আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকা দেখে রাজপথে নামবে জামায়াত

সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকা দেখে তবেই সর্বাত্মকভাবে রাজপথে নামবে জামায়াত। বিএনপি রাজপথে আন্দোলন গড়তে ব্যর্থ হলে সহিংসতার দায় এড়ানো এবং নিরাপদে থাকতে এককভাবে রাজপথে নামতে চায় না দলটি। এ সময়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলের শীর্ষ নেতাদের সাজা হলেও সীমিত আকারে কর্মসূচি দেবে জামায়াত।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার সাম্প্রতিক বক্তৃতায় জানিয়েছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পর কর্মসূচি দেওয়া হবে। ৫ জানুয়ারির পর রাজপথ শান্ত থাকলেও খালেদা জিয়ার এই আহ্বানে ইঙ্গিত মিলেছে, ঈদের পর ফের উত্তপ্ত হতে পারে রাজপথ। জামায়াতসহ অন্য শরিক দলগুলোকেও কর্মসূচিতে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

জামায়াতও এরই মধ্যে জানিয়েছে, আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ থাকবে। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোটের আসন্ন কর্মসূচিতে মিছিল-সমাবেশে থাকবে জামায়াত। তবে এককভাবে সংঘাতে জড়ানোর ঝুঁকি আর নেবে না। গত নির্বাচনের আগে জামায়াতের তৃণমূলের জনশক্তি সরকার পতনের চেষ্টায় সহিংস আন্দোলনে নেমে ব্যাপক ধরপাকড় ও প্রাণহানির মুখে পড়ে। এ সিদ্ধান্তের জন্য দলটির অভ্যন্তরেই সমালোচনা রয়েছে। এবারও একই পরিস্থিতিতে পড়তে চায় না জামায়াত।

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের টানা অবরোধে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল জামায়াতের। পাঁচ শতাধিক যানবাহনে আগুন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৪ সদস্যকে হত্যার অভিযোগ দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রয়েছে। দেশের অন্তত ১৬ জেলার সঙ্গে গত বছরের বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল জামায়াতের কর্মীরা। সহিংসতার জন্য দলটি দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শও দেয়। বিএনপি এ পরামর্শ মেনে জামায়াতকে প্রায় দুই মাস এড়িয়ে চলে। এ আচরণে ক্ষুব্ধ জামায়াত, তাই আর এর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চায় না তারা।

যুদ্ধাপরাধের বিচার, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল, শীর্ষ নেতারা দীর্ঘদিন কারাগারে আটক থাকা, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাপক কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে জামায়াত। তাই দলটি এখনই সরকার পতনে টানা হরতাল কিংবা অবরোধের মতো সর্বাত্মক আন্দোলনের পক্ষে নয়।

এবার রমজানের ইফতার পার্টি উপলক্ষে জামায়াতের মধ্যম সারির নেতারা দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে আসেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামায়াত মনে করে, সরকারের পতন ঘটানোর মতো পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ এখনও অক্ষুণ্ন রয়েছে। কূটনৈতিক যোগাযোগে এখনও বিএনপি পিছিয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে ফের রাজপথে নামলে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

জামায়াতের এক কর্মপরিষদ সদস্য বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েই আছে। তবে আন্দোলনের জন্য আরও প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন করেই সর্বাত্মক আন্দোলনে যাওয়া উচিত। নয়তো ফের প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। জামায়াতের প্রচার বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি মতিউর রহমান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে সময়ের দাবি অনুযায়ী সবকিছু হবে। সরকার বেহায়ার মতো ক্ষমতায় থাকতে চাইলেও পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাদের কোনো চেষ্টাই কাজে আসবে না।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ঈদের পর বিএনপি জোটবদ্ধভাবে কর্মসূচির ডাক দিলেও গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর- এই তিন মাসে জামায়াতের নেতাকর্মীরা রাজপথে যতটা তৎপর ছিল, এবার তেমনটি হবে না। কৌশলগত কারণেই এমন সিদ্ধান্ত। দলীয় হিসাবে ২০১৩ সালে আন্দোলন করতে গিয়ে জামায়াতের ২৩২ নেতাকর্মী নিহত হন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি_ এ দুই মাসেই নিহত হন ৪৩ জন। সহিংসতার অভিযোগে দলটির পাঁচ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

ঈদের পর শুরু থেকেই সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামলে ফের ধরপাকড়ের আশঙ্কা করছেন জামায়াত নেতারা। তবে আন্দোলনে অনাগ্রহের বিষয়টি কোনো নেতাই প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি।

জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘বিএনপি নিশ্চয়ই কর্মসূচি স্থির করতে শরিকদের ডাকবে। আমাদের মতামতও থাকবে।’ জোটের যে কোনো কর্মসূচিতে জামায়াতের অংশগ্রহণ থাকবে বলে জানান এই নেতা।

দলটির ঢাকা মহানগরের এক কর্মপরিষদ সদস্য বলেন, জামায়াত তার ভূমিকা ঠিকভাবে পালন করলেও বিএনপি ব্যর্থ ছিল। এর পুনরাবৃত্তি হবে না, তা নিশ্চিত করেই কর্মসূচি দেওয়া উচিত। কর্মসূচি এলে জামায়াত তার ভূমিকা সঠিকভাবেই পালন করবে।



মন্তব্য চালু নেই