আমাকে হৃদয়ে রাখবেন, ছুড়ে ফেলবেন না : মমতা

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মানে শুক্রবার অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাকে আপনাদের হৃদয়ে রাখবেন। ছুড়ে ফেলে দেবেন না যেন।’

মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টির রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যম-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রায় শ’ খানেকেরও বেশি বিভিন্ন পর্যায়ের তারকার উপস্থিতিতে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানটি দুইবাংলার মিলন মেলায় পরিণত হয়।

ঢাকায় অবস্থিত ভারতের হাইকমিশন গণমাধ্যমকে জানায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন শুক্রবার একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানটি খুবই প্রাণবন্ত ছিল। হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন অনুষ্ঠানটি শুরু করলেও পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। আর ফাঁকে ফাঁকে তিনি বক্তব্য দেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজের লেখা কবিতার চার লাইন আবৃত্তি করেন। মমতার অনুরোধে আসাদুজ্জামান নূর অতিথিদের সামনে সাবলীল ভঙ্গিতে আবৃত্তি করেন।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে মঞ্চে ডাকেন এবং আবৃত্তি করার অনুরোধ করেন। এ সময়ে এরশাদ মঞ্চে এসে দুইটি কবিতা গ্রন্থের নাম বলেন। কিন্তু কোনো কবিতা মনে করতে পারছিলেন না এরশাদ। তখন এরশাদকে যে কোনো কবিতার চার লাইন আবৃত্তি করার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু কোনো কবিতার অংশ মনে না পড়ায় এরশাদ ব্যর্থ হন। এরপর তাকে এক লাইন আবৃত্তি করার অনুরোধ করা হলে, তিনি আবারও ব্যর্থ হন।

এরই ফাঁকে ফাঁকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজের মনের কথা খুলে বলেন। মমতা বলেন, ‘আমাকে আপনাদের হৃদয়ে রাখবেন। ছুড়ে ফেলে দেবেন না যেন।’

অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে মমতা বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি নেতারাও আছেন। সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকব, এটাইতো আমাদের বাংলা, আমাদের মাটি।’ এই সময়ে তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে ভুল করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলে ফেলেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই ভুল বুঝতে পারায় তা সংশোধন করে নেন।

আরেক পর্যায়ে মমতা বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমার ভাষার সম্পর্ক, আত্মার সম্পর্ক। রবীন্দ্রনাথ আর নজরুল দুই বাংলাকে এক করে গেছে। আপনি-আমি আলাদা করব কীভাবে।’

অন্য এক ফাঁকে মমতা বলেন, ‘তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র চির বহমান। এদের মধ্যে কোনো ভাগ নেই। নেই কোনো ভেদ। আমরা চাইলেও ভাগাভাগি করতে পারব না।’

পশ্চিমবাংলার পর্যটন নিয়ে তৈরি করা একটি তথ্যচিত্রের (ভিডিও ডকুমেন্টারি) পরিবেশনা পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে চলছিল।

অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে ভারতীয় খ্যাতিমান এক গায়ক ‘তাকডুম তাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’ শীর্ষক সঙ্গীত পরিবেশন করলে উপস্থিত সকলের মধ্যে প্রাণের ছোঁয়া খেলে যায়। ওই গানটির পরিবেশনার সময় সকলের মাঝে যেন নিষ্পাপ অনুভূতি আর উচ্ছ্বল আনন্দ খেলা করছিল।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চের আশেপাশে খুব বেশি বসার আসন ছিল না। তাই আগত অতিথিরা এক সময় মঞ্চের ওপর পা দুলিয়ে বসে পড়েন। যেমন, পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিস ইসলাম মাহমুদের পাশে পা দুলিয়ে বসেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তার পাশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ এবং তার পাশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এরপর-পরই অনুষ্ঠানে মঞ্চের সামনে পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা হয়ে যায়।

এ সময়ে সবাই গোল হয়ে বসে নিজেদেরই (উপস্থিত সকল অতিথি) পরিবেশনায় করা অনুষ্ঠান নিজেরা উপভোগ করেন।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রীরা যখন অনুষ্ঠানে আসেন তখন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তাদেরকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রীদের মধ্যে আমির হোসেন আমু, শাজাহান খান, রাশেদ খান মেনন, আসাদুজ্জামান নূর, নসরুল হামিদ বিপুর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. মশিউর রহমান, গওহর রিজভী, এইচ টি ইমাম উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দীপু মনি, ফারুক খান, খালিদ মাহমুদ, মাহবুবুল হক হানিফসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও লে. জে. (সাবেক) মাহবুবর রহমানকে দেখা গেছে।

এ ছাড়া কণ্ঠশিল্পী ইফফাত আরা নার্গিস, নাট্যব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক, অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান আহমদসহ অনেক বিখ্যাত এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে হাই কমিশনার পঙ্কজ শরনের দেওয়া অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান সম্পর্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানটি খুবই প্রাণবন্ত ছিল। এ জন্য হাইকমিশনার পঙ্কজ শরনকে ধন্যবাদ।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ওই অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকবার জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় ভারত, বন্দে মাতরাম বলেছেন। যা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে এবং আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সচরাচর কোনো অতিথিকে উপলক্ষ্য করে এমন প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান দেখা যায় না। যা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে হয়েছে। এ জন্য সকল কৃতিত্ব মমতা বন্দোপাধ্যায়েরই।’



মন্তব্য চালু নেই