‘আমার স্বামীই আমাকে হোটেলে আসতে বলে জয়নালের সাথে’…

আমার কোনো পরকীয়া নেই। আমি অপহৃতও হইনি। আমি আমার বাবার বাড়িতেই আছি।’ সিলেটের আদালতে জবানবন্দিকালে এ কথা জানিয়েছেন সিলেটে অপহরণ মামলায় উদ্ধার হওয়া বধূ তানিয়া আক্তার আঁখি।

নগরের সুবহানীঘাট এলাকার স্বামী জাকির হোসেন দীপুর করা অপহরণ মামলায় পুলিশ তাকে সিলেটের মেডিকেল কলোনি এলাকা থেকে উদ্ধারের পর আদালতে তিনি এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ‘২০১৪ সালে জাকির হোসেন দীপুর সঙ্গে পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী দীপু আমাকে টাকার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। আর এই নির্যাতনের ঘটনায় পারিবারিকভাবে অশান্তি দেখা দেয়। এ কারণে তাকে প্রায় সময় পিতার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।’

আঁখি জানান, ‘এসব ঘটনার পর সালিশের মাধ্যমে পারিবারিক বিরোধের নিষ্পত্তি হয়। এরপর আমি স্বামীর বাড়ি চলে আসি।’ গত সোমবার সিলেটে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসব তথ্য জানিয়ে আঁখি বলেন, এখন যাকে জড়িত করে তার সঙ্গে কুৎসা রটানো হচ্ছে, তাকে তিনি চিনেন না। ২০১৫ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর সিলেটের দরগাহ গেটের মইরুন্নেছা আবাসিক হোটেলে জয়নালের সঙ্গে বসবাসের কথা অস্বীকার করেছেন।

আঁখি বলেছেন, ঘটনার দিন তার স্বামী দীপু তাকে হোটেলে আসতে বলে। এরপর জয়নালকে এনে তার সঙ্গে ছবি তোলে। হোটেলের খাতায় স্বাক্ষর নেয়। এরপর তাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন আঁখি। আঁখি আরও জানান, এসব ঘটনার পর তিনি সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামী দীপুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। আর এ মামলায় দীপু কিছুদিন জেলও খেটেছে। আর এই আক্রোশের কারণেই তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে আদালতে জানান আঁখি।

এদিকে, তানিয়া আক্তার আঁখির জবানবন্দিকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন স্বামী জাকির হোসেন দীপু। তিনি গতকাল জানিয়েছেন, ওই দিন জয়নালের সঙ্গে আঁখি হোটেলের ১০৮ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেছে, সেটি হোটেলের রেজিস্ট্রারে রক্ষিত হয়েছে। আর এসব বিষয় নিয়ে তিনি ২১শে সেপ্টেম্বর সিলেটের কোতোয়ালি থানায় একটি জিডিও করেছিলেন। ওই জিডির সূত্র ধরে কোতোয়ালি থানা পুলিশ তদন্ত করেছে। এসআই কামাল তদন্তকালে জয়নাল ও আঁখির পরকীয়ার বিষয়ে সত্যতা পেয়েছেন। অথচ আঁখি জবানবন্দিতে পুরো ঘটনাটি এড়িয়ে গেছে।

দীপু বলেন, জয়নালের সঙ্গে অবাধ পরকীয়ার কারণেই আঁখির সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ বাধে। আর এসব বিষয় নিয়ে পর পর দুটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে থানায়। অলৌকিক কারণে পুলিশ এসব জিডির তদন্ত করেনি বলে জানান তিনি। এদিকে, ৩০শে নভেম্বর জাকির হোসেন দীপু একটি মারামারির মামলায় কারাগারে গিয়েছিল। ওই মামলাটি করেছিলেন তানিয়া আক্তার আঁখির পিতা আতাউর রহমান। ওই সময় কোনো নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি বলে দীপু জানিয়েছেন।

তিনি জানান, ‘এসব ঘটনার পর একাধিক ব্যক্তিকে দিয়ে আঁখি ও তার পরিবার তাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছে। তারা আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়। কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকায় আমি সব সময় আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। এখন আঁখির পক্ষ নিয়ে নগরীর গার্ডেন টাওয়ার এলাকার এক প্রবাসীসহ কয়েকজন তাকে হুমকি দিচ্ছে। পাশাপাশি নানাভাবে হয়রানির করছে বলে জানান তিনি।’

এদিকে, এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সামাজিকভাবে শেষ করার জন্য সিলেটে পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু দুই পক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

-এমজমিন



মন্তব্য চালু নেই