আসছে ভারতীয় গরু : চাঁদা আদায়ে সরকার দলীয়দের চেকপোস্ট

লালমনিরহাটের ১৯৫ কিলোমিটার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই আসছে হাজার হাজার ভারতীয় গরু। এসব গরু সীমান্ত পার করতে ৭ শতাধিক লোক সীমান্ত জুড়ে কাজ করছে। এদের স্থানীয় ভাষায় ডাংগোয়ল বলা হয়। তারা গরু পার করে দিলে বিনিময়ে গরুপ্রতি পেয়ে থাকেন ১-২ হাজার টাকা।

এদিকে, এসব গরু বাংলাদেশের সিমানায় প্রবেশ করলেই পথে পথে দিতে হয় চাঁদা। সীমান্তের ভেতরে বাংলাদেশ অংশের বিভন্ন স্থানে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা চেকপোস্ট বসিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। শধু তাই নয়, এতে জাড়িত রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বর, গ্রাম পুলিশ, ভিডিপি কমান্ডারসহ স্থানীয় প্রশাসনের দালালরা। ফলে তাদের গরু প্রতি চাঁদা দিতে হচ্ছে ২/৩’শ টাকা।

জেলার ২৭টি পয়েন্ট দিয়ে রাতের আঁধারে গরু আনতে গিয়ে গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন যুবক বিএসএফের অমানষিক নিযার্তনের শিকার হয়ে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কাঁটাতারের বেড়াবিহীন এলাকা দিয়ে কিংবা কাঁটাতারের উপর দিয়ে বাঁশের সাহায্যে গরু পার করতে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় ডাংগোয়ালদের। বিনিময়ে তারা গরু প্রতি পেয়ে থাকেন ১ থেকে ২ হাজার টাকা।

জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে বেকার যুবকরা চোরাচালানির মাধ্যমে নিজেদের কষ্ট লাঘবে বেকারত্ব ঘুচানোর চেষ্টা করছেন বলে গরু ব্যবসায়ী রাসেল, উজ্জল, কমিজ, রতন, মানিক, মুকুল বাংলামেইলকে জানিয়েছেন। অথচ ঘরে বসে থেকে ক্ষমতাশীলরা গরু প্রতি ২/৩’শ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন।

লাইনম্যানরা গরু প্রতি করিডোর ফি ৫’শ টাকা ফাঁকি দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন। দহগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় কোন কাটা তারের বেড়া না থাকায় প্রতিদিন ডাংগোয়ালরা অবৈধ পথে যেসব গরু নিয়ে আসছে তাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা।

এছাড়া, ভারত থেকে আনা গরু তিনবিঘা করিডোর দিয়ে পার করার সময় ২০ টাকা নেয়ার বিধান থাকলেও নেয়া হচ্ছে ৬০ টাকা। অন্যদিকে, জেলার পশুর হাটগুলোতে দালালদের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দালাল ছাড়া গরু ও ছাগল বিক্রি করা যাচ্ছে না। এগুলো বিক্রি হওয়ার পর দালালরা ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে জোর করে ১’শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছে। দালালদের মাধ্যমে পশু বিক্রি না করলে বিক্রেতাদের হয়রানি করা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পশুবাহী ট্রাক, নছিমন, ভটভটির চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ বক্সের সদস্যরা, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা জেলার বাইরে থেকে আসা ট্রাক, নছিমন ও ভটভটি থেকে চাঁদা আদায় করছে। শুধু তাই নয়, প্রশাসনের সহায়তায় সরকারদলীয় লোকেরা সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে করিডোর ও বিনা করিডোরে আনা গরু থেকে চাঁদা আদায় করছে।

এক ট্রাক চালক জানান, তিনি ঢাকায় গরু নিয়ে যান। পাটগ্রাম হাট থেকে গরু নিয়ে বের হয়ে কলেজ মোড়ে এলেই পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা গরুবাহী গাড়ি থামাতে বলে। গাড়ি থামালে কাগজপত্র দেখতে চান। কাগজপত্র বের করে দিলে তা না দেখেই সেটি হাতে করে অন্য গাড়ির কাছে চলে যান। পরের গাড়িচালকেরা অবস্থা বুঝে কাগজপত্র আর বের না করে সোজা টাকা ধরিয়ে দিয়ে চলে যান।

গরু কিনতে আসা আমিনুল নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি বড়খাতা হাটে গরু কিনতে এসেছিলেন কিন্তু দালালদের কারণে দু’দিন ঘুরেও গরু কিনতে পারেননি। কারণ, ক্রেতা কোনো পশুর দাম জানতে চাইলে দালালরা এক জোট হয়ে সেই পশুর দাম দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগী কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ না পাওয়া আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’



মন্তব্য চালু নেই