তারা।



মন্তব্য চালু নেই