‘আমাগো শেষ সম্বলটুকুও কাইরা নিল সর্বনাশা মেঘনায়’

এক মাসের মধ্যে চার বার রাঙ্গুসী মেঘনায় আমাগো ঘর-বাড়ি ভাঙছে। অনেক জমি-জমা গাছ-পালা আছিল এহন আর কিছুই নাই। সর্বনাশা মেঘনা নদী আমাগো শেষ সম্বলটুকুও কাইরা নিছে। এ বলেই কেঁদে ফেললেন ভোলার সদর উপজেলার উত্তর ইলিশা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কালুপুর গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন (৬০)। মেঘনার তীব্র ভাঙনে আমজাদ হোসেনকে জমি-জমা হারিয়ে পাগলের মত হয়ে পড়েছেন।

সব হারিয়ে রাস্তার এক কোণে ঝুপড়ি ঘর তুলে আশ্রয় নিলেও তাও সোমবার রাতে মেঘনার নদীতে বিলিন হয়ে যায়। নাজমা আক্তার (২৩) এক সন্ত্রানের জননী। পাঁচ বছর আগে তার স্বামী নদীতে মাছ শিকার করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তার পর থেকে অভাব দুঃখ আর দুরদশার মধ্যে কাটে তার জীবন। মেঘনার ভাঙনে তার একমাত্র আশ্রয়টি নদীতে বিলিন হয়ে যায়।

আশ্রয় কেন্দ্রের অভাবে রাস্তার এক পাশে বাঁশ ও কাগজ দিয়ে কোনো রকমে ঘর তুলে বসবাস করছেন তিনি। ভোলার মেঘনার নদীর বাঙ্গনের ফলে ইলিশা ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামের এই দুই পরিবার ছাড়াও কয়েক শত পরিবার তাদের ঘর-ভিটা, জমি-জমা হারিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো সাহায্য জোটনে না তাদের ভাগ্যে। ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান শাজল বেপারি জানান, প্রতিবছর এই এলাকার যে বরাদ্দ আসে তাতে তাদের সবার ভাগ্যে জোটেনা।

তবে নদী ভাঙন রোধ করার জন্য সরকারিভাবে সাহায্যের চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, অসহায় এ পরিবাগুলোর জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। জানা যায়, মেঘনার ভাঙনের ফলে অনেক বসত-বাড়ি ফসলি জমি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীতে বিলিন হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার নদীর পাড়ে রাস্তার পাশে বাঁশ ও কাগজ দিয়ে ঘর তুলে বসবাস করছেন। কাজ না থাকায় অনেকের ভাগ্যে দু’বেলা খাবার জোটে না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদে থাকার জন্য একটি আশ্রয় কেন্দ্রে দাবি জানান তারা।

ভোলা জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, ভাঙন কবলিতদের মাঝে সাহায্য বিতরণ করা হবে। এদিকে ভাঙন কবলিতদের দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার কারণে এ বছর ভোলা নদী ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাওবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হেকীম জানান, মেঘনার স্রোত তীব্র হওয়ায় বাঁধ ভেঙে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণে কোনো অবহেলা করেনি। তিনি বলেন, এখন বর্ষা মৌসুমে নদীর স্রোত তীব্র হওয়ায় কোন কাজ করতে পারছি না। তবে বর্ষা শেষ হলে এবার শক্ত বাঁধ নির্মাণ করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই