আশ্বাসই যেন শেষ না হয়

গেলে বিস্মিত মিসকিন হাত তুলে আল্লাহর দরবারে বলেছিল, ‘হে আল্লাহ! সারা দিন তোমায় খুঁজলাম কোথায় আর তোমায় পেলাম কোথায়।’ অবস্থানে বসে ব্যবসায়ী নেতা জনাব আকরামের কাছে লোক পাঠিয়েছিলাম শীতবস্ত্র আর দুই-এক বেলা খাবার চেয়ে। বড় অসৌজন্য দেখিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আজ ২৮ দিন খাওয়া-দাওয়ার কোনো অসুবিধা হয়নি। কর্মীরা যা পাচ্ছে তা-ই খাচ্ছে। বিত্তবানরা হাসিমুখে তেমন কিছু না করলেও চিত্তবান গরিবরা হৃদয় উজাড় করে দুই হাতে সহযোগিতা করছে। পত্রপত্রিকা, প্রচার মাধ্যমে যা চেয়েছি অনেকেই খুশি না হলেও আমার মনে হয় ভালোই হয়েছে। তবে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রচার মাধ্যমগুলো আরেকটু দয়া করতে পারত। তারা লিখতে পারত, অবস্থানের আজ ২০ দিন, আজ ২৫ দিন। বিশেষ করে গত তিন বছর যাদের পত্রিকায় অবিরাম লিখছি সেই বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং নয়া দিগন্ত এ দয়াটা করতে পারত। তারা তা করেনি। সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই আমাদের কর্মকাণ্ডের যে খবর দিয়েছেন, সে জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

মন ভালো নয়, বলতে গেলে একেবারেই নয়। মানবজমিনের এক রিপোর্টে দেখলাম, অনেক দিন রাস্তায় থাকায় নাকি ক্লান্ত দেখাচ্ছে। হতে পারে। কতকাল আগে বিপ্লবী কবি কাজী নজরুল ‘বাতায়ন-পাশে গুবাক-তরুর সারি’তে লিখেছিলেন, ‘মলিন মাটির বন্ধনে বাঁধা হায় অসহায় তরু,/ পদতলে ধূলি, ঊধের্্ব তোমার শূন্য গগন-মরু।/দিবসে পুড়িছ রৌদ্রের দাহে, নিশীথে ভিজিছ হিমে,/কাঁদিবারও নাই শকতি, মৃত্যু-আফিমে পড়িছ ঝিমে!/তোমার দুঃখ তোমারেই যদি, বন্ধু, ব্যথা না হানে,/কি হবে রিক্ত চিত্ত ভরিয়া আমার ব্যথার দানে!…’ আজ ক’দিন আয়নায় মুখ দেখি না, তাই কেমন দেখায় ভাবি না। অবস্থানে থাকতে হবে তাই ওসব ভেবে লাভ নেই। কিন্তু মনের ওপর চাপ থাকলে সত্যিই খারাপ লাগে। মানুষ মরণশীল। ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কোথা কে কবে?’ তারপরও প্রিয়জন বা আপনজন কেউ হারিয়ে গেলে ব্যথা লাগে। তেমনি প্রিয় আমিনুল হক বাদশা সেদিন ০৯/০২/২০১৫ তারিখ সোমবার হারিয়ে গেলেন আমাদের মাঝ থেকে। কত আর হবেন, আমার থেকে তিন-চার বছরের বড়। জনাব আমিনুল হক বাদশা বহুদিন বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গীর মতো প্রেস সচিবের কাজ করেছেন। আমরা মফস্বলের মানুষ, ঢাকা শহরে তেমন খুঁটির জোর ছিল না। তবু সেই ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে যখন পরিচয় হয়, সেই তখন থেকেই তার সঙ্গে কমবেশি পরিচয় ছিল। মুক্তিযুদ্ধে এমন পরিবার খুব বেশি পাওয়া যাবে না, যারা সবাই একই ধ্যান জ্ঞান সাধনায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আমিনুল হক বাদশার বড় রাজু আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে ‘জল্লাদের দরবার’ নামে এক অনুষ্ঠান করে সাড়া জাগিয়েছিলেন।

