রাজনৈতিক দলের হিসাব

আ.লীগের ‘কল্যাণে’ সময় পেলো বিএনপি

আয়-ব্যয়ের বিবরণী জমার দেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে এক মাসের সময় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার ইসির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বর্ধিত সময় অনুযায়ী আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিবরণী জমা দেয়ার সময় পাবে দলগুলো। আওয়ামী লীগের আবেদনের প্রেক্ষিতেই এ সময় বাড়ানো হয়েছে বলে ইসি সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর আওয়ামী লীগের ‘কল্যাণেই’ বাড়তি সময় পেলো বিএনপি।

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় চেয়েছিল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পয়লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে। আমরা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছি। একটি মাত্র দল (গণফ্রন্ট) সময় চায়নি, হিসেবও দেয়নি। তাদের আইন লঙ্ঘন করেছে বলে একটি চিঠি দেয়া হবে।’

ইসি সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয় বিবরণী জমা দেয়ার জন্য ছোট দলগুলো সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও ওই বছর সময় বাড়ায়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরের রাজনৈতিক দলের হিসাব জমা দেয়ার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপাসহ ১২টি রাজনৈতিক দল সময় চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসি একমাসের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

ইসি সূত্র আরও জানায়, একমাত্র আওয়ামী লীগের কারণে নির্বাচন কমিশন এক মাসের সময় বাড়াচ্ছে। আর এ সুযোগে বাড়তি সময় পাচ্ছে বিএনপি, জাপাসহ ১২টি রাজনৈতিক দল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ সময় না চাইলে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে কখনোই সময় দিতো না। গত বছরে বেশ কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দল সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করলেও কমিশন সময় বাড়ায়নি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিবছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দলের বার্ষিক লেনদেনের প্রতিবেদন ইসিতে দিতে হয়। পর পর তিন বছর তা দিতে ব্যর্থ হলে নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।

ইসি জানায়, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়ার জন্য আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইসির সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সময় চেয়েছে ১৪ আগস্ট এবং বর্তমানে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) সময় চেয়েছে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত।

এর আগে গত ১৭ জুলাই ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহকারী সচিব রওশন আরা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রাজনৈতিক দলগুলোর বরাবর পাঠানো হয়। ওই চিঠির প্ররিপ্রেক্ষিতে ২৬টি রাজনৈতিক দল সময় মতো হিসাব জমা দিয়েছে।

তবে হাইকোর্ট নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করায় জামায়াতে ইসলামীকে কোনো চিঠি দেয়নি নির্বাচন কমিশন।

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব মুহাম্মদ আবদুল অদুদ জানান, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ২৬টি দল বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে। ৩ আগস্ট জমা দিয়েছে আরো একটি দল এবং ১২টি দল সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। একটি দল হিসাবও জমা দেয়নি আবার সময়ের জন্য আবেদনও করেনি।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আবেদনের ভিত্তিতে সময় বাড়ানো হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। এগুলো বলতে পারবেন কমিশনার।’

সময় বাড়ানো প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয় বিবরণী জমা দেয়ার জন্য এক মাসের সময় দেয়া হবে। চিঠির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে জানিয়ে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

৩১ জুলাইয়ের মধ্যে যেসব দল আয়-ব্যয় বিবরণী জমা দিয়েছে
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( জাসদ), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ( বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), ইসলামী ঐক্যজোট, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ( জাগপা) ও ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন।

সময় চেয়েছে যেসব দল
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ( বিজেপি), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ( বিএনপি), গণফোরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

নির্ধারিত সময়ের বাইরে হিসাব জমা দিয়েছে পিপলস পার্টি । হিসাবও জমা দেয়নি আবার আবেদনও করেনি গণফ্রন্ট।



মন্তব্য চালু নেই