আপনি কি সঙ্গী বা সঙ্গীনিকে আবেগগতভাবে প্রতারণা করছেন?

রুহি ভাট প্রতিদিন অফিসে ৯ থেকে ১০ ঘন্টা সময় ব্যয় করেন। এবং একই প্রকল্পে কর্মরত আকাশ শেনয় নামের এক সহকর্মীর সঙ্গে শক্ত বন্ধন গড়ে তুলেছেন। যা শুরু হয়েছিল বন্ধুত্বপূর্ণ খুনসুটির মধ্য দিয়ে তাই পরে তীব্র আবেগের বন্ধন হয়ে ওঠে। প্রতিনিয়ত টেক্সট ম্যাসেজ চালাচালি হতে থাকে, প্রায়ই কফি ডেটিং হতে থাকে এবং রুহি তার অনুপস্থিতিতেও তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে। শুনে মনে হচ্ছে যথাযথ অফিস রোমান্স, তাই না? কিন্তু না। রুহি ছিল বিবাহিত। এবং আকাশের সঙ্গে গোপন সব ডেটিং শেষে তিনি বাড়ি ফিরে যেতেন এবং তার স্বামীও তাকে কোনো সন্দেহ করতেন না। গুরগাঁও এর আর্টেমিসের সম্পর্ক এবং জীবন-যাপন বিষয়ক প্রশিক্ষক চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী রচনা কে সিংহ বলেন, “এভাবেই আবেগগত অবিশ্বস্ততার সূত্রপাত ঘটে। এটা কখনোই পূর্বপরিকল্পিত থাকে না। কিন্তু এটি একটি পিচ্ছিল ঢাল। একবার এ পথে পা বাড়ালে আর ফিরে আসা সম্ভব নয়।

হৃদয়ের সম্পর্ক
শেরি মেয়ার্স, বিয়ে চিকিৎসক এবং চ্যাটিং অর চিটিং: হাউ টু ডিটেক্ট ইনফিডেলিটি, রিবিল্ড লাভ অ্যান্ড অ্যাফেয়ার- প্রুফ ইওর রিলেশনশীপ এর লেখক বলেছেন, “প্লেটোনিক বন্ধুত্ব নয় বরং আপনাদের মধ্যে রয়েছে যৌন রসায়ন এবং আপনার মাথায়ও কিছু কল্পনা খেলা করছে। আপনি যদি শেষরাতে “মিসিং ইউ” টেক্সট পাঠান তাহলে বুঝতে হবে আপনি আবেগের বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছেন।” আপনি হয়তো এমনকি এই নতুন ব্যক্তির সঙ্গে আপনার দাম্পত্য সম্পর্কের খুটিনাটি সব বিস্তারিত ভাগাভাগি করেন কিন্তু আপনার সঙ্গীকে তার সম্পর্কে কিছুই বলেন না। সিং বলেন, “আপনি আপনার সঙ্গীর কাছ থেকে যা কিছুই লুকানোর অপরাধ করেন না কেন তা-ই অবিশ্বস্ততা।”

অস্পষ্ট সীমারেখা
সাধারণত রুপান্তর ঘটে এমন ধীরে যে আপনি লক্ষণগুলো ধরতে পারেন না। তবে তখনই সমস্যার শুরু হয় যখন আপনার জীবনের সব মনোযোগ নতুন ওই ব্যক্তির ওপর কেন্দ্রীভুত হয়। যার ফলে আপনার প্রথম সম্পর্কে তিক্ততা শুরু হয়।

এমনটা কেন ঘটে
মেয়ার্স বলেন, “দাম্পত্য সম্পর্কের বাইরেও কোনো ধরনের প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক থাকার মানে হলো আপনার জীবন এবং সম্পর্কে অন্তর্নিহিত কোনো সমস্যা আছে।” আবেগগত বিশ্বাসঘাতকতা অনেক সময় আপনার দাম্পত্য সম্পর্কের একঘেয়েমিতার কারণেও ঘটতে পারে। অথবা আপনি হয়তো আপনার জীবন সঙ্গী বা সঙ্গীনির কাছ থেকে যতটা মনোযোগ পাচ্ছেন তার তুলনায় এই ব্যক্তির কাছ থেকে বেশি মনোযোগ পাচ্ছেন। যাইহোক, তার মানে এই নয় যে, আপনি আপনার প্রধান সম্পর্কটাই শেষ করতে চাইছেন।

ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কে থাকা অবস্থায়ও বিপরীত লিঙ্গের কারো সঙ্গে নতুন বন্ধুত্ব করাটা কোনো অপরাধ নয়। তবে, নতুন সম্পর্কের চারদিকে একটা সীমা টেনে দিতে হবে এবং আপনার জীবন সঙ্গী বা সঙ্গীনির সাথে বিষয়টি নিয়ে স্বচ্ছ থাকতে হবে। আর সঙ্গী বা সঙ্গীনির সাথে নতুন বন্ধুত্বের বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলাটাও গুরুত্বপূর্ণ। মেয়ার্স বলেন, “আর এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকবেন আপনি আগে ঘরে যে রকম ঘনিষ্ঠতার চর্চা করতেন তাতেও যেন ভাটা না পড়ে।”

আপনি আবেগগত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন যদি…
আপনি এই নতুন ব্যক্তির সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ তথ্য শেয়ার করেন। প্রকৃতপক্ষে, আপনি এমনকি তার সঙ্গে এমন সব জিনিস শেয়ার করছেন যা হয়তো আপনি আপনার সঙ্গী বা সঙ্গীনির সাথেও আলোচনা করবেন না।

আপনি তাদের সঙ্গে আরো বেশি সময় ব্যয় করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

আপনি কখনোই আপনার সঙ্গী বা সঙ্গীনিকে এই ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন না। এই বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠভাবে সংরক্ষিত গোপনীয় বিষয়। আপনি এমনকি এটিকে তেমনই রাখতে আপনার পথ থেকে বেরিয়ে যান।

আপনি আপনার সঙ্গী বা সঙ্গীনির ওপর যতটা না ভরসা করনে তারচেয়ে বেশি ভরসা করেন এই ব্যক্তির ওপর।

লাল পতাকাগুলো
আপনার সঙ্গী বা সঙ্গীনি আপনার সঙ্গে আবেগগত প্রতারণা করছে কিনা বুঝবেন যে লক্ষণগুলো দেখে
তিনি আপনার সঙ্গে আগের চেয়ে কম সময় ব্যয় করছেন এবং আপনারা একসঙ্গে থাকা অবস্থায়ও তাকে অনুপস্থিত বা অন্যমনস্ক মনে হয়।
আপনারা দুজনে প্রচুর ঝগড়াঝাটি করেন- আগের চেয়েও বেশি। আর এর শুরু হয় আপনি একটি ইস্যু তোলার মধ্য দিয়ে আর তিনি নিজেকে খোলের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়ার মাধ্যমে।

তিনি সারাক্ষণ তার ফোন বা ল্যাপটপে আঠারে মতো লেগে থাকেন।

তিনি হঠাৎ করেই আরো বেশি সময় একাকি কাটাতে চান এবং নিজের ফোন সম্পর্কে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রতিরক্ষা প্রবণ।

অনেক সময়, যদিও সব সময় না, হঠাৎ করেই যৌনতায় আগ্রহ একটি লক্ষণ যে কিছু একটা ঘটেছে। এর মানে হতে পারে তিনি নতুন সম্পর্কে যা পাচ্ছেন না তা খুঁজছেন অথবা তিনি নিজের অপরাধ খোঁজার অভিনয় করছেন।

আবেগগত বিশ্বাসঘাতকতা ঘটতে পারে সম্পর্কের একঘেঁয়েমিতার কারণে। অথবা আপনি নতুন যে মনোযোগ পাচ্ছেন তা আপনার ভালো লাগছে।

সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া



মন্তব্য চালু নেই