স্বাধীনতার পর তিনি ঘাতকের হাতে নিহত হন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তার ছোট ভাই রাশিদুল হক নবু সরকারি কর্মকর্তাদের সমিতি নিয়েই ব্যস্ত। তারপর মান্না হক আমার খুবই প্রিয় ছিল। স্বাধীন বাংলা বেতারের নিয়মিত শিল্পী। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর ইংল্যান্ডে চলে গিয়েছিল। মানুষ মানুষকে কত ভালোবাসতে পারে মান্না হককে না দেখলে অনেকেই বুঝতে পারবে না। শাওলী হক, প্রীতম হক, মাধবী হক মান্নার তিন ছেলেমেয়ে। স্ত্রী খুসবু হক মিঠুকে নিয়ে মান্না ভালোই ছিল। কিন্তু ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হলে যেহেতু খুসবু হক মিঠু মোস্তাক আহমেদের দুঃসম্পর্কের ভাতিজি তাই ওদের সম্পর্কে টানাপড়েন চলে। একটা সোনার সংসার কীভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে ভাবতেই কষ্ট হয়। মান্নার ছোট টিপু, তারপর ওবায়দুল হক সেলিম, শামসুল হক ডালিম, কামরুল হক শামীম, নুরুল হক নাসিম ও একমাত্র বোন কল্পনা। দুই মায়ের আমরা ছিলাম ১৫ সন্তান। তার ১০ জন এখনো জীবিত। কিন্তু আমিনুল হক বাদশারা ৯ ভাই, ১ বোন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে কতজন কত কিছু পেয়েছেন, কত কিছু হয়েছেন। কিন্তু আমিনুল হক বাদশা যে সেই থেকে গেছেন। মাত্র কয়েক বছর আগে দিগন্ত টিভিতে তাকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করেছিলাম। রাজাকারের মেয়ে বিয়ে করলে, রাজাকারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করলে কোনো দোষ নেই- আমি দিগন্ত টিভিতে অনুষ্ঠান করেছি তাতে একজন খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার বনে গেলাম। কত আওয়ামী লীগ দিগন্তের শেয়ার কিনে মালিক বনে গেছে তারা আলবদর, আলশামস হয়নি- কি তাজ্জব ব্যাপার! আমি অনুষ্ঠান করে রাজাকার হলাম। এক বছর কয়েক মাস দিগন্তের অনুষ্ঠানে যতবার মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছি, বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছি, স্বাধীনতার কথা বলেছি, সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলেছি, সবকটি চ্যানেল মিলিয়ে ততবার মুক্তিযোদ্ধাদের ওইভাবে তুলে ধরেছে কিনা সন্দেহ। যেহেতু আওয়ামী লীগ করি না, সেহেতু অত কিছু করার পরও আসল রাজাকারের কাছ থেকে রাজাকারের খেতাব পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু একবার বলেছিলেন, ‘আল্লাহর মার দুনিয়ার বার। যখন মারে তলপেটে মারে। অনেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সুযোগও পায় না।’ তা না হলে আমাকে রাজাকার বলায় দাঁত বের করে হি হি করে যারা হেসেছিলেন, অল্প সময়ের মধ্যে তাদের শুনতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুও রাজাকার। একেই বলে ইটকা জবাব পাত্থড়ছে মিলেগা। জনাব আমিনুল হক বাদশা ২৮/০১/১৯৪৪ সালে নানা-নানীর বাড়ি আমলাপাড়ায় জন্মেছিলেন। দীর্ঘ জীবন পার করে ০৯/০২/২০১৫, সোমবার সুদূর লন্ডনে ইন্তেকাল করেছেন। আমি তার আত্মার মঙ্গল ও শান্তি কামনা করছি।

৮০ মতিঝিল শুয়ে আছি ২৮ দিন। আমার থেকে ৩০০-৪০০ গজ দূরে ১৯ তারিখ এক যুবক নিহত হয়েছে। প্রায়ই শুনি, বোমাবাজদের গুলি করে মারা হচ্ছে। কিন্তু সেদিন মতিঝিল সোনালী ব্যাংক এবং করিম এন্ড সন্স আবদুস সালামের পেট্রল পাম্পের সামনে কয়েকবার বোমাবাজি হয়। সালামের পাম্পের সামনে সিএনজি থেকে এবং সোনালী ব্যাংকের সামনে মোটরসাইকেল আরোহীরা বোমা মারে। যে যুবক নিহত হয়েছে সে বোমাবাজির সময় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ছুটে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুলিশ বঙ্ েআশ্রয় নিয়েছিল। পুলিশরা তাকে সেখানে থাকতে দেয়নি, বাইরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল এবং বোমাবাজ বলে লোকজন তাকে মেরে ফেলেছে। তরতাজা একটি যুবকের গণপিটুনিতে রাস্তায় মৃত্যু এ যদি কেউ মনে করে বোমাবাজদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ তাহলে বলব তারা আহম্মকের স্বর্গে আছেন। যে দেশে কাউকে দিনেদুপুরে খুন করলে হাজার মানুষ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে, সে দেশে এখনই বোমাবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আশা করা বাতুলতা ছাড়া কিছু নয়। তবে পুলিশের কর্মকাণ্ডে খুবই মর্মাহত হয়েছি। পবিত্র কোরআনে সূরা মায়দায় ৩২ আয়াতে আছে, যারা হত্যা করে বা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে তাদের ব্যতিরেকে অন্য কাউকে হত্যা করলে সে যেন সারা মানব জাহানকে হত্যা করল। জানি না রক্তের গরমে পুলিশরা কী ভাবছে। কিন্তু আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি একটি মানুষকে আশ্রয় না দেওয়ায় একদিন তাদের খেসারত দিতেই হবে। কোনো এক সময় আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন মূসা (আ.)-কে মাটির পাত্র বানাতে বলেছিলেন। পরে তা ভেঙে ফেলতে বললে নবীর কষ্ট হচ্ছিল। তখন আল্লাহ বলছিলেন, মাটির পাত্র ভাঙতেই যদি তোমাদের কষ্ট হয়, তাহলে আমি কত আদরযত্ন সোহাগ করে মানুষ ও জীবজন্তু বানিয়েছি তাদের অযথা হত্যা করলে আমার কষ্ট হয় না? এভাবে প্রতিদিন মানুষ মারা দেখে মনটা খুবই ভারি ও বিষণ্ন হয়ে আছে। তাই লেখায় প্রাণ পাচ্ছি না। আর মতিঝিলে যে অবস্থায় আছি এখানে লেখার পরিবেশ নেই। শুধু পাঠকদের কথা চিন্তা করে শত কষ্টের মধ্যেও তাদের সঙ্গে মিশে থাকার চেষ্টা করছি।

