আমি কী পারি, লোকে তা জানে না .. ইউসুফ

দিলিপ মজুমদার, কলকাতা প্রতিনিধিঃ
ঘামে ভেজা জার্সিটা তখনও গায়ে৷ কিন্ত্ত এসবে কোনও ভ্রূক্ষেপ আছে বলে মনে হল না৷ মুখের হাসিটাও যেন ‘কেমন দিলাম’ গোছের! তাঁরই বলার রাত৷ পরপর বললেনও ইউসুফ পাঠান৷
কী বলছিলেন তিনি? প্রায় মাঝরাতে সিএবি ক্লাব হাউসের তিনতলায় মিডিয়াকে ইউসুফ বললেন–
… বেশি কিছু ভাবিনি৷ তখনও ৮০ রানের মতো দরকার ছিল৷ ঠিক করলাম, যা বল আসবে, তাই মারব৷ ওভারে অন্তত ১৫ রান চাই৷
… আমি তো প্রথম থেকেই ইডেনে প্লে-অফ খেলতে চেয়েছি৷ প্রথম বলে আউট হলে আপনারা যে আরও গালি দিতেন, জানতাম৷
… লোকে জানে না আমি কী করতে পারি৷ সমালোচনায় কান দিইনি৷ আমি তো জানি, কী পারি৷ রানের জন্য কত পরিশ্রম করেছি জানেন?
… যখন রান পাইনি, প্রচুর ভেবেছি কেন এমন হচেছ৷ পরে ভাবলাম, আমি তো পরীক্ষার পড়া ঠিকই করেছি৷ এরপর ভাল ফল না হলে আমার দোষ কোথায়? আমি তো চেষ্টার ত্রূটি রাখিনি৷
চ্ঞ বিশ্বাস করুন, লোকে গালি দিলেও মাথা ঘামাইনি৷ কেউ এমন বলার জন্য টাকা পায়৷ আমি খেলে টাকা পাই৷ এভাবেই দেখেছি৷
মধ্যরাতই৷ তখনও ক্লাব হাউসের ভিতরে গিজগিজে ভিড়৷ সাংবাদিক সম্মেলন সেরে শনিবাসরীয় নায়ক যখন একতলায় লিফ্ট থেকে বেরলেন, নিমেষে ঘেরাও হয়ে গেলেন ভক্তদের মধ্যে৷ কেউ অটোগ্রাফ চায়৷ কেউ চায় পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে৷ এমন দিনে বরোদার পাঠান পরিবারের বড় ভাই কাউকে নিরাশ করতে চাইলেন না৷ শেষমেশ নাইট কর্তারা কোনওরকমে ইউসুফকে ভিতরে নিয়ে গেলেন৷
অবিশ্বাস্যই বটে৷ ২২ বলে ৭২৷ পাঁচটি চার, ছ’টি ছক্কা৷ যার একটি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের দিকের গ্যালারির আপার টিয়ারে গিয়ে পড়ল৷ জায়াণ্ট সি্ নে ফুটে উঠল ৯৭ মিটার! সাধে কি আর ম্যাচের শেষে গৌতম গম্ভীর বললেন, “এমন ব্যাটিং কখনও দেখিনি৷ হয়তো স্বপ্ণেই দেখেছি৷ বাস্তবে এমন ইনিংস আবার কখনও দেখব কি না জানি না৷” আর এক ধাপ এগিয়ে রবীন উথাপ্পা বলছিলেন, “জানতাম এখান থেকে ম্যাচ বের করতে পারে শুধু পাঠানই৷ ও কিন্ত্ত রানের মধ্যেই ছিল৷”
ইউসুফ যতই বলুন সমালোচনায় কান দেননি, আসলে দিয়েছেন৷ তা না হলে হাসি হাসি মুখেও এমন ক্ষোভ ঠিকরে বেরবে কেন? তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, এই ইনিংস কাকে উত্সর্গ করবেন? জবাব এল, “ফ্যানেদের৷ আর আমার বাবা-মাকে৷” আউট হয়ে যখন ফিরে আসছেন, তখনও কয়েকটা রান বাকি৷ ভেবেছেন যদি রানটা না হয়? ইউসুফের জবাব, “আমি জানতাম, আমার কাজ করে এসেছি৷ তখন তো বলপিছু এক রান করে দরকার ছিল৷ বুঝে গিয়েছিলাম, রানটা উঠে যাবে৷”
সদ্য বাবা হয়েছেন৷ আর তারপর থেকেই তাঁর ব্যাটে রান আসতে শুরু করেছে৷ একটু আফসোস, শাহরুখ ভাইয়ের সামনে এই ইনিংসটা খেলা হল না৷ আবার নিজেই বললেন, “উনি কাজে ব্যস্ত৷ মাঠে না এলেও টিভিতে নিশ্চয়ই দেখেছেন৷ পরের ম্যাচে ঠিক আসবেন৷”
কলকাতাও এমনই বিশ্বাস করে আছে৷



মন্তব্য চালু নেই