ইউপি চেয়ারম্যানের দম্ভোক্তি

আমি এমপির লোক

‘আমার পেছনে স্থানীয় সাংবাদিকরা লেগেছে। ব্যাটাদের হাড্ডি গুঁড়ো করবো। দুর্নীতি করেছিতো কি হয়েছে, মানুষ খুন করেও কিছু হয়না। আর এটাতো দুর্নীতি। যান, আমার সম্পর্কে যা ইচ্ছা লেখেন। আমার পশমও ছিড়তে পারবেন না। আমি এমপির লোক। এমপির পরামর্শেই সব করি।’ এমন দম্ভ ভরে কথাগুলো বললেন এক ইউপি চেয়ারম্যান।

তার বিরুদ্ধে লোক দেখানো খনন করে করে প্রকল্পের ২ কোটি টাকাই মেরে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই অভিযোগের সত্যতা জানতে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ওই ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোন করা হলে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়ন পরিষদ আমজাদ হোসেন। নোনা নদী ও বগুলাখাড়ি খনন প্রকল্পে দুঃস্থ ও গরীবদের কাজ করার কথা থাকলেও তা না করে তিনি ভেপু দিয়ে মাটি খননের কাজ করান। এতে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হয় এলাকার দরিদ্র-দুঃস্থরা।

বিরণ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজের বিনিময়ে দেয়। এ অর্থে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৯৩০ টাকা ব্যয়ে বিরল উপজেলায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার কাজ, ৪১ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৬ টাকা ব্যয়ে নোনা নদী ও ৩ কিলোমিটার বগুলাখাড়ি পাকা ও রেফারেন্স/সেকশন কাজ, ৬ লাখ ৩ হাজার ১৮১ টাকা ব্যয়ে পুকুর খনন এবং ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮১৭ টাকা মাটি খননের কাজ কাজ করার কথা রয়েছে।

এছাড়া স্লুইজ গেট ও অফিস নির্মাণ বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয় ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৪৮৯ টাকা। ২টি প্রকল্পের সর্বমোট বরাদ্দ ১ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ৩০৬ টাকা। প্রকল্পের কাজ এলসিএস এর মাধ্যমে করে।

প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী গ্রুপে ২৫ জন করে কমিটি করে কাজ করার নিয়ম থাকলেও মোট ১৩ টি গ্রুপে পৃথকভাবে ৩২৫ জনের কাজের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন।

কাগজে প্রকল্পের নাম থাকলেও বাস্তবে নেই এমন তালিকা বিজোড়া ইউনিয়নের বহলা গ্রামের ১ নং গ্রুপের সভাপতি আব্দুল গনি ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার আলী, বহলা গ্রামের ২নং গ্রুপের সভাপতি আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক, দোগাছি গ্রামের ৩ নং গ্রুপের সভাপতি আয়ুব আলী ও সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলী, দক্ষিণ বহলা গ্রামের ৪নং গ্রুপের সিরাজউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মমতাজ, বহলা গ্রামের ৫নং গ্রুপের সভাপতি সামসুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আক্তার বানু, বিজোড়া গ্রামের ৬ নং গ্রুপের মফিজুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কহিনুর বেগম, ভবানীপুর/জুগিহারী গ্রামের ৭নং গ্রুপের সভাপতি অবায়দুর ও সাধারণ সম্পাদক আরজিনা বেগম, বহলা গ্রামের ৮ নং গ্রুপের সভাপতি আব্দুল জলিল ও সাধারণ সম্পাদক উন্মে আরা, বহলা গ্রামের ৯ নং গ্রুপের সভাপতি আব্দুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক নুরইসলাম, বিরল নয়ামেলা গ্রামের ১০ নং গ্রুপের সভাপতি জিয়াউর রহমান জিয়া ও সাধারণ সম্পাদক রুবিনা, দোগাছি গ্রামের ১১ নং গ্রুপের সভাপতি মোমতাজ বেগম ও সাধারণ সম্পাদক মাফুজা বেগম, ধর্মদহ গ্রামের ১২ নং গ্রুপের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব আলী, সাধারণ সম্পাদক মোহসেনা বেগম, মানপুর গ্রামের ১৩ নং গ্রুপের সভাপতি হারুন রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক আনন্দ চন্দ্র রায়।

জুন মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আংশিক কাজ করে প্রকল্পের সভাপতি আমজাদ হোসেন অফিস ম্যানেজ করে ৩টি চেকের মাধ্যমে প্রায় সম্পূর্ণ পরিমান অর্থ পকেটে ভরেছেন।

এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রৌফ জানান, লোকজন না পাওয়ার কারণে ভেপু দিয়ে খননের কাজ হয়েছে। সমস্যা হয়নি কাজের। যে ভাবে হোক টাকা নিয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছু একটি সূত্র জানায়, জুনের মধ্যে কাজ শেষ না হলেও স্থানীয় এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধরীর নাম ভাঙিয়ে সব টাকা ঠিকেই উত্তোলন করেন চেয়ারম্যান আমজাদ। কিছু হলেই তিনি এমপি’র নাম ভাঙিয়ে চলেন। উপজেলার পদস্থ কর্মকর্তাদের তিনি তোয়াক্কা করেন না। তিনি বলেন, ‘এমপি আমার লোক। এখানে থাকার ইচ্ছা হলে আমার কথা শুনতে হবে। তা না হলে পাছায় লাথ্থি মেরে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিবো। আমি যা করি এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধরীর পরামর্শে করি।’



মন্তব্য চালু নেই