‘আর খেলব না, এ রকম করলে কিন্তু খুব রেগে যাব, খারাপ হয়ে যাচ্ছে…ভাল হচ্ছে না’

প্রাক্তন প্রেমিককে দেখে ‘হাই’ বলে কেউ জুড়ে দেন আড্ডা… যেন কিছুই হয়নি…. কেউ আবার পুরনো ভাঙন মনে গেঁথে দু’জনে দু’জনকে এড়িয়ে যান নিঃশব্দে! টলিউডের বাৎসরিক রিইউনিয়নের ক্যুইজ ও পার্টি যেন প্রেম-জোট। রাজনীতির জোট কোথায় লাগে! সাক্ষী নিবেদিতা দে ‘খেলব না… এ রকম করলে কিন্তু খুব রেগে যাব… খারাপ হয়ে যাচ্ছে…ভাল হচ্ছে না…’’

সুরেলা অভিমান, রঙিন অনুরাগ ও ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি নিয়ে যিনি মঞ্চ ত্যাগ করার হুঁশিয়ারির নামে অভিমানী-অভিমানী তরঙ্গ তুললেন, তিনি আর কেউ নন ক্যুইজের অন্যতম প্রতিযোগী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

অন্য দিকে যাঁর তির্যক কথার উস্কানি বা ‘দুষ্টুমির’ জন্য ঋতুপর্ণা তাঁর ছুঁইমুই আড়ষ্টতা নিয়ে কপট রাগ দেখাচ্ছিলেন, তিনিও আর কেউ নন স্বয়ং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই অনুষ্ঠানের ম্যাচ রেফারি তিনি।

ভাবুন!

যাঁর কাজ দূরে বসে মঞ্চের প্রতিযোগীদের ঝগড়াঝাঁটি সামলানো, কড়া হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া, তিনি কিনা অক্লেশে ঋতুপর্ণার সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে। ‘নায়ক’ যদি ম্যাচ রেফারি হয়, ‘খেলা’ তো অন্য খাতে বইবেই।

‘কোলাহলের মাঝে নির্জনতা’ খুঁজে পাওয়ার এর চেয়ে ভাল উদাহরণ আর কী-ই বা হতে পারে!

রোম্যান্স-সিক্ত এমন পরিবেশকে সাক্ষী রেখেই আরম্ভ হল ‘ক্যামেলিয়া প্রেজেন্টস আনন্দ প্লাস বায়োস্কোপে বাজিমাত পাওয়ার্ড বাই মিঠি’র ক্যুইজের আসর।

ভোটের আগে এমন জোটের আসর, জুটির খেলা এর আগে কবে দেখেছে কলকাতা!

ক্যুইজমাস্টার মীর আবার সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময়ে তার স্বভাবসিদ্ধ রসিকতার ভঙ্গিতে জানালেন, এ বছর নাকি সকলেই ধরে নিয়েছেন দেব-শুভশ্রী জুটি জিতবে।

অর্থাৎ চার বছর পরে মান-অভিমান ভুলে যেহেতু ওঁরা আবার একসঙ্গে ছবি করছেন তাই ‘গটআপ’ করে জিতিয়ে দেওয়া হবে।

মীরের অনন্য কৌতুক, জুটির রোম্যান্স…সব মিলিয়ে দোলের আগেই নানা রঙে রামধনু হয়ে উঠল রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাবের নৈশ আসর। অনুষ্ঠানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের এসে পড়াও সেই রঙিন মেজাজে নিয়ে এল এক মধুর মৌতাত।

ক্যুইজের প্রশ্নেও রঙের ছোঁয়া যেন। প্রথম প্রশ্নটিই ছিল আবীর-যিশু জুটির কাছে। ‘রং বরষে ভিগে চুনারওয়ালি রং বরষে’ গানের লিরিকস কার?

উত্তর দিলেন আবীর (নামের কী মাহাত্ম্য)— ‘হরিবংশ রাই বচ্চন’।

দৃশ্যটা ভাবুন। বাবার লেখায় কণ্ঠ দিয়েছেন ছেলে অমিতাভ বচ্চন। ছবিতে ছেলের সঙ্গে ছেলের বৌ জয়া। ও দিকে সফেদ সালোয়ার-কামিজে রেখা। জুটি, জোট, মহাজোট, রঙের এমন মিলমিশ! উফ!

এর পরের প্রশ্নটি নিয়েই যত খুনসুটি! জায়ান্ট স্ক্রিনে ‘খাইকে পান বনারসওয়ালা’র ক্লিপিংস দেখিয়ে জানতে চাওয়া হয় কোন ছবি?

