আরাফাত রহমান কোকো সম্পর্কে কিছু তথ্য

আরাফাত রহমান কোকো ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। রাজনীতিবীদের চেয়ে তিনি একজন ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। এছাড়া আরাফাত রহমান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও সিটি ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের মে মাসে আটক অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল তাকে। তারপর থেকে তিনি বিদেশেই অবস্থান করছিলেন। আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন ছিল। খালেদা জিয়া ২০১২ সালে কোকোর সাথে সিঙ্গাপুরে সাক্ষাত করেন। কিন্তু জিয়া পরিবার ২০০৭ সালের পরে কখনওই একসাথে হতে পারেনি।

তাঁর বাবা বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি একই সাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছেন। আরাফাত রহমান কোকো তাদের কনিষ্ঠ ছেলে। তাঁর বড় ভাই তারেক রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রথম ভাইস-চেয়ারম্যান।

১/১১ পরবর্তী ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন আরাফাত রহমান কোকো। একই বছরের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। যদিও পৃথকভাবে তারেক রহমান ও কোকোর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের। চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান লন্ডন যান। একই বছরের ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরদিন চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান কোকো। একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ায় আসেন তিনি। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছিলেন খালেদা জিয়ার এই ছোট ছেলে।

১৯৬৫ সালে মা খালেদা জিয়া স্বামীর সাথে পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমানে পাকিস্তান)যান। তারা ১৯৬৯ সালের মার্চ পর্যন্ত করাচিতে সাথে ছিলেন। এরপর ঢাকায় চলে আসেন। কিছুদিন জয়দেবপুর থাকার পর চট্টগ্রামে বাবা জিয়ার পোস্টিং হলে তার সঙ্গে সেখানে এবং চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় বসবাস করেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মায়ের সাথে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ১৬ মে নৌপথে পরিবারের ঢাকায় চলে আসেন। বড় খালা খুরশিদ জাহানের বাসায় ১৭ জুন পর্যন্ত থাকেন সবাই। ২ জুলাই সিদ্ধেশরীতে জনাব এস আব্দুল্লাহর বাসা থেকে পাক সেনারা মা ও বড়ভাই তারেকসহ আরাফাত রহমান কোকোকে বন্দী করে। তারা ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে মা ভাইসহ তিনি মুক্তি পান। আরাফাতের মা বেগম জিয়া রাজনীতিতে আসার আগ পর্যন্ত একজন সাধারণ গৃহবধু ছিলেন। দুই পুত্র আরাফাত ও তারেককে লালন পালন ও ঘরের কাজ করেই সময় কাটাতেন।

সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি টাকার বেশি অর্থের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ কাফরুল থানায় আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ মামলায় সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী প্রয়াত আকবর হোসেনের ছেলে সায়মন হোসেনকেও আসামি করা হয়। ২০১১ সালের ২৩ জুন এ মামলার রায় হয়। তাতে পলাতক দেখিয়ে কোকোকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে কোকোর পাচার করা অর্থের একটা অংশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কোকোর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির অভিযোগে ২০১০ সালের ১ মার্চ এনবিআর একটি মামলা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোকোর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দুটি চাঁদাবাজির মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক একটি মামলা করে। আর সোনালী ব্যাংকের ঋণখেলাপের মামলায় ভাইয়ের সঙ্গে এবং গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় মায়ের সঙ্গে কোকোও আসামি।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট



মন্তব্য চালু নেই