আপনি কি সব কিছু নিয়ে বেশি ভাবেন? জেনে নিন এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়

দুপুরে কী খাবেন না খাবেন তা নিয়ে একঘন্টা ধরে ভাবার কিছুই নেই। তেমনি কোনো চাকরির প্রস্তাব গ্রহণে সিদ্ধান্ত নিতে এক সপ্তাহ অথবা প্রেমিকাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে এক বছর ব্যয় করারও কিছু নেই।
নিজেকে এবার বলুন যথেষ্ট হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলুন। দেখবেন সব ঠিকঠাক মতোই চলছে।

তাহলে পড়ুন কীকরে আপনার মাথাটা একবার পরিষ্কার করার মাধ্যমেই চিরতরেই পরিষ্কার করে নিবেন।

১. নিজের চিন্তাগুলো একটু দুর থেকে পর্যবেক্ষণ করুন
মেডিটেশনের একটি প্রধান উপাদান, নিজের চিন্তাগুলোকে একটু দুর থেকে পর্যবেক্ষণ করা এবং সেগুলোকে বের হয়ে যেতে দেওয়া; চিন্তার ফাঁদে আটকে পড়া বা সেগুলোকে জেগে ওঠা থেকে বিরত রাখা নয়।

বুঝতে শিখুন যে, আপনি চাইলেই আপনার চিন্তাগুলোর ফাঁদে আটকা না পড়ে বরং সেগুলোকে পর্যবেক্ষণে করতে পারেন। কোনো বিষয়ে অতিভাবনা আমাদের মনের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি; ব্যক্তি-বিশেষে যার মাত্রায়ও হেরফের হয়। কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনি চাইলেই চর্চার মাধ্যমে আপনার চিন্তাগুলোকে পরিবর্তন করতে পারেন।

স্টিভ জবস তার জীবনীকার ওয়াল্টার আইজ্যাকসন এর সঙ্গে একবার বলেছিলেন, “আপনি যদি চুপচাপ বসে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে দেখতে পাবেন আপনার মনটা সত্যিই খুব অশান্ত। এখন আপনি যদি সেটিকে শান্ত করার বেশি বেশি চেষ্টা করেন তাহলে পরিস্থিতি শুধু আরো খারাপই হবে। তবে এমনিতেই একটা সময়ে এসে আপনার মনটা শান্ত হয়ে যাবে। আর মনটা যখন আপনাতেই শান্ত হয়ে আসবে তখন অনেক সুক্ষ্ম বিষয়েই আপনি মনোযোগের সুযোগ পাবেন।”

২. চিন্তাগুলো লিখে ফেলুন
নিজের চিন্তাগুলোকে নিয়ন্ত্রণের একটা ভালো উপায় হলো, যে ইস্যুতে আপনার চিন্তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে তা নিয়ে এমন কারো সঙ্গে কথা বলুন যিনি হয়তো আপনাকে বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে ভাবতে শেখাবে।
অথবা নিজের চিন্তাগুলো এক টুকরো কাগজে লিখে ফেলুন। এতে আপনার চিন্তার প্রক্রিয়াটা আরো সুসংগঠিত হবে। কারণ আপনি যদি আপনার চিন্তাগুলোকে জমিয়ে রাখেন, তাহলে সেগুলো আপনার মাথার ভেতরে চিন্তার পাহাড় গড়ে তুলবে। এমনকি ঘুরেফিরে একই চিন্তা বারবার আপনাকে পীড়িত করবে। আর এভাবেই আপনি কোনো বিষয়ে বারবার অতিবিশ্লেষণের ফাঁদে আটকা পড়বেন।
চিন্তাগুলো কাগজে লেখার পর কাগজটি ছুঁড়েও ফেলে দিতে পারেন। বিজ্ঞান বলে, এতে ওই চিন্তাগুলোকে আপনার কাছে অর্থহীন মনে হবে এবং আপনি ওই চিন্তাগুলোর পীড়ন থেকেও মুক্তি পাবেন।

৩. দিনের কিছুটা সময় পুরোপুরি চিন্তামুক্ত থাকুন
দিনের একটা সময়ের পরে আর কোনো কঠিন বিষয় নিয়ে চিন্তা না করা বা একেবারেই চিন্তামুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিন। যেমন রাত ৮টার পর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এই বলে আর কোনো বিষয়ে চিন্তা না করার সিদ্ধান্ত নিন। এভাবে নিয়মিত করতে পারলে দেখবেন অতিচিন্তার বদঅভ্যাসটি কেটে যাচ্ছে।
অথবা দিনের কোনো একটা সময়ে ২০ মিনিট সময় ধরে পুরোপুরি চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। এই সময়টাতে যে কোনো বিষয় নিয়ে

