আল্লাহর সঙ্গে শিরকের পরিণতি ভয়াবহ

আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার স্থাপন করাই হলো শিরক। যেমন- আল্লাহ তাআলাকে ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদতের উপযুক্ত মনে করে তাঁর উপাসনা করা; অন্য কাউকে আল্লাহর ন্যায় ভালোবাসা; আল্লাহ ব্যতিত অন্যের নামে পশু কুরবানি বা মানত করা; কল্যাণ ও ক্ষতি সাধনের মালিক হিসেবে অন্য কাউকে বিশ্বাস করাসহ এ রকম অসংখ্য বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপনই হলো শিরক।

শুধু আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কাউকে অংশীদার স্থাপন না করেও অনেকে শিরকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। যেমন- আল্লাহ তাআলা যে সব নাম ও গুণাবলী রয়েছে; সে সব বৈশিষ্ট্য ও গুণে তিনি মানুষের একক রব ও মা’বুদ।

আল্লাহ তাআলার এ সব গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে কোনো নবি, রাসুল, অলি, গাছ ও পাথরসহ কোনো জিনিসকে উদ্দেশ্য করে মুখে, শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং অন্তর দ্বারা ইবাদতমূলক কোনো কাজ করা শিরকে আকবর বা বড় শিরক।

উপরোল্লিখিত কাজগুলোর মাধ্যমে একজন মানুষ ইসলামের অমূল্য নিয়ামত থেকে বের হয়ে মুশরিকে পরিণত হয়। কেননা শিরক কুফরিরই নামান্তর। এ কারণে শিরককারীর কোনো নেক আমলই কাজে আসে না বরং সব ভালো কাজগুলো বিফলে পরিণত হয়। আল্লাহ তাআলা শিরক মিশ্রিত কোনো নেক আমলই গ্রহণ করেন না।

আল্লাহ তাআলা তাআলা কুরআনুল কারিমের অসংখ্য আয়াতে মানুষকে তাঁর ইবাদত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং শিরক করা থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। শিরককারী জন্য রয়েছে ভয়াবহ পরিণতি।

কুরআনে শিরকের ভয়াবহ পরিণতি
শিরকের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাঁর সঙ্গে করা শিরকের গোনাহ ক্ষমা করবেন না। এছাড়া অন্যান্য গত গোনাই হোক না কেন, তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করেছে সে তো এক বিরাট মিথ্যা রচনা করেছে এবং কঠিন গোনাহের কাজ করেছে। (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)

আল্লাহ তাআলা শিরককারীর জন্য জান্নাত হারাম করেছেন। তাদেরকে জালিক বা অত্যাচারী ঘোষণা করে তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী থাকবে না বলেও ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করেছে; আল্লাহ তাঁর ওপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার পরিণতি হবে জাহান্নাম। এ সব জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়িদা : আয়াত ৭২)

আল্লাহ তাআলা শিরকরে ভয়াবহতা উল্লেখ করে পূর্ববর্তী নবিদেরকে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তাঁরা (সব নবি-রাসুলগণ) শিরক করতো তবে অবশ্যই তাদের করা সব নেক আমল বরবাদ হয়ে যেত।’ (সুরা আনআ’ম : আয়াত ৮৮)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করল; সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অত:পর মৃতভোজী পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোনো দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩১)

সর্বোপরি শিরকের ভয়াবহতার কথা ও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে সুস্পষ্টভাবে কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘(হে নবি!) আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তী নবিদের প্রতি ওহি করা হয়েছে যে, যদি আল্লাহর সঙ্গে শরিক স্থাপন করেন, তাহলে আপনার সব আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবেন।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৬৫)

পরিশেষে…
শিরক মারাত্মক অপরাধ। যে অপরাধের কারণে আল্লাহ তাআলা শুধু সাধারণ মানুষই নয় বরং তাঁর প্রিয় নবি ও রাসুলদের সব নেক আমলকে বরবাদ করে দেবেন। উল্লেখিত কুরআনের আয়াতই তাঁর জলন্ত প্রমাণ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকের ভয়াবহ পরিণতি থেকে হিফাজত করুন। সব ধরনের ছোট ও বড় শিরক থেকে হিফাজত করুন। শিরকমুক্ত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।



মন্তব্য চালু নেই