আ. লীগের ব্যানার-পোস্টার সরানোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের!

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ হয়েছে সাত দিন হয়ে গেল। কিন্তু সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীর সড়ক ও অলিগলিতে লাগানো সব বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার এখনও অপসারণ হয়নি। ব্যস্ত সড়কে নির্মিত বেশ কয়েকটি বাঁশের তোরণও যথারীতি দাঁড়িয়ে আছে। মোড়ে মোড়ে ঝুলছে বিশালাকৃতির বিলবোর্ড। সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন নেওয়ার সময় ‘সম্মেলন শেষ হওয়ার পরদিন এগুলো সরিয়ে ফেলার শর্ত’ দেওয়া হলেও মানা হয়নি। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন নিজ উদ্যোগে এগুলো অপসারণ করছে।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

যাবতীয় ব্যয়ও বহন করছে সিটি করপোরেশন। এ কাজে লাগানো হয়েছে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। মূল কাজ ফেলে তারা দলীয় ব্যানার-পোস্টার অপসারণের জন্য বেশি সময় দিচ্ছে। তবে কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ নেতারা এসব বিলবোর্ড ও ব্যানার অপসারণে বাধা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন হয় ২২ ও ২৩ অক্টোবর; রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আইইবি মিলনায়তনে। সম্মেলন উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, সড়কদ্বীপ, প্রবেশমুখে তোরণ নির্মাণ, ব্যানার, ফেস্টুন স্থাপন, লাইটিং ও সাজসজ্জার অনুমোদন দেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এই অনুমোদনের শর্তাবলীও ছিল প্রায় অভিন্ন।

গত ৩ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দেওয়া অনুমোদনপত্রে দেখা গেছে, সাতটি শর্তে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে চার নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় কাউন্সিল সমাপ্তির পরবর্তী দিনের মধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সাজসজ্জার উপকরণগুলো অপসারণ করতে হবে।’ পাঁচ নম্বর শর্তে বলা হয়, ‘হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা থাকায় ফুটওভারব্রিজে কোনও উপকরণ লাগানো/প্রদর্শন করা যাবে না।’

রবিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষাভবন-দোয়েল চত্বর সড়ক (হাইকোর্টের দক্ষিণ গেট), মৎস্যভবন চৌরাস্তা, পুরানা পল্টন মোড় ও ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের মুখে অন্তত চারটি তোরণ এখনও রয়ে গেছে। নির্মিত এসব তোরণ ইতোমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়ায় যেকোনও সময় সড়কের ওপর ভেঙে পড়তে পারে। এছাড়া অসংখ্য ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি রয়েছে।

ফুটওভারব্রিজে নিষিদ্ধ হলেও সম্মেলনের ব্যানার ঠিকই লাগানো হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটওভারব্রিজ ছেয়ে ফেলা হয়েছে ব্যানারে। প্রেসক্লাবের বিপরীতে সেগুনবাগিচার প্রবেশমুখে একটি ভবনের দেয়ালে ঝুলছে বিশাল বিলবোর্ড। পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ চৌরাস্তায় বেশ কয়েকটি বিলবোর্ড রয়েছে। সবগুলোই আওয়ামী লীগের সম্মেলনকেন্দ্রিক।

সম্মেলন শেষ হওয়ার পরও কেন সরানো হয়নি, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপ-কমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম বলেন, ‘২৭ অক্টোবর আমরা সিটি করপোরেশনকে বলে দিয়েছি, এগুলো অপসারণ করে নিতে। আশা করি সেভাবে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

শর্তে বলা আছে আওয়ামী লীগ তাদের ব্যানার পোস্টার নিজে উদ্যোগে অপসারণ করবে। সে ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন কেন করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এত জিনিস রাখার মতো জায়গা আমাদের নেই। এ কারণেই সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছে সরিয়ে নিতে।’

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ না থাকায় শেষ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে এসব অপসারণ করা হচ্ছে। এই অপসারণ কাজ করতে গিয়েও বাধার মুখে পড়ছেন কর্মকর্তারা।

দয়াগঞ্জের বিলবোর্ড প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ওই বিলবোর্ড অপসারণ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বাধা দিয়েছেন। এরপর থেকে ওই বিলবোর্ড ছাড়া অন্যগুলো পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দিয়ে অপসারণ করানো হচ্ছে।’

সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নিজ উদ্যোগে অনেক বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার ইত্যাদি সরানো হয়েছে। বাকিগুলো আমরা অপসারণ করছি। আশা করি শিগগিরই এগুলো অপসারণ সম্ভব হবে।’



মন্তব্য চালু নেই