ফুটপাতে থাকায় শুধু পত্রিকার খবরাখবর ছাড়া আর তেমন কোনো দেশ-দুনিয়ার খবর জানি না, রাখতে পারি না। ১৯ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন ২১শে ফেব্রুয়ারির অতিথি হয়ে। একজন বাংলা ভাষাভাষী মানুষ ভাষার জন্য আমাদের রক্ত দেওয়ার দিনে এসেছেন, এটা কতই না গৌরবের। আমার মনে হয় ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মরণে ২১শে ফেব্রুয়ারিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ সফর তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে তিনি সরকারি আতিথেয়তা পেয়েছেন কিন্তু বাঙালি বা বাংলার আতিথেয়তা পাননি। গভীর রাতে শহীদ মিনারে উপচেপড়া মানুষের ভিড় পাননি। এবার গভীর রাতে শহীদ মিনার ছিল একেবারে জনমানবশূন্য। সরকার যে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে এটা তার একটা লক্ষণ। হালকা কথায় বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টিকারী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোজসভায় বিশ্বজয়ী এক ভারি হালকা কথা বলেছেন, ‘পানি এলে ইলিশ যাবে’। অসাধারণ যথার্থ কথা। একেই বলে দরকষাকষি! কী আছে আমাদের দরকষাকষির? কয়েক বছর আগে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পৃথিবীর বহু দেশের পক্ষে সীমান্তে অস্ত্র চালান করতে গিয়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে বেগম খালেদা জিয়ার সর্বনাশ, জননেত্রী শেখ হাসিনার পৌষ মাস। মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মনিপুর ওই সব অশান্ত রাজ্যে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সে যে কী সমর্থন পেয়েছেন তা তো ৫ জানুয়ারির নির্বাচনী নকশা দেখলেই বোঝা যায়। তারা কি জানে না, দুই শতাংশ ভোটও হয়নি, তবু তারা প্রকাশ্য-গোপনে যেভাবেই হোক সমর্থন দিয়ে গেছেন। ভারতের কাছে বাংলাদেশে ভোট হলেই কী আর না হলেই কী? তাদের সীমান্ত দিয়ে অবাধে অস্ত্র না ঢুকলেই হলো।

এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার চেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা অনেক প্রিয় বা বিশ্বস্ত। এমন আরও কিছু যদি আমাদের হাতে থাকত তাহলে ভারত কথা শুনত না? অবশ্যই শুনত। ঘাড়ের নামই তো গর্দান। আজ প্রায় ৩০ বছর মিয়ানমার থেকে আমাদের পেটের ভিতর দিয়ে কলকাতায় গ্যাস নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই হয়, এই হয় না। যদি হতো তাহলে কেমন হতো? আমি সে প্রস্তাব দেখেছি। আমাদের পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাসের ঘাটতি আছে। সে প্রস্তাবে এও ছিল, পূর্বাঞ্চলে কোনখান থেকে ভারত-মিয়ানমার পাইপ লাইনে আমরা গ্যাস তুলে দিয়ে পশ্চিমাঞ্চলে নামিয়ে নিতে পারব অথবা আমাদের বুকের ওপর দিয়ে লাইন টানার মাশুল হিসেবে আমাদের প্রয়োজনমতো গ্যাস এমনিতেই দিতে হবে। মনে হয় কমিশন মিলেনি, তাই কাজ হয়নি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের বুক এফোঁড়-ওফোঁড় করে বিশ্বরোড চলে যাবে। কিন্তু গত ৩০ বছর আগরতলা যাওয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁৗছার জন্য ভারত হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা করতে চেয়েছে। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞ নেতারা রাজি হননি। এক সময় তো বিএনপির বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী বলেই বসেছিলেন, ভারতের পণ্যবাহী গাড়ি ছয় মাস চললে আমাদের রাস্তা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। তার মানে আমাদের রাস্তাঘাট ভারতের চেয়ে নিম্নমানের। অথচ এখন পণ্যবাহী যে সব গাড়ি চলছে তার ৯০-৯৫ ভাগই ভারতীয়। আর তাদের সে প্রস্তাবে আমাদের তৈরি রাস্তার ওপর দিয়ে গাড়ি চলার কথা ছিল না, রাস্তাগুলো আরও মজবুত করে নির্মাণ করে নেওয়ার কথা ছিল। প্রশ্ন আসতেই পারে, আমাদের ছোট দেশ, রাস্তা নির্মাণে বেশ কিছু ভূমি নষ্ট হবে। তাতে আমাদের ফসল উৎপাদন কম হবে সেটার দায় কে নেবে? এ ব্যাপারেও তাদের একটি প্রস্তাব ছিল। একই জায়গা দিয়ে পাইপলাইন ও রাস্তা যাবে এবং যে জমি নষ্ট হবে তার ৫০ বছর উৎপাদিত ফসল অথবা উৎপাদিত ফসলের মূল্য তারা বাংলাদেশকে দেবে। রাস্তা এবং পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণের ভার বাংলাদেশের ওপর থাকবে। তার জন্য তারা ব্যয়ভার বহন করবে। কিন্তু না, এসব কোনো কিছুই হয়নি। অথচ মাঝে-মধ্যে বিনা শুল্কে কলকাতা অথবা ডায়মন্ড হারবাল থেকে ভৈরব, আশুগঞ্জে ভারতের মালবাহী জাহাজ আসছে। সেখান থেকে জিনিসপত্র নামিয়ে ত্রিপুরায় যায় কিন্তু রাস্তার কোনো ক্ষতি হয় না। সবই হচ্ছে শুধু দেশের সম্মান ও অর্থনীতি ক্ষতি করে।

একেবারে নিকটপ্রতিবেশী বাংলা ভাষাভাষী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আমাদের মাঝে এসেছিলেন। একটি মহান দিনে তিনি আমাদের সঙ্গে একাকার হয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কতটা পেরেছেন তা তিনিই জানেন। গণভবনে এখন আর বাংলাদেশ না, বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ের স্পর্শ সেখানে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। মানুষ বড় ভারাক্রান্ত, পীড়িত। শ্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে তিনি এলে আমরা তিস্তার ৫১ শতাংশ পানি পেতাম, এখন তিনি আমাদের তিস্তার পানি দেওয়ার জন্য ১৪ কলস কাঁদলেও ৩০ শতাংশ দিতে পারবেন কিনা সন্দেহ। অনেক বছর ভারতে নির্বাসিত ছিলাম। দুঃসময়ের দিনগুলোতে ভারতের অনেক মহান নেতার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাদপ্রদীপের তলে ছিলেন না। নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালো করে জানি না, চিনি না। তাই তেমন ভালোমন্দও বলতে পারছি না। তবু আশা করি, তিনি যে তার প্রতি আস্থা রাখতে বলেছেন সেটা অপাত্রে রাখা হবে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বসবেন না, কেন বসবেন না? পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি করতে সন্তু লারমার সঙ্গে আলোচনা করেননি? যশোর-ঝিনাইদহ অঞ্চলে উগ্রপন্থিদের স্বপথে আনতে আপনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আলোচনা করে তাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেননি? পিলখানায় বিডিআর হত্যাযজ্ঞের নায়কদের সরকারি গাড়িতে করে হেয়ার রোডে এনে আলোচনা করে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করেননি? তবে কেন আজ আলোচনা করবেন না? যখন দেশ জ্বলছে, মানুষ এবং মানবতা পুড়ছে তখন কেন আলোচনা করবেন না? বিরোধী দলনেত্রী কেন অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করবেন না? দেশের মানুষের প্রতি আপনাদের কেন এত রাগ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার মা-বাবা, ভাই-ভাবীদের, বিরোধী দলনেত্রী আপনার স্বামীকে দেশের মানুষ হত্যা করেনি, তাদের হত্যা করেছে কয়েকজন মানুষরূপী জল্লাদ। যাদের এদেশের মাটিতে কোনো শিকড় নেই। তাই ক্ষমা করুন, ক্ষমা করুন, ক্ষমাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

লেখক : রাজনীতিক।



মন্তব্য চালু নেই