আমাদের অবহেলায় প্রতিদিনই ১০০টি হাতি হত্যা করা হচ্ছে

মানুষের অসচেতনতা, অবহেলা আর ব্যক্তিগত স্বার্থ লাভের চিন্তায় আমাদের প্রকৃতি থেকে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার প্রাণী হত্যা করছি। পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এমন প্রাণীগুলোর তালিকায় রয়েছে আফ্রিকার হাতিও। বিশালদেহী এই প্রাণীটি যে হারে বিলুপ্ত হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এক সময় এ প্রাণীটির আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।

এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৩৬ হাজার হাতি হত্যা করা হয়। এই হিসেবে প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে ১শ হাতি। কয়েক দশকে হাতির সংখ্যা ৬৪ ভাগ কমেছে। যে হারে হাতি হত্যা করা হচ্ছে সে হারে হাতি জন্মাচ্ছে না। অর্থাৎ জন্ম মৃত্যুর হার সমান তালে মিলছে না। আর এ কারণে হাতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। ২০১৫ সালের মধ্যে আফ্রিকা থেকে হাতি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রকৃতিতে হাতি খুব জটিল, উচ্চবুদ্ধি সম্পন্ন এবং খুবই সামাজিক একটি প্রাণী। তারা স্থলের সবচেয়ে বড় প্রাণী। তাদের ওজন হয় ৫ হাজার থেকে ১৪ হাজার পাউন্ডের মত। আর লম্বায় এরা প্রায় ১৩ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। নিজেদের কান দিয়ে এরা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বিশালদেহী এই প্রাণীরা দলবদ্ধ হয়ে বাস করতেই ভালবাসে। দলের কেউ অসুস্থ হলে সবাই মিলে তার যত্ন নেয়। হাতিরা দাঁতের সাহায্যে যুদ্ধ, খাবার খাওয়া এবং খেলাধুলা করে থাকে।

কেনিয়াতে বর্তমানে হাতির সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। বিশ্বজুড়ে হাতির দাঁতের চাহিদা প্রচুর। হাতির দাঁত সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়ত হাতিকে হত্যা করা হচ্ছে। আর এ কারণে কয়েক দশকের মধ্যেই হয়ত আফ্রিকা থেকে হাতির সংখ্যা একেবারেই কমে যাবে। এশিয়া এবং চীনে হাতির দাঁতের জন্য এর খুব চাহিদা। আর একারণে হাতির দাঁত সংগ্রহ করতে গিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ি প্রতিনিয়ত হাতিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়া কালো বাজারে হাতির দাঁতের দাম খুব চড়া।

প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় অন্যান্য প্রাণীর পাশাপাশি হাতির গুরুত্ব অপরিসীম। এরা বাস্তুসংস্থানে সাহায্য করে। এরা বীজ ছড়িয়ে দিতে এবং প্রকৃতি বৈচিত্র রক্ষায় সাহায্য করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশে বাণিজ্যিকভাবে হাতির দাঁত কেনাবেচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চীন এতে সামিল হয়েছে যেন হাতির দাঁত অবৈধভাবে কেনাবেচা করা না হয়। এছাড়া বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংস্থার উদ্যোগে হাতি হত্যার বিরুদ্ধে শিকারীদের উৎসাহিত করছে এবং প্রকৃতিতে হাতির বসবাসের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিকভাবে ১৯৮৯ সাল থেকে আফ্রিকার হাতির দাঁত কেনাবেচা নিষিদ্ধ। তবুও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাতির দাঁত সংগ্রহের জন্য নির্বিচারে হাতি হত্যা করছে। এদের ঠেকানো না গেলে আমরা হয়ত এই প্রাণীটিকে আর রক্ষা করতে পারব না।



মন্তব্য চালু নেই