বাংলাদেশি নায়িকা জয়া এহসানের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলছিলেন ঋতুপর্ণা। উত্তর দিলেন ‘ডন’।

ব্যস, পাশ থেকে সৃজিত আরম্ভ করলেন—‘বেগমজান’-এর জন্য স্পেশ্যাল সোজা প্রশ্ন করা হয়েছে।

রসিকতা যেমন থাকে, তেমনই সব কিছুর মাঝে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব ঘিরে কাজ করে চোরা উত্তেজনা! সে দিনও যা ছিল তুঙ্গে। বিশেষ করে গৌতম ভট্টাচার্যের উপস্থাপনায় আনন্দplus রাউন্ডটি। কারণ সেই সময় প্রত্যেকের স্কোর এমনই যে, একটু এ দিক ও দিক হলেই ‘রাজকাহিনী’ থেকে ‘খাদ’-এ চলে যেতে পারত যে কোনও দল।

হলও তাই। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছে প্রথম প্রশ্ন ছিল— বরিস বেকারের ইন্টারভিউতে আনন্দplus-এর তরফ থেকে এক জন ভারতীয় আইকনিক ক্রিকেটার দু’টো প্রশ্ন করেছিলেন। কে তিনি?

উত্তর: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

উত্তর দিতে পারলেন সৃজিত।

দ্বিতীয় প্রশ্ন— ‘কলকাতার নাগরিক’ শিরোনামে আনন্দplus-এ এক বিদেশির প্রোফাইল লেখা হয়েছিল। কে তিনি? উত্তর হত ‘এটিকে’কোচ ‘হাবাস’। পরের প্রশ্ন: পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে তাঁর শোকগাথাটি কে লেখেন? দু’টি উত্তরই মনে করতে পারলেন না সৃজিত। শেষেরটির উত্তর হত ব্রাত্য বসু। এ ভাবেই ‘ক্লাসের ফার্স্ট বয়’ সৃজিত কুড়িটি নম্বর হারান। আর একই ভাবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে ৩৫ থেকে ৬৫-তে চলে যান, যেখানে সৃজিত ৪০ থেকে ৭০-এ গিয়ে প্রথম হতে পারতেন কিন্তু পৌঁছান ৫০-এ।

খেলা-স্কোর নিয়ে টানটান উত্তেজনা যেমন ছিল, তেমনই রসিকতা- রোম্যান্সের আবিরও উড়ছিল সর্বত্র। খেলার আগেই যে কারণে আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল অন্য আরেক খেলা!

কী রকম?

অনেকেই নাকি মীরের কাছে নানা রকম প্রস্তাব দিতে আরম্ভ করেন প্রশ্ন ফাঁসের জন্য। সে দিন আবার ক্যুইজের জন্য আলাদা করে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও তৈরি করা হয়। সেখানে এক নায়িকা প্রশ্ন ফাঁস করার জন্য টাকার অঙ্কও অফার করেন। অবশ্যই রসিকতা! কিন্তু সে প্রস্তাব শুনে

দমে থাকেননি ‘দাদা’রাও। ওঁরাও জানান, ‘আমরাও দিতে রাজি আছি’।

—এ ভাবেই ‘নারী-পুরুষ সমান-সমান আছে যে তার অনেক প্রমাণ’ ধরনের মৌচাক-মৌচাক মধু-মধু অ্যাটিটিউড নিয়েই আরম্ভ হয় আসর।

ক্যুইজের সেই আসরে কখনও রাজ চক্রবর্তীকে দর্শকাসন থেকে হাত ধরে তুলে নিয়ে যান দেব। তার পর রাজ যখন কথা বলতে বলতে মিমি চক্রবর্তীর কাছাকাছি চলে আসেন, তখন আবার শুভশ্রী বলেন, ‘‘সেই মিমির দিকেই চলে যাচ্ছ তো।’’

হোলির আগে প্রেমের ফাগ এ ভাবেই উড়ছিল আকাশে।

এক দিকে মিমি চক্রবর্তী কৌশিকের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলছেন, তা দেখছেন মিমির জীবনের জুটি রাজ। অন্য দিকে দেব-শুভশ্রী মঞ্চের উপরে কী নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত বোঝার উপায় নেই। সত্যিই প্রশ্ন নিয়ে কথা, না কি অন্য কিছু, কে জানে! এ দিকে আবার ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিতের ‘এ পথ যদি না শেষ হয়’ চলছে।

পাওলি আবার সে সব দৃশ্য দেখছেন পরমব্রতর সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলতে খেলতে। যে পাওলি কিনা ‘মহানায়ক’ ধারাবাহিকে উত্তমরূপী প্রসেনজিতের সুচিত্রা সেন। মনে পড়ছে পাওলি-পরমের ‘কালবেলা’? অনিমেষ-মাধবীলতা! রসায়নে রসায়নে যেন কেমিস্ট্রি-ল্যাব তখন মঞ্চ!

এ প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ জনান্তিকে রসিকতা করে জানিয়েছেন, ‘‘দেব আমাকে সব সময় ঋতুপর্ণা আর পাওলিকে নিয়ে খেপায়। বলে, কার সঙ্গে চলছে এখন? মুখের কোনও আগল নেই। দামাল ছেলে একটা।’’

ও দিকে আবার দুই ব্যোমকেশ বা ফেলুদা-ব্যোমকেশ আবীর-যিশু।

অন্য রকম কেমিস্ট্রি! মিস্ট্রি!

এর মধ্যে জানিয়ে রাখি, ক্যুইজের শেষে পার্টিতে এসেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। শুভশ্রী হঠাৎই সৌরভের মুখোমুখি। সৌজন্য বিনিময়। এই প্রথম বার শুভশ্রীর আলাপ হল সৌরভের সঙ্গে। একসঙ্গে ছবি তুললেন নায়িকা নিজের মোবাইলে। শুভশ্রী বললেন, ‘‘যখনই বিদেশে যাই, আমার নামের পদবি দেখে ইমিগ্রেশনে জানতে চায়, আমি আপনার আত্মীয় হই কি না?’’

সৌরভ বললেন, ‘‘এ বার থেকে আত্মীয় বলতে পারো।’’

আচ্ছা, আপনিও তো এখন ক্যুইজ মাস্টার। দুটো ‘মাঠের’ খেলা কতটা আলাদা? প্লেটের উপরে চামচ এ-দিক ও-দিক করতে করতে সৌরভ হেসে বললেন, ‘‘কোনও তুলনাই হয় না। ফর্ম্যাট, টেকনিক, ইনটেনসিটি সব আলাদা।’’ রণদেব বসু, দীপ দাশগুপ্ত, জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মালবিকার সঙ্গে আড্ডায় মাতলেন সৌরভ।

রাত শেষের পার্টি চলছিল দুই প্রান্তে। এক দল নীচে। আরেক দল ছিল টেরেসে। লবিতে রুদ্রনীল ঘোষের দুরন্ত আড্ডায় প্রায় দর্শকের মতোই একদল ভক্ত। ‘ধূমকেতু’ ছবির শুটিং ও বরফ- অভিজ্ঞতাই যে গল্পের প্রধান বিষয়। অন্য দিকে সিরিয়াস রূপম ইসলাম। ওঁর কাছে জানতে চাইলাম, আপনার জুটি তো ছিল সৃজিতের সঙ্গে। সৃজিত চিরকালই ক্লাসের ফার্স্ট বয়। আজ কী হল?

প্রসঙ্গত এ বারের চ্যাম্পিয়ন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়-মিমি চক্রবর্তী। তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর প্রধান সম্পাদক অভীক সরকার। ফেয়ার প্লে ট্রফি ভাগ হয়ে যায় যিশু-আবীর ও সৃজিত-রূপমের মধ্যে।

রূপম বললেন, ‘‘বাজ়ার রাউন্ড ছিল না, আনন্দplus রাউন্ডের প্রশ্নগুলো কঠিন ছিল…ও দিকে সৌমিত্রের রাউন্ডের সব ক’টা উত্তর জানা থাকলেও দেবের বোনাসটা পেল পরমব্রতরা…’’ বোঝা গেল সৃজিত-রূপমের ‘পাতে’ কঠিন প্রশ্ন পড়া নিয়ে বেশ কথা চলেছে!

ব্যাপারটা অবশ্য প্রথম প্রথম একটু সিরিয়াস থাকলেও পরের দিকে কেমন যেন জল হয়ে গেল। সোহিনী, সায়নী, ঋতুপর্ণা, প্রিয়ংকা, জয়াদের সঙ্গে নিয়ে সেলফি তুলছিলেন সৃজিত। ‘রাজকাহিনী’ টিম।

ক্যুইজের পরে প্রসেনজিৎ চলে গেলেও ঋতুপর্ণা ছিলেন কিছুক্ষণ।

জিজ্ঞেস করলাম, ‘রাজকাহিনী’র হিন্দি রিমেকে আপনার জায়গায় বিদ্যা বালনকে নিয়েছেন সৃজিত। খারাপ লাগছে না?’’