নিজেকে উদ্বিগ্ন, জাবর কাটা বা উত্তেজিত করার চেষ্টা করুন। এরপর সময় শেষ হয়ে গেলে আরো বেশি উৎপাদনমূলক কিছুতে মনোযোগ নিবদ্ধ করুন। যখনই আপনার মনে হবে যে আপনি কোনো বিষয়ে বেশি সময় ধরে অতিভাবনায় ভুগছেন তখনই নিজেকে মনে করিয়ে দিবেন যে, বিষয়টি নিয়ে আপনি পরে ভাববেন।

৪. একই সময়ে দুটি বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে নিজেকে বিভ্রান্ত করুন
শুনে সহজ মনে হলেও একই সময়ে দুটি বিষয়ে মনোযোগ নিবদ্ধ করাটা আসলে একটু কঠিনই বটে। এক্ষেত্রে যখনই কোনো বিষয়ে আপনার মনে অতিভাবনার সৃষ্টি হবে তখনই শরীরচর্চা বা কোনো খেলায় লিপ্ত হতে পারেন। শরীরে নাড়া-চাড়া পড়লে আবেগেও ভারসাম্য ফিরে আসবে।
কোনো বিষয় নিয়ে অতিভাবনা এড়ানোর প্রধানতম উপায় হলো, শরীর ও মন দুটিরই সম্পৃক্ততার দরকার হয় এমন কোনো তৎপরতায় লিপ্ত হওয়া। যেমন টেনিস খেলা বা কোনো বন্ধুর সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।

৫. এই মুহূর্তে কী করতে পারবেন তার ওপরই ফোকাস করুন
শুধু চিন্তায় বুঁদ হয়ে না থেকে এই মুহূর্তে যা করা সম্ভব তা করার চেষ্টা করুন। কী করা উচিৎ, কী করেননি, কী করা উচিৎ ছিল আপনার চারপাশে কী হচ্ছে এসব নিয়ে বেশি ভাবাভাবি না করে বরং আপনি ঠিক এই মুহূর্তে কী করতে পারবেন তার ওপরই ফোকাস করুন; এবং যতো ছোটই হোক না কেন তা করে ফেলুন।
যখনই ভবিষ্যত নিয়ে আপনার মনে কোনো উদ্বেগ তৈরি হবে তখনই শরীরটা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ুন এবং কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন।

৬. নিজের মতামতকে সম্মান করুন
কোনো বিষয়ে আপনার অতিভাবনার কারণ হতে পারে- সেই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে হয়তো আপনার নিজের ওপর ভরসা নেই।
সূতরাং নিজের মতামতকে সম্মান করতে শিখুন। আপনি যদি কোনো বিষয়ে অতি বেশি ভাবাভাবি করেন তাহলে আপনি শুধু নিজের ভাবনার ব্যাপারে আরো বেশি সন্দেহই সৃষ্টি করে যাবেন।

৭. ভুল সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে নিজেকে সক্ষম ভাবুন
কোনো চাকরি বা কাউকে বিয়ে করতে গিয়ে অথবা বিকল্প পথে বাড়ি ফিরতে গিয়ে ভুল করছেন বলে আপনার মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি হতেই পারে। কিন্তু মনে রাখবেন কোনো ভুল যেন আপনার জীবনে বিপর্যয় হয়ে নেমে না আসে। এমনকি কোনো ভুলই হয়তো আপনার জীবনে বড় কোনো সুযোগ এনে দিতে পারে।

সূতরাং কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলেই নিজেকে বোকা ভাবার কোনে কারণ নেই। তার চেয়ে বরং কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা স্বীকার করে নিন এবং দুনিয়াটাকে নতুনভাবে দেখতে শিখুন, দৃষ্টিভঙ্গি বদলান। তাহলেই দেখবেন আপনার সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বেড়ে যাচ্ছে।

আসলে আমাদের মাঝে কোনো বিষয়ে অতিভাবনার সৃষ্টি হয় এই ধারণা থেকে যে, আমরা হয়তো কোনো বিষয়ে একেবারেই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে সক্ষম যা কখনোই পরিবর্তিত হবে না এবং একশো ভাগ সঠিক। কিন্তু ভুল করে অস্বস্তিতে না ভুগে বরং সবসময়ই এটা মনে রাখবেন যে, কোনো পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মতামত ও জ্ঞান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতেই পারে। এতে আপনি মনের ভেতর সত্যিকার অর্থেই স্বাধীনতা ও শান্তি অনুভব করবেন।



মন্তব্য চালু নেই