সোনা

আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ

সভ্যতার সূচনাভূমি আর কালো মানুষের দেশ আফ্রিকা। যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ে নানান রহস্যের জন্ম দিয়েছে এই আফ্রিকা। আর এই রহস্য উন্মোচনে আফ্রিকার বুক হাজারো মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়েছে বারংবার। আর এই পদচারনার স্রোতে কখনো অত্যাচারিত হয়েছে আফ্রিকা আবার কখনো আফ্রিকা হারিয়েছে তার সম্পদ। কালো মানুষের রক্তের উপর দিয়ে বিদেশে চলে গেছে আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রকৃতি তার নিজ হাতে পুরো আফ্রিকাকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে সাজিয়েছে। তবে আফ্রিকার জন্য নির্মম হলেও সত্যি যে, প্রাকৃতিক এই সম্পদগুলোই আফ্রিকার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে কালে কালে। আফ্রিকার সবচেয়ে দরিদ্র দেশ মালি। মালির বুক জুরে অনেক সোনার খনি থাকলেও দেশটির মানুষের বুকজুড়ে শুধুই হাহাকার আর অর্থনৈতিক সঙ্কট। মালি আফ্রিকার তৃতীয় সর্বোচ্চ সোনা উৎপাদনকারী দেশ। মালির সোনা ইউরোপের বাজার হয়ে বিশ্বের বিভিন্নে প্রান্তে পৌঁছায়। মালির বেশিরভাগ সোনার খনির মালিক পশ্চিমা করপোরেশন, খনিগুলোতে কর্মপরিবেশ এবং শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ রয়েছে। কোনো খনির উপর মালি সরকারের নিয়ন্ত্রন নেই বললেই চলে।

 

খনি থেকে সোনা উত্তোলনের জন্য যেসব নিয়মকানুন মানতে হয় তার কিছুই মানা হয় না এসব খনিতে। সরকারের পক্ষ থেকে খনিগুলোকে তত্ত্বাবধান না করার কারণে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয় এবং যোগ্য পারিশ্রমিক দেয়া হয় না শ্রমিকদের। খনি শ্রমিক পিতা-মাতার সঙ্গে তাদের সন্তানরাও প্রায়ই কাজে চলে আসে। খনিতে কাজ করতে যে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা দরকার হয়, তা ছাড়াই শিশুরা কাজে লেগে যায়। এমনকি বিষাক্ত পারদ হাতে নিয়েও কাজ করে শিশুরা।

 

 

কঠোর পরিশ্রমের কাজ হওয়া  সত্ত্বেও মালির দক্ষিণ ও পশ্চিম থেকে অনেক মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য খনিতে কাজ করতে আসে। এর বাইরেও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অনেকেই অবৈধভাবে খনিতে কাজ করার জন্য আসে। কারণ সবারই একটি বদ্ধমূল ধারনা, খনিতে কাজ করলেই ধনী হওয়া যায়।

 

 

অনেক পিতা-মাতাই তাদের সন্তানদের খনিতে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য। মাত্র ছয় বছর বয়সী অনেক মেয়েশিশুকেও খনিতে কাজ করতে দেখা যায়। প্রথমে তাদেরকে পিতা-মাতার সাহায্যের কথা বলে আনা হলেও পরবর্তীতে তারা সরাসরি খনির কাজে লেগে যায়। নদী অথবা অল্প পানির গর্তগুলোতে সোনা খোঁজার কাজই মূলত বেশি দেয়া হয় তাদের। খনির বেশিরভাগ শিশুই স্কুলে যায় না। প্রায় সকলেই পিঠের ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভোগে। এছাড়াও ধূলার কারণে ক্রমশ তাদের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি হলো, মাটি থেকে সোনা বের করার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় পারদ ব্যবহার করে মাটি থেকে সোনা আলাদা করা হয়। এই কাজ করতে গিয়ে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয় বিষাক্ত পারদ।

 

 

বিগত কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কমতির দিকে। যে কারণে অনেক বড় বড় সোনার খনিই আপাতত তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে কিংবা উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। মালির জিডিপি’র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আসে এই সোনার খনি থেকে, তবুও দেশটির ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। উল্লেখ্য, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে মালি দরিদ্রতম।

 



মন্তব্য চালু নেই