প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত থাকতে চাই না
আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো বিরোধ নেই
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেছেন, ‘নোবডি ক্যান ব্রেক জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টিকে কেউ ভাঙতে পারবে না। এটা অসম্ভব। জাতীয় পার্টি ছিল, আছে থাকবে।’
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি দীপ্ত কণ্ঠে এ কথা জানান।
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ক্ষমতাবলে দলের মহাসচিব পদ থেকে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে অব্যাহিত দেন এরশাদ। একই সঙ্গে রুহুল আমিন হাওলাদারকে ফের মহাসচিব ঘোষণা করেন।
রুহুল আমিন হাওলাদারকে মৌখিকভাবে মহাসচিব ঘোষণায় দলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘এটা দলের গঠনতন্ত্রে দেয়া আছে।’
এরশাদ বলেন, ‘রুহুল আমিন হাওলাদার ১৪ বছর দলে মহাসচিব ছিলেন এবং সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তাকে আমি সরিয়ে দিয়ে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাসচিব করেছি এবং ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছিলাম। কিন্তু তখন কেউ প্রশ্ন তোলেনি। আমি দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এটা করেছি।’
জিয়াউদ্দিন বাবলুর প্রতি অভিযোগ করে এরশাদ বলেন, ‘দুই বছর মহাসচিবের দায়িত্ব পেলেও বাবলু একটি বর্ধিত সভা ও প্রেসিডিয়াম সভাও ডাকতে পারেননি। তাই আমি বাবলুকে দলের মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দলের সাবেক সফল মহাসচিব রুহুলকে করলাম।’
এরশাদ বলেন, ‘জাপা বিভিন্ন প্রয়োজনে মহাসচিবদের দায়িত্ব দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও করেছে। পার্টির স্বার্থেই এগুলো করেছি। তার ধারাবাহিকতাই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করেছি। এই সিদ্ধান্তকে একটি চক্র মেনে নিতে পারেনি। এই চক্রে আছে বাবলু ও আরেকজন। এদের সাথে দশ জন লোকও নেই।’
রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রওশদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হননি। হতে পারেন না। এগুলো রওশনের বক্তব্য না। বাবলু ঘোষণা দেয়ার কে? আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। উনি বিরোধীদলীয় নেত্রী। উনি সংসদে পার্টির ভূমিকা পালন করেন। আমি দল পরিচালনা করি।’
রোববার (১৭ জানুয়ারি) রংপুরে কর্মী সম্মেলনে এরশাদ ছোটভাই জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণার পর দলটির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। এ ঘটনায় বেজায় চটেন রওশনপন্থিরা।
সোমবার সন্ধ্যায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকে রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত হয়। গুলশানে রওশনের বাসায় দ্বিতীয় দফা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু।
বাবলু বলেন, ‘এরশাদ দলীয় গঠনতন্ত্র না মেনেই তার ছোট ভাইকে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে কোনো ফোরামেই তিনি আলোচনা করেননি। আমরা গঠনতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সর্বসম্মতিক্রমে রওশন এরশাদকে দলের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সোমবার রাতে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছিলেন, ‘জিয়াউদ্দিন বাবলু সাহেব যেভাবে ছটফট করছেন, তাতে তার পদ নিয়ে সন্দিহান আছে।’ চেয়ারম্যান ঢাকায় আসার অপেক্ষায় আছেন বলেও জানান তিনি।
অবশেষে রুহুল আমিন হাওলাদারের সন্দেহ সত্যে পরিণত হলো। পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ তাকেই ফের মহাসচিব বলে ঘোষণা করলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠায় বিতর্কে পড়েন এবিএম রুহুল আমিন। এরপর তাকে হটিয়ে ওই বছর ১০ এপ্রিল রাতে পার্টির চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা মোতাবেক রুহুল আমিন হাওলাদারের জায়গায় জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব নিয়োগ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত থাকতে চাই না
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত থাকতে চান না বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
মঙ্গলবার বনানীতে এরশাদের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে নিজেই একথা জানান।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই পদ থেকে পদত্যাগের জন্য আমি প্রধামন্ত্রীর কাছে গিয়ে অনুরোধ করবো। এই পদে আর থাকতে চাই না। সংগঠনের জন্য সারা দেশ ঘুরে বেড়াতে চাই ও কাজ করতে চাই।’
গত পরশুদিন রংপুরে এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও তার ছোটভাই জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান এবং উত্তরসূরী ঘোষণা করেন। এদিকে ঢাকায় পার্টির সরকার সমর্থক সাংসদ ও সভাপতিমণ্ডলীর নেতাদের একাংশের ‘যৌথ সভা’ থেকে এরশাদের সিদ্ধান্তকে ‘গঠনতন্ত্রবহির্ভূত’ ঘোষণা হয়। সেইসঙ্গে এরশাদের স্ত্রী বিরোধী দলীয় নেতা রওশনকে দলের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন’ করা হয়েছে বলে জানান পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
এতে একাধিকবার ভাঙনের মুখে পড়া জাতীয় পার্টিতে নতুন দেখা দেয় সঙ্কট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এরশাদ জিয়া উদ্দিন বাবলুকে অব্যাহতি দিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদে পুনর্বহাল করলেন।
আর রওশন এরশাদের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন’ হওয়ার বিষয়ে এরশাদ বলেন, ‘ওটা রওশনের স্টেটমেন্ট ছিল না, ছিল বাবলুর স্টেটমেন্ট।’
মন্তব্য চালু নেই