“আমার ডায়াবেটিসের কারণে প্রেমিকা অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক করেছে…”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।

“আমি এই পেজের একজন নিয়মিত পাঠক। প্রতিদিন কত মানুষের কতধরনের সমস্যা দেখি। কিন্তু আমার সমস্যা একটু অন্যরকম। আমার বয়স ২৩। আমি সবার ছোট। আমার বড় দুই বোন আছে। এবং তারা বিবাহিতা। আমার বাবা শিক্ষক, এখন অবসর গ্রহন করেছেন। আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিঃ, ৩য় বর্ষে পড়ছি।

আমি যাকে ভালোবাসতাম ও আমার থেকে ১ বছর ছোট। মেডিক্যালে পড়ে। একমাত্র মেয়ে। ওর বাবা শিক্ষক আর মা সরকারী মেডিক্যালে সরকারী চাকুরীজীবী। আমাদের পরিচয় ২০১২ এর মাঝামাঝিতে। খুব ভালোই ছিলাম আমরা। ও ছিলো আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। সম্পর্কের এক বছর পর আমরা দুজনই আমদের নিজেদের পরিবারকে জানাই। আমার পরিবার থেকে তেমন আপত্তি ছিলো না, জাস্ট আমার মা বলেছিলো তোমরা আগে তোমাদের পড়াশোনা শেষ কর তারপর পারিবারিকভাবেই আমরা কথা বলবো। ওর পরিবার থেকে প্রথমে হালকা আপত্তি থাকলেও ও ম্যানেজ করে নিতে পারতো। এমনকি ওদের ডিমান্ড ছিলো সরকারী চাকুরি করে এমন কেউ।

যাইহোক, আমি ঢাকায় থাকি আর ও ঢাকা থেকে প্রায় ৩০/১০ কিমি দূরে একটা শহরে থাকে। দুর্ভাগ্যক্রমে ২০১৩ তে আমার ডায়বেটিস ধরা পড়ে। এখন নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। আমি সবকিছু ওকে পরিষ্কার করে বলি। ওর এটা নিয়ে কোন আপত্তি ছিলোনা। সে ওর পরিবারকে এগুলো জানায়। তারপর থেকে ওর পরিবার স্ট্রেইট না করে দেয় ওকে। তারপরও আমাদের যোগাযোগ, দেখা সবই হত। ভেবেছিলাম ওর আবদারের কারণে হয়তো তারা মেনে নেবে। কিন্তু দিন যত সামনে আসতে লাগলো ওর উপর পরিবারের চাপ তত বেশি আসতে লাগলো। এর মধ্যে ও প্রফ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। সারাদিন রাগারাগি হত আমাদের মধ্যে। আমি নাকি ওকে সাপোর্ট করতাম না। কিন্তু বিশ্বাস করুন আপু, আমি ওকে অনেক সময় দিতাম, ওকে বুঝাতাম।

এই বছরের শুরুতে ওর সাথে একটা ছেলের পরিচয় হয়। উনি ওদের সিনিয়র ভাইয়া ছিলেন পরে ওদের ডিপার্টমেন্টের লেকচারাল তারপর বিসিএস ক্যাডার। তার সাথে ও ঘন্টার ঘন্টা কথা বলতো। দিন রাত সবসময়। এই জিনিসগুলো আমি খুবই অপছন্দ করতাম, মানা করতাম। কিন্তু উনি ওকে ডাইভার্ট করছিলো। তারও একটা ৯/১০ বছরের সম্পর্ক ছিলো। একদিন খুব রাগ হয় তার ফোন অনেকক্ষণ ওয়েটিং দেখে। আমি ওকে বকা দেই যেটা আমি কখনই করতাম না। ধীরে ধীরে আমাদের মাঝে দূরত্ব বাড়ছিলো। প্রায় ৩/৪ মাস পর ঐ ছেলেটার সাথে তার একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়। তাদের মধ্যে কথা বার্তা বন্ধ থাকে। সে আবার ব্যাক করে। আমি খুব ভালোবাসতাম ওকে। আমি সবকিছু মেনে নেই।

কিন্তু তার ঠিক এক মাস পর ঐ ছেলেটা আবার তাকে ফোন দেয়। আবার শুরু হয় আগের মতই। আমি খুবই হতাশ হয়ে গেছিলাম। দীর্ঘক্ষন ওর ফোন ওয়েটিং থাকলে খুব খারাপ লাগতো। দূরত্ব বাড়তে লাগলো। ওর সাথে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। সে ওর মা বাবাকে ভালোবাসতো এবং তাদের বাঁধার কারণেই আমাকে ভুলে থাকতে চায় এবং আমাকে বলে ওকে ভুলে যেতে। কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবাসি। কীভাবে ভুলে থাকবো।

