আমি ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দেবো: রাজ্জাক

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ঢুকতেই দেখা গেল মমিনুল হক সৌরভকে। একটু চিন্তিত ভঙ্গিতেই বললেন, শুনলাম প্রিমিয়ার লীগে ক্রিকেটারদের দাম সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা করা হচ্ছে! আফসোস ছাড়া কোনো মন্তব্যও করতে পারলেন না কারণ তিনি বিসিবির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। প্রশ্ন আর দুশ্চিন্তা এখন ক্রিকেটারদের মুখে মুখে। কারণ, এই প্রিমিয়ার লীগের আয় দিয়েই চলে অধিকাংশ ক্রিকেটারের সংসার। সেখানেই শিকল পরিয়ে দিচ্ছে ক্লাবগুলো। ক্রিকেটাররা যাতে স্বাধীন ভাবে দলবদল করতে না পারে এবং নিজেদের ইচ্ছামতো টাকা দাবি করতে না পারে সেই জন্যই পুরানো দলবদলের পদ্ধতি পরিবর্তন করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে দলবদলে টাকা দেয়ার ক্ষেত্রে নির্ধারণ করা হচ্ছে গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে। জানা গেছে, প্রস্তাবিত গ্রেডিং পদ্ধতিতে ৬ জন আইকন ক্রিকেটার থাকছে। এছাড়াও ‘এ+’ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা। সর্বনিম্ন ‘ই’ গ্রেডে থাকা ক্রিকেটাররা পাবেন ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যদিও এই গ্রেডিং এখনও একটি প্রস্তাবনার মধ্যে আছে। তারপরও ক্ষোভ ঝরলো জাতীয় দল থেকে বাদপড়া তারকা ক্রিকেটার আবদুর রাজ্জাকের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘দলবদল নিয়ে এখনও যা শুনছি তাতে কোনো আশার আলো দেখছি না।

যদি গ্রেডিং পদ্ধতি করে দেয়া হয় তবে আমাদের টাকার পরিমাণও কমে যাবে অনেক। আমাদের প্রিমিয়ার লীগের আয়ের উপরই চলতে হয় সারা বছর। এখানে যারা ‘এ+’, ‘এ’ গ্রেডে থাকবে তারাই বেশি টাকা পাবে। যারা জাতীয় দলে খেলেন তাদের কথা আলাদা, তারাতো সারা বছর টাকা পাচ্ছে। কিন্তু যারা জাতীয় দলের বাইরে আছে তাদের কথাও ভাবতে হবে বিসিবিকে। তারা কিভাবে চলবে! দেখা যাবে একটা সময় অনেকেই ক্রিকেটার হওয়ার আশা ছেড়ে দেবেন।’
‘এ+’ গ্রেডিংয়ে থাকবে দেশের সেরা ক্রিকেটাররাই। এরপর ‘এ’ গ্রেডে যারা থাকবেন তারা পাবেন ২৫ লাখ টাকা, ‘বি+’ ২০ লাখ, ‘বি’ গ্রেডে ১৫ লাখ, ‘সি’ গ্রেডে ৮ লাখ, ‘ডি’ গ্রেডে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাবে ক্রিকেটাররা। বেশির ভাগ ক্রিকেটারই থাকবে ‘বি’ থেকে ‘ই’ গ্রেডের মধ্যে। প্রস্তাবিত টাকার এই অংক নিয়ে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘সামান্য সংখ্যক ক্রিকেটারই থাকবে ‘এ+’ ও ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। এখানে যারা আছে শুধু তাদেরই নিয়ে ভাবলে হবে না। বড় একটি অংশ যারা জাতীয় দলে নেই তারা কি করবে? ধরেন আমি যদি এ গ্রেডে থাকি আর যদি নিজের চিন্তাই করি তাহলে কিভাবে হবে? আর শেষ পর্যন্ত যদি এটাই করা হয় তাহলে কষ্ট হলেও আমাদের জন্য বিসিবি’র সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। কিছু করারও থাকবে না।’
তিনি বলেন, প্রিমিয়ার লীগের আয়টাই হচ্ছে আমাদের ক্রিকেটারদের সারা বছরের বড় উপার্জন। যদি ঘরসংসার বাদ দিয়ে সারাবছর ক্রিকেট খেলেই চলতে হয় তাহলে একজনের পক্ষে কি এই আয়ে চলা সম্ভব? আমি মনে করি না। এই যদি হয় আর এ ভাবেই যদি চলতে থাকে তাহলে অনেকেই ক্রিকেট ছেড়ে দেবে। কারণ তাকে তখন নিজের ঘর-পরিবার চালানোর জন্য আগে আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এর পর ক্রিকেটের জন্য সময় বের করতে হবে। প্রিমিয়ার লীগের দলবদল শুধু জাতীয় দলের কথা ভেবে করলেই হবে না। অন্যদের সাবর কথাও চিন্তা করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি বিসিবি এমন কিছু করবে না। ’
তবে এ বিষয়ে বিসিবি’র কোনো পরিচালকই মুখ খুলতে রাজি নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রিকেটার বলেন আমরা ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের একটি ভূমিকা থাকবে বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু সেটি হবে না। কারণ কোয়াবের নেতারাই জড়িত বিসিবির সঙ্গে। আর ক্লাবের পরিচালকরাতো বিসিবিরও পরিচালক তাই তারাও চাইবেন নিজেদের ক্লাবের ইচ্ছাই যেন বোর্ডে প্রতিফলিত হয়।’



মন্তব্য চালু নেই