‘আমি ঢাকার বউ, আমার সম্মান রক্ষা করুন’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ঢাকাবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমি পাবনার মেয়ে। আপনাদের ঢাকার বউ হয়ে এসেছি। আমার সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা আমাকে সম্মান রক্ষা করুন।’

সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে মামলার কারণে মির্জা আব্বাসের অনুপস্থিতিতে আব্বাসের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরের সময় তিনি এ আহ্বান জানান।

আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে আমি প্রতিদিনই পোশাকধারী ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ এবং সরকারদলীয় ক্যাডারদের বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। আমি প্রচার ও গণসংযোগ চালানোর সময় পুলিশ প্রায়ই আমার নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যায়, হয়রানি করে। হুমকিধমকি দেয়। এছাড়া আমি কোনো বাসায় নামাজ আদায়ের জন্য গেলেও পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা সেই বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। আমি প্রতিদিনই নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কাছে, ঢাকাবাসীর কাছে এ বিষয় তুলে ধরছি। কিন্তু অনেকে বলছেন, আমার অভিযোগ নাকি জোরালোভাবে তুলে ধরছি না।

আফরোজা আব্বাস প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি কি সরকার, পুলিশ ও তাদের ক্যাডারদের সঙ্গে ঝগড়া করব। আমিতো তাদের মতো ঝগড়া করতে পারি না। মির্জা আব্বাস এই নগরেরই সন্তান। তার অধিকার আছে বাধাহীন নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচন করার। আমি পাবনার মেয়ে। ঢাকার বউ হয়ে এসেছি। আমার নিরাপত্তা দেওয়া ও সম্মান রক্ষা করা ঢাকাবাসীর দায়িত্ব। আমি তাদের কাছেই বিষয়টি তুলে ধরছি।

আফরোজা বলেন, জনগণ যদি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, তাহলে মির্জা আব্বাসকে তারা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করবে। ঢাকাবাসী আব্বাসকে বিজয়ী করে নীরব বিপ্লব ঘটাবে।

তিনি অভিযোগ করেন, বারবার আহ্বান ও অভিযোগ করা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন এবং সরকার লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরিতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয়, তারা বিগত ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন কলঙ্কিত ৫ জানুয়ারি মার্কা ভোট করতে চাচ্ছে। তবে এমন হলে জনগণ তা অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করবে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি চায় তারা ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন করবে না, তাহলে নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করবে।

মির্জা আব্বাসের নির্বাচনী ইশতেহারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ অভিযোগ করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরা বাধা দিচ্ছে। সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। এজন্য তারা খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিচ্ছে। খালেদা জিয়াকে বাধা দিয়ে সরকারের ভিত যে নড়বড়ে হয়ে গেছে, তা তারা প্রমাণ করে দিচ্ছে। তবে, বাধা দিয়ে লাভ হবে না। ২৮ এপ্রিল ভোট বিপ্লব ঘটবে।’

হান্নান শাহ আরও বলেন, ‘মির্জা আব্বাসের পক্ষে দক্ষিণ সিটিতে জোয়ার উঠেছে। তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে সর্বত্র বাধা দেওয়া হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও ঘাবড়ে গেছেন, ঘাবড়ে গিয়েই তিনি খালেদা জিয়া সম্পর্কে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিচ্ছেন।’

ঢাকা সিটি দক্ষিণে বিএনপির প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী আ স ম হান্নান শাহ দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের কাজ হবে ভোটকেন্দ্রগুলো পাহারা দেওয়া, যাতে ভোট চোররা চুরি করতে না পারে।’

আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও বেআইনিভাবে নাগরিক ট্যাক্স বাড়িয়েছে। যারা জনপ্রতিনিধি হয়ে আসবেন, তারাই ঠিক করবেন নাগরিকদের কত ট্যাক্স দিতে হবে। সরকার এটা করতে পারে না।

তিনি বলেন, আফরোজা আব্বাস নির্বাচনে অক্লান্ত পরিশ্রম ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ঢাকাবাসীর অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন। ঢাকাবাসীর মনে তিনি দাগ কেটেছেন। অবশ্যই ঢাকাবাসী মগ মার্কায় ভোট দিয়ে এর মূল্যায়ন করবে।

ইশতেহার অনুষ্ঠানের মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন— আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ডিইউজের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার।

এছাড়া সামনের সারিতে উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ঢাবি শিক্ষক প্রফেসর আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ড. সুকোমল বড়ুয়া, সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, সাবেক সচিব আ ন হ আকতার হোসেন, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিনিয়র সহসভাপতি এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ নেতারা।



মন্তব্য চালু নেই