ঐ ছেলেটা ওকে বিয়ে করতে চায় এবং ও মোটামুটি রাজী। আমি এখন কী করতে পারি? শুধু মাত্র ডায়বেটিস হলেই কি মানুষের সব ইচ্ছা, স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় আপু? আমি জানি আমার সাপোর্ট নিয়ে ও ওর মা বাবার সাথে অনেক কথা বলেছে, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু, আমি তো ওকে হারালাম। আমি ওকে খুব ভালোবাসি। ও আমাকে ভালোবাসতো। ও হয়ত পরিস্থিতির স্বীকার। সে আমাকে বলে তাকে ক্ষমা করে দিতে। ওর মা বাবার উপর যেন কোন ক্ষোভ না রাখি। সত্যি কথা কি আপু, তাদের উপর আমার কোন ক্ষোভ নেই। আমি জানি আমাকে মেনে নিতে হবে কারণ দুর্ভাগ্য আমার। কিন্তু ও অন্য কারো হয়ে যাবে এটা আমি মানতে পারিনা। হয়ত এক থেকে দেড় বছরের মাঝে তাকে বিয়ে করতাম, কারণ আমার পরিবার থেকে সেই সাপোর্ট ছিলো। এখন আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙ্গে পড়েছি। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। আমি হেরে গেছি আপু। আমি সত্যি ই ডায়বেটিসের কাছে হেরে গেছি। আমার এখন কী করা উচিৎ একটু বলবেন?”

পরামর্শ:
ভাই, প্রথমেই বলে রাখি নিজেকে দোষ দেবেন না। অসুখ কারো স্বেচ্ছায় হয় না। ডায়াবেটিস খুবই সাধারণ একটি অসুখ, যে কারো হতে পারে। ডায়াবেটিস হয়েছে বলে কারো সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে, সেটা আজ প্রথম শুনছি। এটা একেবারেই একটি খোঁড়া যুক্তি, যেটা মেয়েটি আপনাকে সরল মানুষ পেয়ে ঠকাচ্ছে। ভালোবাসায় মানুষ মৃত্যু পথ যাত্রীকেও বিয়ে করে, যদি ভালোবাসা খাঁটি হয়। আর ভেজাল ভালোবাসা ভাঙতে বাহানার কোন অভাব হয় না। আর দ্বিতীয় কথা এই যে আপনি ভীষণ একটি ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বেঁচে আছেন ভাই। আপনি খুব ভালো মানুষ। মেয়েটিকে মন দিয়ে ভালবেসেছেন। তাই মেয়েটি যে আপনার সাথে সুক্ষ্ম একটি প্রতারণা করেছে, সেটি আপনি ধরতে পারছেন না।

খুব রাগ হচ্ছে আমার কথা শুনে? বুঝিয়ে বলছি, তাহলেই ধরতে পারবেন ফাঁকগুলো। আর আর আগে বলে রাখি, আমি নিজেও কিন্তু ভয়াব অসুস্থ একজন মানুষ। প্রতিনিয়তই আমাকে অসম্ভব শারীরিক অসুস্থতার সাথে লড়াই করতে হয়। কিন্তু সেটার পরও ব্যক্তিগত জীবনে আমার পাশে একজন চমৎকার মানুষ আছেন। তাই আশা করি বুঝতেই পারছেন যে ভালবাসার সামনে অসুস্থতা আসলে বাহানা ছাড়া আর কিছুই নয়।

এবার আসি মেয়েটির প্রসঙ্গে। ধরে নিলাম মেয়েটি আপনাকে খুব ভালোবাসতো, কেবল মা বাবার জন্যই সে আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে কারণ মা বাবাকেও সে খুব ভালোবাসে। তাহলে ভাইয়া, মা বাবা প্রথমে মানা করে দেয়ার পর তখনই কেন সে সরে যায়নি? কেন তাহলে আপনার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে নিয়ে গেছে? লক্ষ্য করে দেখুন, মেয়েটির পরিবর্তন কিন্তু তৃতীয় ব্যক্তির আগমনের পর অয়েছে, তার আগে নয়! তারপরও ধরুন, তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম যে মেয়েটি পরিবারকে রাজি করানোর অনেক চেষ্টা করেও যখন পারেনি, তখন ওই ছেলেটিকে আঁকড়ে ধরেছে আপনার কাছ থেকে দূরে যাবার জন্য। কিন্তু আসলে কি তাই? না ভাইয়া, সে কেবল আপনাকে ব্যবহার করেছে। আর তাই তো ওই ছেলেটি তাঁকে ছেড়ে দেয়ার পর সে আবারও আপনার কাছে ফিরে এসেছে। আর এখন যখন ওই ছেলে আবার ফিরে এসেছে, তাই মেয়েটির আসল রূপ ফিরে এসেছে। আবারও সে ওই প্রেমিকের কাছে চলে গেছে আর আপনাকে হরেক রকম বাহানা দিচ্ছে।

মানুন আর নাই মানুন ভাই। এটাই বাস্তবতা। অন্তত তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে আমি এটাই দেখতে পাচ্ছি। এখন আপনিই বলুন, এই মেয়েটিকে কি আসলেই আপনি জীবনে সঙ্গী হিসাবে চান? এর সাথে কি আপনি ভালো থাকবেন? যাকে আপনি ভালোবাসেন, তাঁর সাথে কখনোই ভালো থাকবেন না ভাইয়া। সে আপনাকে ভালোবাসে, ভালো তাঁর সাথেই থাকবেন। আমার তো মনে হচ্ছে যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। বিয়ের আগেই মেয়েটির আসল চেহারা দেখা হয়ে গিয়েছে আপনার। এই মেয়ের জন্য পাগল হয়ে নিজের আত্মসম্মান না হারিয়ে বরং ভাই চেষ্টা করুন তাঁকে জীবন থেকে দূর করার। কষ্ট হলেও এটাই আপনার জন্য ভালো হবে।



মন্তব্য চালু নেই