আবার আশায় বুক বেঁধেছে বিএনপি

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের আবারো সংলাপের তাগিদে নতুন আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে সংসদের বাইরে থাকা বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

ব্যারিস্টার মওদুদের বইয়ে দল ও চেয়ারপারসনের সমালোচনা, সারদা অর্থায়নে শরিক জামায়েত ইসলামীর জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ এসব নিয়ে এমনিতেই চরম বিপাকে রয়েছে বিএনপি।

এসবের মধ্যেও বান কি মুনের নতুন করে সংলাপের তাগিদ দেয়াকে টনিক হিসেবে কাজে লাগাতে চায় দলটি।

দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা মনে করছেন, ৫ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচন এখনো জাতিসংঘের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়নি। ফলে কয়েক মাস পর পর নতুন করে সংসদের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংলাপের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিৎ দেশের গণতন্ত্রণকে আবারো সুসংহত করতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে সংলাপ আয়োজন করা। সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের উপায় একটাই।

বিরোধী নেতাকর্মীদের জেলে আটকে রেখে এবং পুলিশ-র‌্যাব দিয়ে আন্দোলন ঠেকিয়ে ক্ষমতায় বেশি দিন থাকা যাবে না। ফলে এই অবৈধ সরকারকে অবশ্যই সংলাপের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার বলেন, ‘এর আগেও বান কি মুন সংলাপের কথা বলেছিলেন। এজন্য তার প্রতিনিধিকেও পাঠিয়েছিলেন। দেশের সিংহভাগ মানুষও চায় সংলাপের মাধ্যমে একটা সমাধান হোক। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভোটারবিহীন প্রার্থীহীন নির্বচানের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে মনে করছে এবং বলছে তারা পাঁচ বছরই ক্ষমতায় থাকবে, ছাড়বে না। এমনটা যদি হয় তাহলে আমাদের আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না। বিএনপি জনগণকে নিয়ে কঠোর আন্দোলনে মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাবে।’

বিএনপি কোনো সংঘাত চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের উচিৎ হবে এসব কথা না বলে, বান কি মুনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা। আলোচনার মাধ্যমে সকল দলের মতামত নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা কীভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সংঘাত এড়ানো যায়। আমরা তা-ই চাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে আলোচনায় আসতেই হবে, অন্যথায় জনআন্দোলনে তাদের পতন হবে। তাদের পরিণতি অত্যন্ত করুণ হবে।’

বান কি মুন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে আবারো সংলাপের আহ্বান জানানো প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও বান কি মুন শেখ হাসিনাকে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তখন হাসিনা বলেছিলেন, এটা (৫ ) জানুয়ারি) সংবিধানিক ধারাবাহিকতার নির্বাচন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আবার নির্বাচন দেয়া হবে। সেই কথাটাই বান কি মুন আবারো শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি এই সংলাপের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে দেশের জন্য ততোই মঙ্গল।’

বান কি মুনের আহ্বানে শেখ হাসিনা সাড়া দেবেন বলে শাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘এ সংলাপ বেশি দেরি হয়ে গেলে রাজনীতিতে যে সঙ্কট ও ভয়াবহতা আসবে তার জন্য আওয়ামী লীগকে কঠিন মূল্য দিতে হবে।’

উল্লেখ্য, গত বুধবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ফের সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সংলাপের তাগিদ দিয়ে দুই নেত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ ও বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতার পর মুন আবারও একই তাগিদ দিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এক বার্তায় তিনি এ তাগিদ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরে এ বার্তা পাঠানো হয়।

এতে বান বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে আছে জলবায়ু পরিবর্তন, বাল্য বিয়ে, অবকাঠামো দুর্বলতা অন্যতম।’

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার উপর জোর দিয়ে তিনি বার্তায় বলেন, ‘রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশকেই প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বাংলাদেশও এ প্রক্রিয়ার বাইরে নয়। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য মতবিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি ও সব পক্ষের মধ্যে সমঝোতা তৈরিতে রাজনৈতিক সংলাপের বিকল্প নেই।’

এর আগে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। তিনি সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে সংলাপের ওপর গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি এগিয়ে নেয়াকে উৎসাহিত করেছেন।

গত ২১ জুন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এ মত প্রকাশ করেন।



মন্তব্য চালু নেই