ঋতু হাসলেন। বললেন, ‘‘ভাল লাগছে, হিন্দি ছবিটার নাম ‘বেগমজান’… আমার চরিত্রের নামে হচ্ছে। আর দেখুন, সৃজিত এত ছবি

করেছে, কিন্তু মুম্বই যাত্রাটা আমার ছবি দিয়েই হল।’’ গর্বের হাসি তাঁর মুখে।

আচ্ছা সৃজিত, আপনি

কবে প্রসেনজিৎকে নিয়ে ‘কাকাবাবু’ শুরু করবেন?

সৃজিত বললেন, ‘‘সুইজারল্যান্ডে রেইকি করে ফেলেছি। বরফ পড়ার উপর নির্ভর করছে শুটিং শেডিউল।’’

বিরসা দাশগুপ্ত যেন সম্পূর্ণ অন্য মুডে। বললেন, ‘‘প্রতি বছর অনুষ্ঠানটায় আসি…তাকিয়ে আছি কবে পার্টিসিপেট করব সেই দিকে।’’প্রসঙ্গত ‘মহানায়ক’ ধারাবাহিকটি উনিই পরিচালনা করছেন।

চৈতী ঘোষাল বললেন, ‘‘আমার রক্তকরবী’টা দেখো প্লিজ।’’

এই ভাবে কেউ আবেগতাড়িত তো কেউ পুরোপুরি মজার আড্ডায়। কেউ আবার ঝালিয়ে নিলেন নতুন আলাপ।

জয়া এহসান ও পরমব্রতকে যেমন এক কোণে দেখা গেল। একটু চোখ চাওয়াচাওয়ি। জয়া বললেন, ‘‘পরম ক’দিন আগেই বাংলাদেশ থেকে ছবি করে ফিরল, তাই কথা হচ্ছিল। তা ছাড়া ওদের আদি বাড়ি রাজশাহী না ময়মনসিংহ…গল্প করছিল।’’

অ!!! তাই বলুন!

পরমের বান্ধবী ইকাকে অবশ্য পার্টিতে দেখা গেল না। জানা গেল উনি কলকাতায় নেই।

পরমের কথা যখন উঠলই তখন পরমের পারফরম্যান্সের কথাটা সেরে নেওয়া যাক। যা অনুষ্ঠানটিকে নিয়ে গিয়েছিল অন্য উচ্চতায়।

মঞ্চে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব ছাড়াও বিশেষ একটা রাউন্ড থাকে মীরের। সেখানে কোনও পয়েন্ট থাকে না। জুটিদের অভিনয় করে দেখাতে হয়। অভিনয় করে দেখালেন সব জুটিই—

সৃজিতকে নাচতে বলা হল রূপমের গান ‘আমি আমি জানি জানি’র সঙ্গে। কৌশিক সেনকে নাচতে বলা হল অনিন্দ্যর গান ‘ঘরেতে (কালো) ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে’র সঙ্গে।

আর পরমব্রতকে বলা হল পরিচালক অঞ্জন দত্তকে নকল করে দেখাতে। যেন পাওলির অডিশন নিচ্ছেন অঞ্জন— এমন এক দৃশ্য।

দৃশ্যটি পরমব্রত এমন অসাধারণ করলেন যে শেষ পর্যন্ত প্রসেনজিৎ তাঁর পাওয়া উপহারটি পরমব্রতের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘‘এটা সত্যিই ও ডিজার্ভ করে।’’

কলকাতার আর কোন অনুষ্ঠানে এমন আবেগ ঝরে পড়ে যেখানে অনুজের জন্য অগ্রজ নিজের উপহার তুলে দেন! এর চেয়ে বড় জোট আর কী-ই বা হতে পারে!

পরমব্রতর মতোই আরেক জনের পারফরম্যান্সের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি কৌশিক সেন।

তবে এই রাউন্ডে সবচেয়ে আলগোছে কথা বলে বসেন দেব।

বলা হয়, ‘ধূমকেতু’ ছবির শুটিং-এর সময়ে বরফের ঠান্ডায় পরিচালক চলে এলেও কোন সমীকরণে থেকে যান দেব-শুভশ্রী? সঙ্গে প্রপস হিসেবে দেওয়া হয় একটি কম্বল ও রুম হিটার।

শুভশ্রী বলেন, ‘‘এ সব কথা জিজ্ঞেস না করে আমাদের কোনও অ্যাক্টিভিটি তো দিতে পারতে।’’

দেব শুভশ্রীকে বলেন, ‘‘ব্যাটা আরও ছড়াচ্ছে।’’

ঠাট্টা রসিকতার মাঝে মনে গেঁথে যাওয়া মুহূর্তও তৈরি হয় নানা ভাবে।

মঞ্চের উপরের তিনটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতেই হচ্ছে। এক, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ইউনেস্কো ফেলিনি পুরস্কারের খবরে স্বতঃস্ফূর্ত স্ট্যান্ডিং ওভেশন। তখন কৌশিকের কাছে রসিকতা করে জানতে চাওয়া হয় আপনি জীবনে কী কী ফেলেননি?

কৌশিক বলেন, ‘‘সুযোগ ফেলিনি, ভাল ভাবনা ফেলিনি, বন্ধুবান্ধবদের ফেলিনি, আনন্দplus-এর আর্টিকলগুলো ফেলিনি।’’

দুই, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্য স্ট্যান্ডিং ওভেশন। যেখানে বলা হয় তিরাশি বছর বয়সে এক শিল্পী এক বছরে তিনটি নাটক লঞ্চ করলেন। আর তিন, খরাজ মুখোপাধ্যায়ের জন্য আবেগবিহ্বল স্ট্যান্ডিং ওভেশন। ‘অপ্রকাশ্য নায়ক’ সম্মানে ভূষিত করার জন্য।

আবেগ, আড্ডা, জুটি-জোট, রঙিন ছবির কোলাজ সর্বত্র।

ভাল কথা, ব্যোমকেশ-ফেলুদা আবীর-ষিশু যেমন অনুষ্ঠানের প্রতিযোগী ছিলেন তেমনই দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন অনির্বাণ ভট্টাচার্যও। পরবর্তী ফেলুদা!

সত্যিই ফেলুদা? ‘‘এখনই কিছু বলতে পারব না।’’ বললেন অনির্বাণ।

ছিলেন আরও কত রঙিন তারকা!

যে কথা প্রথমেই বলছিলাম, সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যেই যেন একটা বিশেষ সুর, বিশেষ মন কাজ করছিল। আর সে সুর ছিল জুটির। প্রেমের।

তা সে ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎই হোক, দেব-শুভশ্রীই হোক কী ‘ইচ্ছেনদী’ টিভি সিরিয়ালের নায়ক নায়িকা শোলাঙ্কি-বিক্রম!

পার্টিতে এসেছিলেন ওঁরাও। টিভির রোম্যান্টিক জুটি। বিক্রমকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘শোলাঙ্কির প্রেমে পড়েছেন?’’ বিক্রম হেসে বললেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে প্রচুর সময় কাটাই, গল্প হয়, সিনেমা, বেড়ানো কত বিষয়, কিন্তু প্রেমে…উঁহুঁ!’’

আর পাওলির সঙ্গে বিচ্ছেদ তো হয়েছে অনেক দিন। পার্টিতে কোনও কথা হল?

‘‘না। হয় না। প্রত্যেক বছরই এই পার্টিটায় আসি, কিন্তু কথা হয় না … দেব-শুভশ্রীর মতো হতে পারিনি (হেসে)।’’ বোঝা গেল ‘ইচ্ছেনদী’ ধারাবাহিকের নায়কের মনের কথা।

এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল আর এক নদীর কাহিনি—

বহু আগে এক বার পাওলির সাক্ষাৎকার নিতে ওঁর বাড়ি গিয়ে দেখেছিলাম এক অনন্য কালেকশন। নদীর উৎসমুখের জলের সংগ্রহ।

কেবল গোমুখ নয়, নর্মদা-কাবেরী-গোদাবরী…আরও কত নদী-উৎসের জল সংগ্রহ করে রাখা তাঁদের বাড়ির শো-কেসে। পরম মমতায় সেই সব সংগৃহীত জলের পাত্রের গায়ে লেখা নদীর নাম, তারিখ।

এ গল্পের সঙ্গে হয়তো আশেপাশের কোনও মিল নেই। তবু স্মৃতির সাদা-কালো ওল্টাতে ওল্টাতে প্রেম-জোটের নৈশ-আসরের শেষে তাই পাওলি-বিক্রমের আড়ষ্ট ‘প্রাক্তন’কে দেখে মনে হল, কোন নদী যে কখন কোন সাগরে মেলে! কোন আঁকে- বাঁকে কোন ‘নদী’র যে কী ‘ইচ্ছে’!

রাত গড়ালেও এমন বিচিত্র বাঁক নেওয়া গভীর প্রেমের রহস্য অজানাই থেকে যায়! কেবল ‘কোলাহলের মাঝে নির্জনতা’র টুকরো টুকরো কোলাজ মনের মধ্যে রং ছড়ায়!

এবিপি



মন্তব্য চালু নেই